কমেছে করোনা সংক্রমনের হার আর বেড়েছে সুস্থতার হার

দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৪৪তম দিনে ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে সংক্রমনের হার কমেছে, বেড়েছে সুস্থতার হার। গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ হাজার ১২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ। গতকাল ১২ হাজার ৭১৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৯৬০ জন। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় এই হার ছিল ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কম।

দেশে এ পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৩২ হাজার ১৯৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ১৭ শতাংশ।

আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৮৭৮ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ১৪৭ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৩১ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ২৯২ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৬ দশমিক ১১ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।

তিনি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৫ জন মারা গেছেন। গতকালও ৩৫ জন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মারা গেছেন ৩ হাজার ৩৫ জন। শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ২৫৩ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৭০ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ১৮৩টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮২টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ১২৭ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৭১৪ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৪১৩টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ জন এবং ৫ জন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২ হাজার ৩৮৮ জন পুরুষ; ৭৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং ৬৪৭ জন নারী; ২১ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ২৯ জন এবং বাড়িতে ৬ জন মারা গেছেন।

ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন।

তিনি আরো জানান, এ পর্যন্ত মৃত ৩ হাজার ৩৫ জনের মধ্যে বয়স বিভাজনে দেখা গেছে, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, যা মোট মৃত্যুর দশমিক ৫৯ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩০ জন, যা দশমিক ৯৯ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮৫ জন যা ২ দশমিক ৮০ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২০১ জন যা ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪৩১ জন যা ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮৭৬ জন যা ২৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব ১ হাজার ৩৯৪ জন যা ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর প্রতি বিভাগে ২ জন করে, বরিশাল বিভাগে ৪ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত বিভাগ অনুযায়ী মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৪৫৮ জন, ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৩৯ জন, ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে ১৭৯ জন, ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ২১৪ জন, ৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ১১৯ জন, ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ; সিলেট ১৪৬ জন, ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ১১৫ জন, ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৫ জন, ২ দশমিক ১৪ শতাংশ।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৯ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৭৯ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩০৫ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৭ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৬৮ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১০৮ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২১০টি, রোগী ভর্তি আছে ৩ হাজার ৯৬৩ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ২৬৭টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৪৯টি, রোগী ভর্তি আছে ৩১৪ জন এবং খালি আছে ২৩৫টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৫২টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩০৮টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১২০টি।

০১৩১৩৭৯১১৩০, ০১৩১৩৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড়া পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮২৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৬৬৯ জন। আইসোলেশন থেকে ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ১৪৬ জন এবং এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৬৪৭ জন ছাড়া পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৪৯ হাজার ৩১৬ জনকে।

তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে এক হাজার ৯৫৫ জনকে। এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৪৪ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৫৭০ জন এবং এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭০০ জন ছাড়া পেয়েছেন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৭ হাজার ২৪৪ জন।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৯ হাজার ৮৭১টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১৩ হাজার ৬১৪টি, কাভার অল (পিপিই, গাউন, এপ্রোন, সুপ্রটেক্টর) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৪ হাজার ৮৭৯টি এবং ফেইসশিল্ড ও গগলস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ১৪৫টি।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৬৪৪টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬৩ হাজার ৬৪০টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৬১৫টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ৮৯৯টি। এ পর্যন্ত ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার ৩২টি।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।

তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৯৫৭ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৭৪৪ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৮ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ হাজার ২৩৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৩৮০ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৫১ জন এবং এ পর্যন্ত ৪১ হাজার ৩৬৬ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৮ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৮৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার ৯২০ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ১৫৩ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৫০ হাজার ৮০৫ জন বলে তিনি জানান।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়। ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান