করোনার টিকা প্রদানে অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দেশে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদানের পরিকল্পনায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের বিবরণ প্রকাশ করেছেন।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে টাঙ্গাইল-৬ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর প্রশ্নের জবাবে এ বিবরণ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনাসমূহও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন বিতরণের প্রথম পর্যায়ে দেশের জনসংখ্যার মোট ১ কোটি ৫০ লাখ (৮.৬৮ %) লোককে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ২ ডোজ করে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর অধিবেশন চলাকালীন টাঙ্গাইল-৬ এর সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা একথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে ভার্চ্যুয়ালি টিকা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের উপহার হিসেবে ২০ লাখ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ক্রয়কৃত ৫০ লাখ করোনার টিকা গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকা পৌঁছেছে। ৭০ লাখ টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সিরামের সাথে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ছয় মাসে সব টিকার সরবরাহ পাওয়া যাবে। এর বাইরে প্রয়োজন মোতাবেক আরো টিকা ক্রয়ের জন্য সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তদের কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন টিকা পাবেন।
এছাড়া পর্যায়ক্রমে যাদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে তারা হলেন- কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সব অনুমোদিত বেসরকারি ৬ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী, দুই লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্মুখসারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ জন সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জন সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ে কর্মরত ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, সম্মুখসারির গণমাধ্যমকর্মী ৫০ হাজার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মচারী ১ লাখ ৫০ হাজার, ৫ লাখ ৪১ হাজার ধর্মীয় প্রতিনিধি। মৃতদেহ সৎকার কাজে নিয়োজিত ৭৫ হাজার ব্যক্তি, জরুরি পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবহন কর্মচারী ৪ লাখ, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর কর্মী ১ লাখ ৫০ হাজার, প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক ১ লাখ ২০ হাজার, জেলা ও উপজেলাসমূহে জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মচারী ৪ লাখ, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠী (যক্ষ্মা, এইডস ও ক্যান্সার রোগী) ৬ লাখ ২৫ হাজার, ৬৪ থেকে ৭৯ বছর বয়স্ক জনগোষ্ঠী ১ কোটি ৩ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮, ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩, জাতীয় দলের খেলোয়াড় (ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ইত্যাদি) ২১ হাজার ৮৬৩, বাফার, ইমার্জেন্সি, আউটব্রেক ১ লাখ ৭০ হাজার জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ডাব্লিওএইচও’র কোভাক্স সুবিধা থেকে তার জনসংখ্যার ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৩.৪০ কোটি লোকের জন্য ৬.৮০ কোটি টিকা পাবে।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিএইচও)’র বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা গ্রুপ অব এক্সপার্টস (এসএজিই)’র নির্দেশিকা এবং দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ভ্যাকসিন গ্রহীতা অগ্রাধিকার গোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ৬৪টি জেলা ইপিআই স্টোর এবং ৪৮৩টি উপজেলা ইপিআই স্টোরে এ ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হবে।
চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত ৩ কোটি বা ততোধিক ডোজ ভ্যাকসিন ছয়টি ধাপে সরাসরি বাংলাদেশের নির্ধারিত জেলার ইপিআই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে, ভারতে উপহার হিসাবে ২০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের চালান দেশে এসে পৌঁছেছে। কোভিশিল্ড নামের ভ্যাকসিনটি অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইউনিভার্সিটি উদ্ভাবন করেছে এবং ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট (এসআইআই) উৎপাদন করেছে।
এছাড়া, এসআইআই থেকে বাংলাদেশের ক্রয়কৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের মোট তিন কোটি ডোজের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ ঢাকায় এসেছে।