এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী কমেছে ৩৫ হাজার

এইচএসসি ও সমমানের (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী রবিবার (২ এপ্রিল)। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৩৪ হাজার ৯৪২ জন। এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৬ জন পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবে। গত বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ জন।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ তথ্য জানান। মোট অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার ছাত্র ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৭ জন ও ছাত্রী ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৯৮৯ জন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এবার মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে ৯ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৩ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে ৯৯ হাজার ৩২০ জন, কারিগরি বোর্ডের অধীনে ৯৬ হাজার ৯১৪ জন ও ডিআইবিএসে (ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ) ৪ হাজার ৬৬৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।’

তত্ত্বীয় (লিখিত) পরীক্ষা শেষ হবে ১৫ মে শেষ হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৬ মে শুরু হয়ে শেষ হবে ২৫ মে। এবার ৮ হাজার ৮৬৪টি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা ২ হাজার ৪৯৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। বিদেশে সাতটি কেন্দ্রে ২৭১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।’

এ বছর পরীক্ষার্থী কমার কারণ জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, দুটি কারণে মূলত শিক্ষার্থী কমেছে। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর কারণে এবার এইচএসসির পরীক্ষার্থী কমেছে। ২০১৪ সালের এসএসসিতে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৩৩১ জন পাস করে। আর ২০১৫ সালে পাস করেছিল ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন।’

বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০১৪ সালের থেকে ২০১৫ সালে এসএসসিতে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী কমে ২০ হাজার ৭১৩ জন। ফলে ওইবার ২০ হাজার ৭১৩ জন কম শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হয়।’ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এছাড়া ২০১৫ সালে যশোর বোর্ডে ইংরেজিতে ফল বিপর্যয় হলে এই বোর্ডে সার্বিক পাসের হার ৪৬ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৬ সালে পাসের হার দাঁড়ায় ৮৬ শতাংশ। ফলে যশোর বোর্ডে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৭৮২ জন কমে যায়।’

এ বছর মোট ২৬টি বিষয়ের ৫০টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘২০১২ সালে শুধু বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৫ সালে ১৩টি বিষয়ের ২৫টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর ১৯টি বিষয়ের ৩৬টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে হবে। প্রথমে বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) পরে রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা হবে। উভয় পরীক্ষার মধ্যে সময়ের ব্যবধান থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘এবারও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পলসি জনিত প্রতিবন্ধী ও যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ ধরণের পরীক্ষার্থী ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে।’

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিস্টিক ও ডাউন সিনড্রোম বা সেরিব্রাল পলসি আক্রান্ত) পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় ও পরীক্ষার কক্ষে অভিভাবক বা শিক্ষক বা সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’

নিবন্ধন করেও পরীক্ষা দিচ্ছে না ২ লাখ ৪৪ হাজার

উচ্চ মাধ্যমিকে নিবন্ধন করে এবার পরীক্ষা দিচ্ছে না ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন। সংবাদ সম্মেলনে সরবরাহ করা তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩২ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করলেও এদের মধ্য থেকে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিচ্ছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ১৪৫ জন।

এবার অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৪ জন। এর বাইরে এবার ৩ হাজার ২৬২ জন প্রাইভেট এবং ৬ হাজার ২৫ জন মানউন্নয়ন পরীক্ষার্থী রয়েছে।

নিবন্ধন করেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সবাই পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারে না। নিবন্ধন করে টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়, টেস্টেও অনেকে বাদ পড়ে। কিছু শিক্ষার্থী চাকরি বা পড়াশোনার জন্য বিদেশে যায়। নানা কারণে ড্রপ আউট হয়, কেউ যাতে ঝরে না পড়ে সে বিষয়ে আমরা জোর দেব।’

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘পরীক্ষাকেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। ছবি তোলা যায় এমন ফোন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও সঙ্গে রাখতে পারবেন না। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের কেন্দ্রে প্রবেশ নিষেধ।’

পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন ফাঁসের পেছনে না ছুটার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অভিভাবকদের কাছে আবেদন এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেন নজর না দেয়। শিক্ষকতা সব চেয়ে মহত কাজ, তাদের সম্মান-মর্যাদা পেতে হলে সে রকম করে চলতে হবে। শিক্ষকরাও প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন। কিন্তু তারাই আমাদের শেষ ভরসা। তাদের ক্ষমা করার সুযোগ নেই। একজন শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, আরেকজনকে বরখাস্তের আদেশ যাচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।