করোনাভাইরাস আতঙ্কে পিপিই না পাওয়া ব্যাংক কর্মীরা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশে সরকার ঘোষিত ১০ দিনের সাধারণ ছুটি চললেও ব্যাংকিং সেবা সীমিত পরিসরে চালু রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক ব্যাংকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) না থাকায় তাদের মাঝে বিরাজ করছে নিরাপত্তাজনিত আতঙ্ক। তাদের পরিবারও প্রিয়জনদের সুরক্ষা নিয়ে আছেন উদ্বেগে। ব্যাংক কর্মীদের করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করলেও সরকারি ও বেসরকারি অনেক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের কর্মীদের পিপিই দেয়ার ব্যবস্থা করেনি। সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার রুহুল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করছি এবং কাজ করে যাব, কিন্তু ব্যাংকে তো আমরা নিরাপদ না। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যতটুকু নিরাপদে থাকার কথা সে অনুযায়ী থাকতে পারছি না। ব্যাংকে যেসব গ্রাহক আসছেন তাদের শরীরে ভাইরাস আছে কি না তা তো জানি না। আমরা সাধারণ পোশাকে অফিস করছি। পাশাপাশি নিজে থেকে মাস্ক ব্যবহার করছি। কিন্তু অনেক কর্মী সেটা করছেন না। তাতে একজনের কাছে আরেকজনের থেকে ভাইরাস আসতে পারে। সে জন্য প্রতিটি কর্মীকে কর্তৃপক্ষের সুরক্ষার পোশাক দেয়া উচিত।’

‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন পেয়েছি কিন্তু এখনও পিপিই পাইনি। তাই বিশেষ করে যারা ক্যাশে চাকরি করেন তাদের কেউ কেউ নিজের টাকায় পিপিই সংগ্রহ করেছেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে এক আতঙ্ক কাজ করছে। আমাদের পরিবারও আতঙ্কে আছে,’ যোগ করেন তিনি। ঢাকার বাইরে চাকরি করা অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার নাজমুল সাত্তার ইউএনবিকে ফোনে বলেন, ‘মফস্বলে ব্যাংকে আসা গ্রাহকরা সাধারণত করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্ক বা কিছু ব্যবহার করছেন না। আমরা নিজেরা মাস্ক ব্যবহার করে কাজ করছি কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। আমাদের মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে। যে গ্রাহক ব্যাংকে আসছেন তিনি কোথা থেকে এসেছেন বা তার সাথে বিদেশফেরত কারও সংস্পর্শ আছে কি না তা জানি না। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি।’ ভাইরাস থেকে সুরক্ষার কোনো পোশাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না এ রকম কোনো পোশাক দেয়নি। আমরা নিজেরা যতটুকু সচেতনা থাকতে পারছি তা থাকছি। তারপরও ব্যাংক থেকে ভাইরাস নিয়ে বাসায় যাচ্ছি কি না তা নিয়ে নিজে ও পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছি।’ বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুনিয়র অফিসার বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ করছি ঠিকই কিন্তু সারাক্ষণ ভয়ে থাকতে হচ্ছে যে কোনো গ্রাহকের দ্বারা ভাইরাস আসছে কি না। গ্রাহকদের দূরে থেকে কাজ করতে বললেও ঝগড়া করছেন। তাই নিজেদের যতটুকু নিরাপদ রেখে কাজ করা যায় তার চেষ্টা করছি। ভাইরাস থেকে সুরক্ষার পোশাক পরে কাজ করতে পারলে ভালো হতো কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কোনো পোশাক এখনও দেয়নি।’

সরকারি ব্যাংকে চাকরি করা একজনের পরিবারের সদস্য জান্নাতুল নাঈম বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি সবকিছুতে ছুটি ঘোষণা করলেও সরকার ব্যাংক খোলা রেখেছে। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য তো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য কোনো পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে তারা ও পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছি কি না তা নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। এ বিষয়ে সরকার ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষর কাছে আবেদন থাকবে যে সুরক্ষা পোশাক দিয়ে ব্যাংক খোলা রাখুন।’ এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ‘সরকারের নির্দশনা অনুযায়ী ব্যাংক সীমিত আকারে চালুর আগেই বাংলদেশ ব্যাংক থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে নির্দশেনা দেয়া আছে যে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা নিয়েই ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ ‘করোনাভাইরাসের বিষয়টিকে যেখানে এত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সেখানে কোনোভাবেই কোনো ব্যাংকে এটি নিয়ে গাফিলতি করা যাবে না। প্রতিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বরত প্রত্যেক কর্মীকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে হবে,’ যোগ করেন তিনি। অনেক ব্যাংকে কর্মীদের সুরক্ষার জন্য কিছু যে দেয়া হয়নি- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের কোনো কর্মী অথবা কোনো গ্রাহকের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে জন্য প্রত্যেক কর্মীকে পরস্পর থেকে নিরাপদ থাকতে হবে। তেমনি গ্রাহকদের থেকেও নিজেদের সুরক্ষিত রেখে কাজ করতে হবে। তিনি জানান, কোনো কর্মী অসুস্থ হলে বা করোনার লক্ষণ থাকলে তার অফিস না করাই ভালো এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার গত ২৩ মার্চ এ সিদ্ধান্তে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল সারা দেশে ছুটি ঘোষণা করে।

সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী ২৬ মার্চ সরকারি ছুটি এবং ২৭ ও ২৮ মার্চ সাপ্তাহিক ছুটির সাথে ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি এর সাথে যুক্ত হবে। তবে এ সময় কাঁচাবাজার, খাবারের ও ওষুদের দোকান, হাসপাতাল এবং জরুরি সেবাগুলো খোলা থাকবে। সেই সাথে ছুটির দিনগুলোতে ব্যাংকও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে লেনদেনের সময় সীমিত করে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সরকার ঘোষিত ১০ দিনের সাধারণ ছুটিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। তবে গ্রাহকদের সাথে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান