শক্তিশালী পোল্ট্রি বোর্ড দরকার

মশিউর রহমান
আসলে মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি সেক্টরকে একসঙ্গে লাইভস্টক বলে। আমরা প্যারাগন গ্রুপ মূলত ফিসারি ও পোল্ট্রি ব্যবসায় জড়িত। ডেইরির সঙ্গে থাকলেও আমি পোল্ট্রি বিষয়ে বেশি আগ্রহী আর এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো। আসলে পোল্ট্রি সেক্টর ডেভেলপ শুরু হয়েছে ৯০ এর দশকে। তখন থেকেই অন্য সেক্টরের সঙ্গে আমরা, আস্তে আস্তে এই সেক্টরে আগ্রহ প্রকাশ করি। পাশাপাশি লাইভস্টক নিয়েও কাজ শুরু করি। শুরুর দিকে পোল্ট্রি সেক্টর ছোট আকারের থাকলেও চাহিদার প্রয়োজনে এখন এই সেক্টর অনেক বড় হয়েছে। শিল্পটি এখন পোল্ট্রি সায়েন্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। পোল্ট্রি সেক্টর ডেভেলপের জন্য বর্তমানে রীতিমত সায়েন্স দরকার। কারণ এর উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন গবেষণা করতে হয়। রোগ বালাইসহ নানা ধরনের সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রতিনিয়ত রিসার্চের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কখন কোন রোগ ব্যাধি সৃষ্টি হবে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা নির্ণয় করতে হয়। ব্যাপারগুলো এখন পুরোটাই সায়েন্টিফিক। এভাবে আমরা এই সেক্টরটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। মূলত ভোক্তাদের চাহিদার জন্যই পোল্ট্রি সেক্টর এতোটা এগিয়েছে। ডিমান্ড এন্ড সাপ্লাই ফ্যাক্টর এখানে ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। আজ থেকে ৩-৪ বছর আগেও মুরগের মাংস ছিল ২৫০ টাকা কেজি, প্রতিটি ডিমের মূল্য ছিল ১২ টাকা। এখন সে তুলনায় দাম অনেক কমে গেছে। আপনি বাজারে একটা ডিম ৭ টাকা থেকে ৮ টাকার মধ্যেই কিনতে পারছেন। কোনো কোনো সময় আরো কমেও কেনা যায়। আমাদের প্রোডাকশন অনেক বেড়ে গেছে। সে তুলনায় প্রোডাক্টের দামও অনেক কমেছে । অনেক সময় আবার অতি উৎপাদনের কারণে প্রোডাক্টের দাম অস্বাভাবিক কমে যায়।

এতে করে অনেক খামারি লোকসানে পড়ে ঝরে পড়ে। তবে এখান থেকেও ক্ষুদ্র খামারিরা কখনো কখনো রিকভারি করতে পারে। কিন্ত রোগের কারণে ডিজাস্টার হলে, সেই খামারি আর সহজে উঠে দাঁড়াতে পারে না। সে নিঃস্ব হয়ে যায়, এমনকি ভিটাবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়। এমন পরিস্থিতি ঠেকাতে রোগের বিস্তার রোধ, রোগ প্রতিকার, বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে, নতুন নতুন সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা দরকার । বর্তমানে আমাদের এই সেক্টর প্রায় ৮০ ভাগের মতো উন্নত হয়েছে। ৮০ পার্সেন্ট গ্রোথ একটা বিশাল ব্যাপার। মধ্যের দু-একটি বছর ছাড়া এই সেক্টর উন্নতি করেছে, এগিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের পলিসি লেভেলও স্ট্রং হওয়া দরকার। মিনিস্ট্রি লেভেলে যারা আছেন, তারা টেকনিক্যাল মানুষ নন। আবার টেকনিক্যাল পার্সনরা তাদের বিভিন্নভাবে সাপোর্ট দেন। তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। অনেক সময় দক্ষ নেতৃত্বের অভাব দেখা গিয়েছে। যদি প্রপার লিডিংটা না দেয়া হয়, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব দেখা যায়, তাহলেও এ সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেজন্য বলবো, সেক্টর ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে কিন্তু পলিসি লেভেলের ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে না। কাজেই সেক্টর ডেভেলপমেন্ট যদি ধরে রাখতে চাই, তাহলে পলিসি লেভেলেও সাসটেইনিবিলিটি থাকতে হবে। যুগোপযোগি সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হবে।

আমি একটু আগেই বলেছি, ৭ থেকে ৮ টাকায় একেকটা ডিম শতকরা ১০ ভাগের মতো মানুষ খেতে পারে। এখন কিন্ত এর সংখ্যা ৫৫, পার পাসন পার ইয়ার । আমাদের চিন্তা হচ্ছে, এই বৃদ্ধির হারটা ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগে নিয়ে যাওয়া। এই গ্রোথ হবে ১৮ থেকে ২০ পার ইয়ার। প্রবৃদ্ধির এই হার অব্যাহত থাকলে, আমাদের মাথা পিছু ডিম গ্রহণের হার হবে ১৫০টা। আমাদের জন্য যথেষ্ট। জাপান ও ইজরাইলে প্রতি বছর একেক জন প্রায় ৬০০ ডিম খায়। আর মাংসের কথা বললে বলবো যে, কিছুদিন আগেও প্রতি বছরে, একেকজন এক থেকে দেড় কেজি মাংস খেতাম। কিন্ত বর্তমানে তার হার গিয়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার কেজিতে। এখন আমাদের টার্গেট হলো, আট কেজিতে নিয়ে যাওয়া। ভোক্তারা তাদের খাবারের ম্যানুতে মাংস আনছে বলেই এটা সম্ভব হবে। আমাদের জীবনমান বদলাচ্ছে, সঙ্গে খাবারের ম্যানু পরিবর্তন হচ্ছে, পাশাপাশি ইকোনোমিরও পরিবর্তন হচ্ছে। যার কারণে সবাই তার ম্যানুতে ডিম ও মুরগির মাংস যোগ করছে। এ হারে যদি বাড়তে থাকে তাহলে আগামী দুই-তিন বছর পরে, ২০২১ সালে, মাংস গ্রহণের হার ৮ কেজি প্লাস ও ডিম ১০০ প্লাস হবে। তার মানে এই সেক্টরে এখন যখন, আমাদের বিনিয়োগ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আগামীতে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ।
আমরা অনেকের কাছে শুনেছি, ব্রয়লার মাংসে এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর । এ ব্যাপারে আপনার কিছু বলার আছে?

কী বলব, এরকম ভ্রান্ত ধারণা সব ভালো জিনিসের মধ্যেও থাকে, আবার খারাপ জিনিসের মধ্যেও থাকে। সুতরাং মানুষের নেগেটিভ অ্যাটিচ্যুড তো থাকবেই। যদি এতোটাই নেগেটিভ হতো তাহলে মাংস খাওয়ার হার কিন্ত দেড় কেজি থেকে সাড়ে চার কেজিতে আসতে পারতো না। আমি নিজে এক সময় ব্রয়লার খেতাম না, কিন্ত যখন বুঝতে পারলাম, তারপর থেকে ব্রয়লার মাংস খাই। আমার বাচ্চারা তো ব্রয়লার মাংস ছাড়া বুঝেই না। তারা দেশি মুরগির শক্ত হাড় ও মাংস খেতে চায় না। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আমাদের ইয়াং ও টিন এজাররাই মাংস ও ডিমের মূল ভোক্তা। আবার পরিসংখ্যান বলছে, বিশে^র অন্যান্য দেশের যুব সমাজের চাইতে আমাদের যুবসমাজের সংখ্যা অনেক বেশি। তারাই মূলত আমাদের উন্নয়ন আর আগিয়ে যাবার প্রেরণা। তাদের মাধ্যমে আমাদের অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। তাদের মাধ্যমে এখনো এই লাইভস্টক খাতটাও এগিয়ে যাচ্ছে।

একসময় এই সেক্টরের ভ্যাকসিনসহ যাবতীয় ওষুধের জন্য গোটা কয়েক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি কাজ করতো। তারা আমদানি করা ওষুধ ও পণ্য রি-প্যাকিং করে বাজারজাত করতো। কিন্ত এখন দশ থেকে বারোটা কোম্পানি তাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে, লাইভস্টকের জন্য অর্ধেকেরও বেশি ওষুধ উৎপাদন করছে। তারা দিন দিন আরো এগিয়ে যাচ্ছে। এখন বড় বড় সব ওষুধ কোম্পানির আলাদা করে এনিমেল উইংস আছে। যেমন স্কয়ার, এসিআই, ইনসেপ্টা, এসকেএফের কথা বলা যায় । আগে তাদের অনেকেই বাইরে থেকে আমদানি করে প্যাকেজিং করতো। এখন নিজেরাই এনিমেল হেলথের ওষুধ দেশেই উৎপাদন করছে।
চার পাঁচ বছর আগেও বার্ড ফ্লুর ভ্যাকসিনের জন্য আমাদের অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে । এখন সে সমস্যা নেই বললেই চলে। এর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ইতিমধ্যেই এর কার্যক্রম শুরু করেছি। এখন কিন্ত বার্ড ফ্লুর পরিমাণ অনেক কম। তবে সময়ের সঙ্গে রোগের পরিবর্তন হয়। এর জন্য পলিসি লেভেলে পরিবর্তন আসতে হবে। নতুন রোগ আইডেন্টিফাই করে এর জন্য নতুন ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে। না পারলে ভ্যাকসিন ইমপোর্ট করতে হবে। এমন উদ্যোগের অভাবের কারণে আমরা সামনে আবার কোন বিপদের মধ্যে পরবো, আমরা নিজেরাই জানি না। আমাদের সব সমসয় প্রস্তত থাকা দরকার। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাবার জন্য। কিন্ত এখনো আমরা তা করতে পারছি না। প্রতিনিয়ত নতুন সব রোগ, নতুন সব সমস্যার সমাধানে আগে থেকেই তৈরি থাকতে হবে। আমাদের এখনকার চ্যালেঞ্জ সামনে কী রোগ আসবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা, গবেষণা করা, প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। এজন্যই বলছি, আমাদের সার্বিক পলিসি লেভেলের কাজ যুগোপোযুগি ও ত্বরিত গতিতে হতে হবে।

নতুন উদ্যোক্তা, বেকার যুব সমাজ, যারা এই সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী, তাদের জন্য আপনার দিক নির্দেশনা কী হবে?
যুব উন্নয়নের কার্যক্রম একসময় বেগবান ছিল, সেটাকে আমরাও এপ্রিসিয়েট করেছি। কিন্ত বর্তমানে তাদের কার্যক্রম দেখা যায় না। আমরা চেয়েছি,তাদের কার্যক্রম আমাদের মাধ্যমে পরিচালিত করতে, কিন্ত সরকার সেটা দিতে চায় না। আমরা চাই, যুব উন্নয়নের কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক। আর টাকার ব্যাপার বললে বলবো, যুব উন্নয়ন থেকে ট্রেনিং নিলেই, ব্যাংক টাকা দেয় বলে আমার জানা নেই। এর জন্য লিঙ্কের দরকার হয়। বাস্তবতা আসলে অন্যরকম, ব্যাংক তো আর মুখ দেখে টাকা দেবে না। সেরকম ব্যাকআপ থাকলেই কেবল সেটা সম্ভব। গ্রামের শিক্ষিত যুবকেরাই কিন্ত লাইভস্টকের রেভ্যুলেশন নিয়ে এসেছে। তারাই কিন্ত ব্রাক ও অন্যান্যদের সঙ্গে মিলে দেশকে পোল্ট্রিতে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। তাদের অনেকেই এখন অনেক বড় বড় ফার্মের মালিক। কাজেই যুব উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালিত হলে, গ্রামের সেইসব শিক্ষিত বেকার যুবকেরা, তাদের পেশা তৈরিতে এগিয়ে আসতে পারে। এখন যুব উন্নয়ন দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবার পর এর ধারাবাহিকতা আর এগুচ্ছে না। এ সেক্টরে আমাদের সমৃদ্ধির জন্য ওই কার্যক্রম চালু থাকার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

অর্থনীতিতে একটা কথা আছে, সেটা হলো চাহিদা। আসলে চাহিদার কোনও শেষ নাই। কাজেই কতটুকু খামারের জন্য কতটুকু টাকার প্রয়োজন, সেটা আসলে বলা মুশকিল। কেউ ৫০০ মুরগির ফার্ম করেই খুশি, পরিমাণে এর বেশি বাড়াতে চায় না। আবার কেউ ১৫ লক্ষ ডিম উৎপাদন করে এমন ফার্ম করেও হ্যাপি না। যে ১৫ লক্ষ উৎপাদন করবে, সে আগামীতে ৫০ লক্ষ উৎপাদন করার লক্ষ্যে আবার বিনিয়োগ করবে। কাজেই চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের সম্পর্ক সবচেয়ে বড়। যারা নতুন উদ্যোক্তা, তাদের হাজার দুই মুরগি দিয়ে শুরু করাই ভালো। আগে একসময় ভাবতে হতো, একটা ফার্ম করতে হলে, কোথায় বাচ্চা পাওয়া যাবে, কোথায় ঘর করবো। এখন আর এর প্রয়োজন হয় না। এখন আমাকে জানতে হবে, কোথায় ওয়েস্টেজ হচ্ছে। এর সমাধান করা, ওয়েস্টেজ কমিয়ে আনা। আমার খামারের বর্জ্য থেকে যাতে আমার মুরগির অসুখ না হয়। আমি যাতে ভুল এন্টিবায়োটিক না দিই। আমি যাতে নিজের হাতে, আমার মুরগিগুলো মেরে না ফেলি। আমাদের অনেক খামারি না জেনে, না বুঝে ভুল করে ফেলছে। কাজেই ফার্ম ও ফার্মার টিকাতে হলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে ছোট আকারে শুরু করি, কিন্ত যাতে করে ভালো করে করতে পারি। ছোট একটা ফার্ম করতে গেলেও, আপনাকে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে। যেখানে আজ থেকে বিশ বছর আগেও, মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচে, ফার্ম করা সম্ভব হয়েছে। এখন আর ১০০ বা ২০০ টার মুরগির খামারকে ছোট ফার্ম বলে না। এখন ১০০০ থেকে ২০০০ মুরগির ফার্মকে বলা হয় ছোট খামার। এভাবে একটা খামার দাঁড় করাতে হলে, একজন খামারিকে অবশ্যই পড়াশুনার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তারপর খামার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

একজন নতুন খামারিকে এলাকার প্রাতিষ্ঠিত কোনো খামার থেকে অভিজ্ঞতা নিতে হবে। আমরা প্রতি মাসে, কোন না কোন জায়গায়, খামার ব্যবস্থাপনার উপর কর্মশালা করে থাকি, খোঁজ খবর নিয়ে সেখানে এসেও জানতে পারবে। প্রতিটা বড় বড় মেডিসিন, হ্যাচারি কোম্পানি বিভিন্নস্থানে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে। সেখানে খোঁজ নিয়েও নতুন খামারিরা শিক্ষা নিতে পারে।
দেশে তো অন্যান্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তো সেসব ছাপিয়ে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের মূল বৈশিষ্ট আসলে কী?

আমরা এই সেক্টরে পাইওনিয়ার হয়ে থাকতে চাই। বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে প্যারাগন আধুনিকতা এনেছে। সেভাবেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমরাই দেশে প্রথম এনভায়রনমেন্টাল কন্ট্রোল হাউজ চালু করি। তার ২, ৩ বছরের মধ্যে তিনটা ফ্লোর কমপ্লিট করার পর ছোট বড় সব ব্যাবসায়ীদের ডেকে এনে আমরা বুঝাই। আমাদের জায়গার স্বল্পতা রয়েছে, এর জন্য কিভাবে এধরনের হাউজ তৈরি করে,স্বল্প জায়গায় বেশি পোল্ট্রি পালন করা যায়, এটা আমরাও শিখেছি, অন্যদের শিখিয়েছি। এভাবে সারা দেশে এই পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। এখন এই পদ্ধতি ফলো করে সারা দেশের খামারিরা পরিবেশবান্ধব পোল্ট্রি উৎপাদনের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা কেবল পোল্ট্রি নিয়েই বসে নেই, আমরা ফিসারি করছি, ডেইরি নিয়ে কাজ করছি।

এখন আমরা গ্রীন এনার্জি নিয়ে কাজ করছি। সোলার এনার্জির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পাওয়ার প্ল্যান্ট করছি। এবছরই সরকারকে ১০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষম প্ল্যান্ট উপহার দিব। এর জন্য কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

হর্টিকালচার নিয়েও আমরা কাজ করছি। এ খাতে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম আমরা গ্রীনহাউজের ফুল প্রোডাকশন করলাম। জারবেরা ফ্লাওয়ার, এই ফুলটা কয়েকমাস আগেও চায়না থেকে নিয়ে আসতে হতো। এইমানের ফুল দেশে উৎপাদন হতো না। যশোরের কয়েক জায়গায় চাষ হলেও এর মান ভালো ছিল না। একমাত্র আমরাই সফলভাবে এটা করতে সচেষ্ট হয়েছি। প্যারাগনের প্রথম যে কাজ সেটা হলো পোল্ট্রির বীজ নিয়ে। উন্নতমানের বীজের উৎপাদনের লক্ষে আমরাই প্রথম কাজ করি। অন্য সবাই যেখানে বায়োগ্যাস স্থাপন করে, আমরা তা না করে পাওয়ার প্ল্যান্ট করেছি। যা আমাদের প্রত্যেকটা প্রজেক্টের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করছে। এর ৬০ ভাগ বিদ্যুৎ আমরা আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে নিচ্ছি, বাকি ৪০ ভাগ নিচ্ছি জেনারেটর থেকে। কাজেই পোল্ট্রির ওয়েস্টেজ ডেস্ট্রয় না করে কাজে লাগানোর যে প্রচেষ্টা, তা দিয়েই আমাদের সফল কাজ হলো। আমরা পাওয়ার জেনারেট ও সাúøাই করলাম। আমরা প্রায় ১২ বছর আগে এই পাওয়ার প্যøান্ট করেছি। এর আগে বা পরে এখনও এরকম পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করার জন্য কেউ সাহস করে নি। ফলে আমরা বেশ উপকার পাচ্ছি, এতে খরচ অনেক বেশি হলেও এর মাধ্যমে রোগপ্রতিরোধ হবার কারণে অসুখের পরিমাণ অনেক কম। আমার নিজের এলাকায়ও সংক্রমণ কম হচ্ছে।
এ সেক্টরের উন্নয়নের জন্য স্থায়ীভাবে কিছু করা যায় কিনা ?

পোল্ট্রির জন্য আমাদের একটা স্ট্রং পোল্ট্রি বোর্ড স্থাপন করা উচিত। এ বোর্ডে যারা থাকবেন তারা পোল্ট্রির স্বার্থে কাজ করবেন। যে কোন কাজের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে তারা উদ্যোগ নিবেন। এর মাধ্যমে সেক্টরের উন্নয়ন হবে। একসময় আমরা কিছু পোল্ট্রি প্রোডাক্ট রপ্তানিও করেছিলাম। কিন্ত কিছু সমস্যার কারণে তা বন্ধ রয়েছে প্রায় নয় দশ বছর ধরে। চাইলে আমরা সেটা আবার রপ্তানি চালু করতে পারবো। আমাদের খামারিদের অনেক সাহস আছে, মন মানসিকতা আছে। একসময় দশ পনের হাজার ডিম দেয়ার মতো, ক্যাপাসিটির ফার্ম ছিল না কিন্ত এখন ১৫ লক্ষ ডিম উৎপাদনে সক্ষম খামার আছে। আমাদের খামারিদের এমন উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছে, এমন হতে পারে, একসময় একটা খামার থেকে, প্রতিদিন ৫০ লাখ ডিমও উৎপাদন করতে পারবো । তখন আমাদের রপ্তানিতে যেতে হবে। আমরা রপ্তানির অপেক্ষায় আছি। তা না হলেও আমরা সারা দেশের মানুষকে, অন্তত হাইজিন মাংস ও ডিম খাওয়াতে পারবো। মানুষ এন্টিবায়োটিকের ভয় করতো, এখন আমরা এন্টিবায়োটিক ছাড়া কিভাবে, মুরগি লালন পালন করতে হয় তা শিখে গেছি। এবং এন্টিবায়োটিক ফ্রি ডিম ও মাংস উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি।

মশিউর রহমান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্যারাগন গ্রুপ