কুবিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির নির্মাণের দাবি

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৫ বছরেও কুমিল­া বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) নির্মিত হয়নি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়। দীর্ঘদিন যাবৎ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মন্দির নিমার্ণের দাবি জানিয়ে আসলেও নেওয়া হয়নি তেমন কোন উদ্যোগ। পূজা অর্চনার জন্য ক্যাম্পাসে নেই আর তেমন কোন ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে ক্যাম্পাসের স¤প্রসারিত অংশের নকশায় থাকছে সকল ধর্মাবলম্বীদের স্থাপনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রায় সাড়ে ৬’শ শিক্ষার্থী, ৩০ জন শিক্ষক এবং প্রায় ১০ জনের অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। ক্যাম্পাসে সরস্বতী পূজা হয়, দীপাবলি উৎসবসহ বিভিন্ন সনাতন ধর্মী উৎসব হয়। নির্দিষ্ট কোন স্থান না থাকায় কাঠাঁল তলা, মুক্তমঞ্চে এসব ধর্মীয় পূজা অর্চনার আয়োজন করতে হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের দাবি একটি অস্থায়ী কক্ষ বরাদ্ধ দিয়ে উপসনালয় করার সুযোগ করে দেওয়া হোক।
খোজঁ নিয়ে যায়, সমসাময়িক প্রতিষ্ঠিত এমনকি কুমিল­া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য উপাসনালয় থাকলেও কুবিতে ১৫ বছরেও তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে একাধিক শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ঐশী ভৌমিক বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর সরস্বতী পূজা হয়, দীপাবলি উৎসব হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রসাশনিক কর্মকর্তাসহ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘদিন যাবৎ আবেদন করা সত্তে¡ও আমাদেরকে একটা নির্দিষ্ট প্রার্থনার জায়গা দেয়া হয়নি। আমরা পূজার জিনিসপত্রগুলো রাখার জন্য একটা রুম অন্তত চেয়েছি, তাও আমাদের দেয়া হয়নি। প্রতিবছর পূজার জিনিসগুলো হলের রুম, আশেপাশের মেসে রাখতে হয়, এতে অনেক জিনিস হারিয়ে যায়। প্রতিবছর নতুন করে অনেক জিনিস কিনতে হয় আমাদের। সনাতনী এত ছাত্র-ছাত্রী থাকা সত্তে¡ও দিনের পর দিন প্রসাশনের কাছে দাবি জানিয়েও একটা নির্দিষ্ট উপাসনা কক্ষের ব্যবস্থা পাইনি। যেখানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদ, মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য উপাসনার জায়গা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় একটা আদর্শে প্রতিষ্ঠিত হয় ও পরিচালিত হয়। বিশ্বকে নিজের মধ্যে ধারণের আদর্শ। কিন্তু প্রসাশনের এই বিরূপ আচরণ, আমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে।

সভাপতি মোহন চক্রবর্তী বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে ৬’শ এর উপরে সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থী আছে। অথচ উপসনা করার জন্য কোন জায়গা নেই। তাহলে আমরা কিভাবে ধর্মীয় উপাসনা করব। আমরা অনেক আগে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও এই ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সবকিছুর দাবি করতে হবে কেন?
বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব বলেন, হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য অবশ্যই একটি উপাসনালয় দরকার। আমরা প্রতিবছর একটি পূজা করি তাইনা। সেজন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান দরকার। প্রত্যেক ধর্মের জন্য একটি উপাসনালয় প্রয়োজন। কুবিতেও একটি মন্দির থাকা উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, ‘আমাদের যেহেতু তেমন স্থাপনা নেই। তারা কাঠাঁল তলায় পূজা অর্চনা করে আসছে। তবে ক্যাম্পাসের স¤প্রসারিত অংশে ধর্মীয় স্থাপনা তৈরি করতে জায়গা রাখা আছে। সেখানে মন্দির, গির্জা করা হবে। কক্ষ বরাদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, অনুমোদিত সংগঠনগুলোকে কক্ষ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে জায়গা তৈরি হলে আমরা কক্ষ বরাদ্ধের বিষয়টি ভেবে দেখব।’

মীর শাহাদাত , কুবি