এবার মানুষকে কামড়ালে মরবে মশা!

মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা তো বিরল নয় একেবারেই৷ কিন্ত যদি এমনটা হয় যে, আপনাকে মশা কামড়ালো আর আপনি অসুস্থ হওয়া তো দূরস্ত৷ উল্টে মশাটাই মারা গেল!  ভাবছেন গালগল্প! এ আবার হয় নাকি! হ্যাঁ হয়৷ এক আশ্চর্যজনক ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলেছে বিজ্ঞানীরা৷

নিউজ ১৮ এক প্রতিবেদনে জানায়, কেনিয়ার একদল গবেষকের গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে এমনই ওষুধ৷ যা খাওয়ার পর ২৮ দিন পর্যন্ত আপনাকে কামড়ালে মারা যাবে মশা।

গত ২৭ মার্চ ‘দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত হয় ওই গবেষণার তথ্য। সেখানে বলা হয়েছে, অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ ‘ইভারমেকটিন’ খাওয়ার পর ২৮ দিন পর্যন্ত আপনার রক্ত খেয়ে মশা মারা যাবে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় একটি উদ্ভাবন বলে মনে করছেন গবেষকরা । ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমিয়ে আনতে এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে । প্রতি বছর গড়ে ৫ লক্ষ মানুষ ম্যালেরিয়ার জীবাণু (প্লাজমোডিয়াম প্রোটোজোয়া) আক্রান্ত হয়ে মারা যান । আর মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ানোকে আটকাবে এই ‘ইভারমেকটিন’ ৷

আগের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ‘ইভারমেকটিন’ সেবনে মানুষের রক্ত মশার জন্য বিষাক্ত হয়ে ওঠে ৷ বিভিন্ন দেশের গবেষকরা কেনিয়ার মানুষের উপর পরীক্ষা করে দেখেন ঠিক কতটা ‘ইভারমেকটিন’ ব্যবহার করলে তার সুফল পাওয়া যাবে। ম্যালেরিয়ায় সংক্রামিত এমন ১২৮জন রোগীর উপর পরীক্ষা চালানো হয় ৷ তাঁদের ৩০০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি বা ৬০০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি ডোজে ইভারমেকটিন দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের ওজনের প্রতি কেজিতে এক মাইক্রোগ্রাম করে ‘ইভারমেকটিন’ দেওয়া হয় ৷ গবেষণা নিখুঁত করার উদ্দেশ্যে প্লাসিবো (নিষ্ক্রিয় ওষুধ) দেওয়া হয় কিছু মানুষকে। এর পাশাপাশি তাঁদের ম্যালেরিয়ার চিকিৎসাও দেওয়া হয়।

এরপর ২৮ দিন ধরে রোগীদের রক্তের নমুনা নিয়ে তা মশাকে পান করানো হয়। এ সব মশা ছিল অ্যানোফিলিস গ্যামবি প্রজাতির । এই ধরনের মশাই ম্যালেরিয়া ছড়ায়।

ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, যে সব রোগী সাতদিন ধরে ৬০০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি ডোজে ইভারমেকটিন সেবন করছিলেন, তাঁদের রক্ত পান করে দুই সপ্তাহের মাঝে মারা গিয়েছে ৯৭ শতাংশ মশা । ৩০০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি ইভারমেকটিন সেবন করা মানুষের রক্ত পান করে মারা যায় ৯৩ শতাংশ মশা ।

গবেষণা পত্রে লেখা হয়, ম্যালেরিয়ার সাধারণ ওষুধ এবং ‘ইভারমেকটিন’ দুটোই ব্যবহারের মাধ্যমে রোগের বাহক এবং ম্যালেরিয়ার জীবাণু দুটোরই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এতে ম্যালেরিয়া ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে। ‘ইভারমেকটিন’ সাধারণত ২০০ মাইক্রোগ্রাম বা তারও কম ডোজে গ্রহণ করা হয়। তাই ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজে তা গ্রহণ করা নিরাপদ কিনা, এটাও দেখা হয় এই গবেষণায়। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। গবেষণার ফলাফল আশাজনক হলেও একে নিরাপদ বলে ধরে নেওয়ার আগে আরও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন বলে মনে করেন গবেষকরা।

এস/