করসেবায় এলটিইউ’র হ্যান্ডবুক-তথ্যকণিকা

প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ আয়করের তথ্য ও সেবা সম্বলিত একটি হ্যান্ডবুক এবং একটি তথ্যকণিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-আয়কর শাখা।

এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশে মাঠ প্রশাসনের মধ্যে প্রথমবার এলটিইউ এ হ্যান্ডবুক ও তথ্যকণিকা প্রকাশ করেছে। এর আগে চলতি বছর মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো এনবিআরের হ্যান্ডবুক প্রকাশিত হয়।

হ্যান্ডবুক ও তথ্যকণিকা করদাতা বিশেষ করে বড় করদাতা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কর সংক্রান্ত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। হ্যান্ডবুক-তথ্যকণিকা ইতোমধ্যে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের আলোচনায় এসেছে।

হ্যান্ডবুকে এলটিইউ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেওয়া আছে। বিশেষ করে এনবিআরের ‘সুশাসন ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো’র আওতায় এলটিইউ কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তার বিস্তারিত পাওয়া যাবে।

এছাড়া এলটিইউ এর ইতিহাস, এলটিইউ অধিক্ষেত্র, উইংভিত্তিক কার্যক্রমের বিবরণ, করদাতাকে প্রদত্ত সেবার উইং, এলটিইউ এর বিগত ৫ বছরে রাজস্ব আহরণের চিত্র, খাতভিত্তিক আদায়ের পরিসংখ্যান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেবা প্রদান, অভিযোগ নিষ্পত্তি, করদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, চলতি অর্থবছরে এলটিইউ এর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কৌশল, এডিআরের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি, এডিআর কার্যক্রম।

উৎসে আয়কর কর্তন ও আহরণ, বিগত ৫ বছরে উৎসে কর আহরণের চিত্র, উৎসে কর জমার অধিক্ষেত্র, সংস্কার ও আধুনিকায়ন, এলটিইউ প্রদত্ত সেবা, এলটিইউ কর্মকর্তাদের নাম, পদবী, ফোন নম্বর, ই-মেইল এবং অ্যালবাম।

ফাংশনাল পদ্ধতির মাধ্যমে কর ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ২০০৩ সালের নভেম্বরে এলটিইউ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) এর সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থাপনা সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে এলটিইউ প্রতিষ্ঠা করে। যা বর্তমানে রাজস্ব প্রশাসনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার সময় এলটিইউ এর অধিক্ষেত্রাধীন করদাতার সংখ্যা ছিল ৯৩৯। যার মধ্যে কোম্পানি করদাতা ২৫১টি ও ব্যক্তি করদাতা ৬৮৮জন। প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর বর্তমানে এর মোট করদাতার সংখ্যা ১ হাজার ১৭৭। এরমধ্যে কোম্পানি করদাতা ৪১৮। যার মধ্যে ৬০টি ব্যাংক, ২৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (লীজিং এন্ড ইনভেস্টমেন্ট), ৬৮টি মার্চেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, ৭৪টি ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান, ২৯টি জীবন বীমা, ৪৮টি সাধারণ বীমা, ৬টি মোবাইল অপারেটর, ৬টি ফুড এন্ড বেভারেজ, ১৪টি গার্মেন্ট কোম্পানি, ২৭টি টেক্সটাইল কোম্পানি, ৯টি মাল্টিপল প্রোডাক্টস, ১২টি ফার্মাসিউটিক্যালস ও অন্যান্য ৩৬টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা ৭৫৯ জন।

বিদায়ী অর্থবছর এলটিইউ ১৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করে। হ্যান্ডবুকে রাজস্ব আহরণের খাতভিত্তিক তথ্য দেওয়া আছে। চলতি অর্থবছর এলটিইউ এর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২২.১৫%। এর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এলটিইউ এর কর্মকৌশল তুলে ধরা হয়েছে।

এলটিইউ এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পেজ রয়েছে। সে পেইজে করদাতা বা নাগরিকদের মতামত, অভিযোগ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া কীভাবে অভিযোগ করতে হবে এবং অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

হ্যান্ডবুকে করদাতাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গণশুনানী ও হালখাতা কী ভূমিকা রেখেছে তা বিস্তারিত দেওয়া আছে। এলটিইউ এর উৎসে কর আহরণের চিত্র সন্তোষজনক। বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৬৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার উৎসে কর আহরণ করে। যা এর আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি। এছাড়া হ্যান্ডবুকে এলটিইউ প্রদত্ত সেবা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া আছে।

হ্যান্ডবুকে সম্প্রতি এনবিআরের নেওয়া যুগান্তরকারী পদক্ষেপ উৎসে কর অধিক্ষেত্র সংশোধন আদেশ বিষয়ে বিস্তারিত রয়েছে। অধিক্ষেত্র আদেশ সংশোধনের মাধ্যমে বড় করদাতা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের হয়রানি শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।

তথ্যকণিকায় সংশোধিত অধিক্ষেত্র আদেশ অনুযায়ী কোন খাতে কি পরিমাণ উৎসে কর কর্তন হবে তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। তবে তথ্যকণিকায় উৎসে কর রিটার্ন সম্পর্কে প্রথমবারের মতো তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যা করদাতা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সচেতন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এ বিষয়ে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাঠামো, সেবা বিষয়ে একটি হ্যান্ডবুক থাকা দরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী এলটিইউ হ্যান্ডবুক ও একটি তথ্য কণিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে করদাতারা এলটিইউ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এ হ্যান্ডবুক ও তথ্যকণিকা প্রকাশে করদাতারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সূত্র:অর্থসূচক

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১৭ অক্টোবর ২০১৭