ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ইউনাইটেডকে বিদায় করে শেষ আটে এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হতাশাজনক মৌসুমকে আরো বেশী মলিন করে দিল এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। মঙ্গলবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ঘরের মাঠের অতিথিদের কাছে শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগে ১-০ গোলে পরাজিত হয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিয়েছে রেড ডেভিলসরা। ৪১ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফুল-ব্যাক রেনার লোদির গোলে এ্যাথলেটিকোর জয় নিশ্চিত হয়। এর মাধ্যমে ২০১৭ সালের পর থেকে ইউনাইটেডের যেকোন টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের অপেক্ষাটা আরো বাড়লো। এখন দলের সামনে একটাই লক্ষ্য আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জায়গাটা ধরে রাখা। ফর্মহীনতায় থাকা ইউনাইটেড বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের পঞ্চম স্থানে আছে।

লা লিগায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ নিজেদের সেভাবে প্রমান করতে না পারলেও অভিজ্ঞ কোচ দিয়েগো সিমিওনের অধীনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ঠিকই পৌঁছে গেছে। গত নয় মৌসুমে এনিয়ে ষষ্ঠবারের মত শেষ আটে খেলবে এ্যাথলেটিকো।

ইউনাইটেডের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ রালফ রাংনিক বলেছেন, ‘আমরা খুব ভালভাবেই জানতাম এ্যাথলেটিকোর মত একটি দলের বিপক্ষে লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে প্রথম গোলটি আমাদেরই করতে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি।’

ইউনাইটে সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এ্যাথলেটিকোকে বরাবরই আঘাত করে আসছেন। তিন বছর আগে এই এ্যাথলেটিকোর বিপক্ষ জুভেন্টাসের হয়ে শেষ ১৬’র ম্যাচে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও হ্যাটট্রিক করে দলকে রক্ষা করেছিলেন রোনাল্ডো। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়েও তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বেশ কয়েকবার এ্যাথলেটিকোকে বিদায় করেছেন। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সী এই পর্তুগীজ তারকা ক্যারিয়ারের এই প্রথমবারের মত ইউরোপীয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে পুরো ৯০ মিনিট এ্যাথলেটিকোর পোস্টে একটি শটও নিতে পারেননি। এর পিছনে অবশ্য সিমিওনের দলের কঠিন রক্ষানভাগের প্রশংসা করতেই হয়। তিন সপ্তাহ আগে ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে এন্থনি এলানগা বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে ইউনাইটেডকে ১-১ গোলের ড্রয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। কাল মূল একাদশে খেলতে নেমে ১৩ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পান সুইডিশ এই টিনএজার। দিয়োগো ডালোটের লো ক্রস থেকে এলানগার শট এ্যাথলেটিকোর গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাকের মাথায় লেগে ফেরত আসে। ম্যাচ শুরুর ১৫ মিনিট এ্যাথলেটিকো তাদের নিজেদের অর্ধ থেকে খুব একটা বেরুতে পারেনি। কিন্তু কাউন্টার এ্যাটাক থেকে বারবারই তাদের সামনে সুযোগ এসেছে। এর আগে পাঁচটি ম্যাচে গোল করেছিলেন হুয়াও ফেলিক্স। এর মধ্যে ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রথম লেগের গোলটিও রয়েছে। পর্তুগীজ এই স্ট্রাইকারের কাছ থেকে প্রথম গোলের সুযোগটি পায় এ্যাথলেটিকো। কিন্তু কোকের পাস থেকে মার্কোস লোরেন্টের অফসাইডে ফেলিক্সের ফিনিশিং কাজে আসেনি। বামদিক থেকে এ্যাথলেটিকোর বারবার গোলের সুযোগ সৃষ্টি করাকে কোনভাবেই আটকাতে পারছিল না ইউনাইটেড। এই সুযোগে ফেলিক্সের ব্যাকহিল থেকে আঁতোয়ান গ্রীজম্যানের ক্রসে অনেকটাই ফাকায় দাঁড়ানো লোদি এ্যাথলেটিকোকে এগিয়ে দেন।

দ্বিতীয়ার্ধেও অনেকটাই আগ্রাসী ছিল এ্যাথলেটিকো। বিপরীতে এক গোল হজম করেও ম্যাচে ফিরে আসার তেমন কোন তাগিদ ইউনাইটেডের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। ইউনাইটেড গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া বলেছেন, ‘তারা জানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে কিভাবে খেলতে হয়। এক গোল করার পর তারা আরো বেশী কঠিন দলে পরিণত হয়। যে কারনে আমাদের পক্ষে সুযোগ তৈরী করা কঠিন হয়ে পড়ে। একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা থেকে আমরা ছিটকে গেলাম। বিষয়টা সত্যিই হতাশার।’

ম্যাচ শেষের ২৩ মিনিট আগে দলের অন্যতম ফর্মে থাকা খেলোয়াড় ব্রুনো ফার্নান্দেসকে উঠিয়ে নেবার সাহসী সিদ্ধান্ত নেন রাংনিক। তার পরিবর্তে ম্যাচে ফিরে আসার জন্য পল পগবা ও এডিনসন কাভানির উপরই ইউনাইটেড কোচ বেশী আস্থা রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বাগতিকদের জন্য ওবলাককে বিপদে ফেলার একমাত্র পন্থা ছিল সেট পিস। রাফায়েল ভারানের একটি দুর্দান্ত শট রুখে দিয়ে ওবলাক ম্যাচের শেষভাগে এ্যাথলেটিকোকে রক্ষা করেছেন। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান