কুম্ভকর্ণের ঘুম কি আদৌ ভাংবে?

প্রায় অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে বয়সভিত্তিক ফুটবলে নেপালকে হারাতে পারে না বাংলাদেশ। ২০১১ সালে নেপালের কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দল। ২০১৩ সালে স্কোরলাইন ছিল ৫-১। কাল সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে বাংলাদেশ হেরে গেল ৪-২ গোলে। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়েও প্রায় একই অবস্থা। অথচ জাতীয় দলের মতো বয়সভিত্তিক ফুটবলেও হিমালয়কন্যাকে একসময় নিয়মিতই হারাত বাংলাদেশ। ১৯৯২ সালে এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে নেপাল হেরেছিল ৮-০ গোলে।

নেপাল এগিয়ে যাচ্ছে। একাডেমিভিত্তিক ফুটবল অবকাঠামো গড়েই নেপাল গড়ে তুলছে ফুটবলের শক্তিশালী ‘পাইপলাইন’। নেপাল জাতীয় দলও সেই ফল পাচ্ছে। হয়তো আর বছর দুই-তিন পর দক্ষিণ এশীয় ফুটবলের বড় পাওয়ার হাউসই হয়ে উঠবে তারা। দারুণ একটা একাডেমি গড়ে নেপালি ফুটবলের যে উপকার হয়েছে, বাংলাদেশ চলেছে এর ঠিক উল্টো পথেই। একাডেমিভিত্তিক অবকাঠামো নেই দেখেই ফুটবলে পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে বাংলাদেশ। বাফুফে সব জানে, সব বোঝে, কিন্তু এসব নিয়ে তাদের কোনো নেই তাদের।

২০১৫ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রতিভাবান সেই দলটির খেলোয়াড়েরা কীভাবে বাফুফের অবহেলায় হারিয়ে গেছে—সেটি তো সবাই জানে। এবার নেপালের অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে মোটামুটি একটা প্রতিভাবান দল পেলেও বাফুফের কল্যাণে খুব অবহেলার সঙ্গেই চলেছে প্রস্তুতি। মাত্র এক মাসের প্রস্তুতি নিয়ে নেপালে গিয়ে খুব খারাপ করেনি দলটা। সেমিফাইনালে উঠেছে। শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জিতেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা, ভুটান, এমনকি মালদ্বীপের বিপক্ষে জেতা সম্ভব হলেও দলটা যে নেপাল কিংবা ভারতের সঙ্গে পেরে উঠবে না, এটা অনুমিতই ছিল। কাল সেটিই সবাই দেখল। বাংলাদেশ যেখানে এক মাসের প্রস্তুতি নিয়েছে, নেপালি দলটা একসঙ্গে ছিল দেড় বছর ধরে। এমন প্রস্তুতি নেওয়া একটি দলের বিপক্ষে ৪-২ গোলের হারটা বোধ হয় খুব খারাপ নয়।

এমন একটি একাডেমির কথা গত আট-নয় বছরে বাংলাদেশের ফুটবলে খুব আলোচিত বিষয়। সিলেট বিকেএসপিকে ফুটবল একাডেমি করেও সেটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে অর্থাভাবে। দুই বছর আগে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল জেতা বাংলাদেশ দলটি ছিল  সিলেট একাডেমিরই ফসল। অর্থাভাব হতেই পারে, কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারে বাফুফে নতুন করে কেন অর্থ জোগান দিতে পারল না, সেটা কারওরই বোধগম্য নয়।

এখন দেখার বিষয় এমন একটা একাডেমি কবে হবে আমাদের ফুটবলার তৈরির জন্য।

আজকের বাজার: সালি / ২৬ আগস্ট ২০১৭