করোনায় চট্টগ্রামে ৭ জনের মৃত্যু

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন বাহক শনাক্ত হন ৩০২ জন। সংক্রমণ হার ২৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়, নগরীর ছয়টি ল্যাবে গতকাল শুক্রবার ১ হাজার ২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ৩০২ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ২২৬ জন ও নয় উপজেলার ৭৬ জন। জেলায় করোনাভাইরাসে মোট শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ৪৬ হাজার ৬৮২ জন। এর মধ্যে শহরের ৩৭ হাজার ৪৪১ জন ও গ্রামের ৯ হাজার ২৪১ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ হাটহাজারীতে ২০ জন, পটিয়ায় ১৬ জন, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী ও আনোয়ারায় ৮ জন করে, রাউজানে ৬ জন, মিরসরাইয়ে ৫ জন, সীতাকু-ে ৩ জন ও বাঁশখালীতে ২ জন রয়েছেন।
গতকাল করোনায় চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪ জন ও গ্রামের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা এখন ৪৫২ জন। এতে শহরের বাসিন্দা ৩৩৩ জন ও গ্রামের ১১৯ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন নতুন ৮১ জন। মোট আরোগ্যলাভকারীর সংখ্যা বেড়ে ৩৫ হাজার ২১৬ জনে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৭৯৬ জন এবং ঘরে থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হন ৩০ হাজার ৪২০ জন। হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হন ২০ জন ও ছাড়পত্র নেন ২৭ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১ হাজার ৩৬৪ জন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে গতকালের ৭ জনসহ চলতি মাসের ১৬ দিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৬৩ জনে। করোনাকালের সর্বোচ্চ ৯ রোগীর মৃত্যু হয় গত ১০ এপ্রিল। তবে এদিন এ মাসের সর্বনি¤œ ২২৮ জনের নমুনায় ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। সংক্রমণ হার ১২ দশমিক ২১ শতাংশ। ১১ এপ্রিল জেলার সর্বোচ্চ ৫৪১ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়। এদিনও ৭ রোগীর মৃত্যু হয়।
করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় বর্তমানে বাসায় অবস্থানকারী সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি আজ বাসস’কে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সংক্রমণ হার যথেষ্ট বেড়েছে। সারাদেশেই বাড়ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাড়ার হার কাছাকাছি থাকবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ বাড়ন্ত প্রবণতা থাকবে। গত কয়েকদিনে পরীক্ষার জন্য নমুনা অনেক কম আসছে। ফলে কম নমুনা থেকে অধিক আক্রান্ত বেরিয়ে আসছে। এছাড়া, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে না চললে ঊর্ধ্বমুখী এ হার কিছুতেই কমবে না। করোনায় আক্রান্তদের নিজ ঘরে অবশ্যই আইসোলেশনে থাকতে হবে। অন্যান্য বিধি-নিষেধও মেনে চলতে হবে। বর্তমান ধরনটা অধিক মাত্রায় সংক্রমণশীল হওয়ায় একজন থেকে দ্রুত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আক্রান্ত করে ফেলে।’
করোনায় মৃত্যু বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আগে থেকে শারীরিক কোনো জটিলতা থাকা ও বেশি বয়সী মানুষের মৃত্যু ঘটছে অধিক। গত বছর আমরা বাসায় রেখে চিকিৎসা করাতে পরামর্শ দিতাম। এবার যাদের একটু জটিলতা থাকে তাদের অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ফলে আক্রান্ত রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হলেই তাকে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’
এদিকে, গতকালের ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে ২৬২ জনের নমুনা পরীক্ষায় গ্রামের ৫ জনসহ ৫০ জন জীবাণুবাহক পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ১৭৯ জনের নমুনার মধ্যে গ্রামের ১৫ জনসহ ৯৩ জন আক্রান্ত শনাক্ত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২১৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে শহরের ৪৩ জন ও গ্রামের ৩৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস থাকার প্রমাণ মিলে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ৯৪ জনের নমুনায় শহরের ১২ ও গ্রামের ১৮ জন পজিটিভ শনাক্ত হন।
বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাব ইম্পেরিয়ালে ২৫৮টি নমুনায় গ্রামের ৪টিসহ ৪১টি এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ২৫টির মধ্যে গ্রামের ১টিসহ ১২টিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
তবে এদিন আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএল ও বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাব শেভরনে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবেও পরীক্ষার জন্য কোনো নমুনা পাঠানো হয়নি। ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে বিআইটিআইডি’তে ১৯ দশমিক ০৮ শতাংশ, চমেকে ৫৪ দশমিক ৭০, চবি’তে ৩৫ দশমিক ০২, সিভাসু’তে ৩১ দশমিক ৯১, ইম্পেরিয়ালে ১৫ দশমিক ৮৯ এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ৪৮ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।