একুশে পদক প্রাপ্ত আব্দুল জব্বার ছিলেন ব্যক্তিক্রমধর্মী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী

এবছর একুশে পদক প্রাপ্ত আব্দুল জব্বার ছিলেন একজন ব্যক্তিক্রমধর্মী ও বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা, সততা, দক্ষতা, দলের প্রতি আনুগত্য, নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা, কর্মীর প্রতি স্নেহপ্রবণতা ও দেশপ্রেম-বিশেষ করে সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল আস্থা সকলকে অনুপ্রাণিত করে। মাটি ও অবহেলিত মানুষের সাথে ছিল তার নিবিড় সম্পর্ক। ১৯৪৫ সালে ১৭ নভেম্বর আব্দুল জব্বার বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার আলালপুর গ্রামে জম্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আব্দুল জব্বার এবং মাতা মরহুম সমিতা বানু।

আব্দুল জব্বার ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বলিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন করতে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। ৬ মে পাকবাহিনী কুলাউড়া আক্রমণ করলে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগর চলে যান। ধর্মনগর ইয়ুথ রিসিপিশন ক্যাম্প চালু করে তার চেয়ারম্যান, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও শরনার্থী ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের সদস্য এবং রিক্রুট ক্যাম্পের কো-চেয়ারম্যান ছিলেন এবং সেখানে অবস্থানরত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পরামর্শ ও পরিকল্পনা করেন।

তিনি বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বা মুজিব বাহিনীর ৪ নম্বর সেক্টরের অধীনস্থ মৌলভীবাজার সাব-সেক্টরের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে নিয়োগলাভ করেন এবং বিভিন্ন রণাঙ্গনে সরাসরি যুদ্ধ করেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের নৃশংস হত্যাকান্ডের অবিশ্বাস্য দুঃসংবাদ শুনে আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে ১৭ আগস্ট কুলাউড়া শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রেক্ষিতে তিনি গ্রেফতার হন এবং এগারো মাস কারাবরণ করেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করলে আবার গ্রেফতার হয়ে এক বছর কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি মেজর নুর কারাভ্যন্তরে তাকে অমানসিক নির্যাতন করে।

আব্দুল জব্বার ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সফল অংশগ্রহণ তার জীবনে শ্রেষ্ঠ সময়। বঙ্গবন্ধু স্নেহধন্য ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের এ সংগঠক ১৯৯২ সালে ২৮ আগস্ট শোকের মাসে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান