কুমিল্লার হাতের তৈরী মোজা বিক্রি করে বদলে গেছে এতবারপুর গ্রামের চেহারা

ন্যায্য পারিশ্রমিক, ন্যায্য ব্যবসা-এ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার এতবারপুর গ্রামের কর্মট মানুষরাই আজ উপজেলার অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে দিয়েছে। বদলে গেছে এতবারপুর গ্রামের চেহারা। উন্নতমানের হাত মোজা তৈরীর কাজকে বেছে নিয়ে তারা তাদের জীবনে বয়ে এনেছে সুখকর দিন। সবাইকে করেছে স্বাবলম্বী। উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এতবারপুর গ্রামটি অবস্থান। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে একটি একছালা টিনের ঘরের সামনে ওঠানে বসে হাত মোজা বানাচ্ছিল বন্যা। তার পাশে ছিল সাদা কাপড় ও লাছার বক্স। হাত মোজা তৈরী করে এতবারপুর গ্রামের স্কুলে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী ও গৃহবধূরা বাড়তি আয় করছেন। অনেকেই বদলে ফেলেছেন সংসারের চেহারা। এতবারপুর গ্রামের গীতা রানী সরকার, কাঞ্চন রানী সরকার, কেয়া ভৌমিক জানায়, তারা দিনে একজনে গড়ে ৩০/৪০টি হাত মোজা তৈরী করতে পারে।

প্রতি জোড়া মোজা ৬ টাকা হিসেবে ৫০ জোড়া মোজায় ৬০০ টাকা বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি জোড়া মোজায় ৫ টাকা লাভ হচ্ছে। কারখানা গুলোতে প্রতিদিন শত শত পিস কাপড়ের মোজা তৈরীর কাজ করছে কারীগররা। ওই গ্রামের গৃহবধূ মঙ্গলী রানী, সাধনা বালা, আরতী রানীরাও বসে নেই। কাজের অবসরে হাত মোজা তৈরী করে এরা বাড়তি আয় করেন। আরতী রানী সরকার বাসসকে জানান, হাত মোজা তৈরী করে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে তার সুখেই চলে সংসার। তার মেয়ে লতা রানী সরকার চিলোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। সেও লেখাপড়ার পাশাপাশি সময় অনুযায়ী হাত মোজা তৈরী করে। তারা সকলেই এখন স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেকেই এ পেশার সুফল ভোগ করছেন। এতবারপুর গ্রামের হাত মোজা তৈরীকারীরা ঢাকার বেগম বাজার থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া বিভিন্ন পুরাতন ভারী কাপড় ক্রয় করে গাড়ী করে নিয়ে আসেন এতবারপুর গ্রামে। পুরাতন ভারী কাপড়ের তৈরী রফতানীযোগ্য পণ্য গ্রামের বেকার অসহায় পুরুষ ও মহিলাদের মনে আশার সঞ্চার করেছে।

চান্দিনা উপজেলার এতবারপুর গ্রামটিকে কেন্দ্র করে আশপাশের কয়েকটি পাড়ায় এ শিল্প ছড়িয়ে পড়েছে। এতবারপুর গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে এখন এ শিল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, এতবারপুর গ্রামের আবু তাহের নামের এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম চট্রগ্রাম থেকে কাজ শিখে গ্রামের দরিদ্র মানুষকে শেখান পুরাতন কাপড় দিয়ে মোজা তৈরীর কাজ অল্প সময়ের মধ্যে কয়েক’শ মানুষ এ কুটির শিল্পে দক্ষ শ্রমিকে পরিণত হয়। এতবারপুর গ্রামের হাত মোজা ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বাসসকে জানান, যখন এতবারপুর গ্রামে হাত মোজা তৈরীর কাজ ২০০২ সালে শুরু হয়। তখন গাঁয়ের মানুষ হাত মোজা তৈরীর কাজের চাহিদা দেখে আস্তে আস্তে এ কাজের প্রতি আগ্রহ হলো। তখন গাঁয়ের মানুষ আবু তাহেরে কাছে কাজ শিখতে শুরু করে। এবং তারা কাজ শিখে এখন পুরো গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন পরিবারের লোকজন এ শিল্পের সাথে জড়িত হওয়ার কারণে দিন দিন এ শিল্পের প্রসার ঘটছে এ গ্রামে। ব্যবসায়ী জাকির জানান, তাদের এ কুটির শিল্পের মালমাল কারিগরদের দিয়ে কাজ করিয়ে ঢাকার আলনূর ষ্ট্রীল মিইলস্, এ্যাপোলো ষ্ট্রীল মিইলস ও চট্রগ্রামের আবুল খায়ের ষ্ট্রীল মিইলস, পিএইচ পি ষ্ট্রীল মিইলস, এস আলম ষ্ট্রীল মিইলস গুলোতে যায় বলে তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়। মোজা তৈরীর কারিগর শিলা আক্তার, আখি আক্তার, শিল্পী আক্তার, নাজমা আক্তার, মাইনোদ্দিন, আমির হেসেন তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন কারখানার কারিগর, তারা জানান সকাল ৯ থেকে বিকেল ৪টা পযর্ন্ত কাজ করেন এবং কাজের ফাঁকে ২ বার বিশ্রাম নেন তারা। তারা প্রত্যেকেই মাস শেষে পান ৫ হাজার ৬০০ টাকা করে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ বলেন, এতবারপুর গ্রামের লোকজন সবাই পরিশ্রমী। তারা হাত মোজা তৈরী করে যে টাকা আয় করছে তা দিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান