কৃষিকে ব্যবহার করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব

ড. এফ এইচ আনসারী : আমাদের দেশটা আয়াতনে অনেক ছোট। কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে কোন মতেই ছোট বলা যায়না। অন্যদিকে আমাদের দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকার কারণে দেশের অনেক যুবক উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে। আর বিশ্ববিদ্যালগুলোর আগে কলেজগুলো থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে অনেক যুবক। তাদের কর্মসংস্থানও সব সময় হচ্ছেনা।

আমরা যদি সবাই চিন্তা করি শহরে আসবো, সরকারি চাকরি করবো কিংবা প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি করবো সেটা কিন্তু চিন্তা করা খুবই কঠিন। কারণ আমাদের দেশে সরকারি কিংবা প্রাইভেট সেক্টরে এই বিপুল সংখ্যক ডিগ্রিধারী যুবকদের চাকরির যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে এই যুবকদের মধ্যে কেউ চাকরি করবে, কেউ ব্যবসা করবে, এটাই হওয়া উচিত।

আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ এবং দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ গ্রামে বসবাস করে। ফলে আমাদের কৃষি খাতে বড় একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এখন বাস্তবিক চিত্রে কিছুটা ভিন্নতা দেখা দিচ্ছে। যেমন, আমাদের কৃষদের সন্তানরা লেখাপড়া শেষ করে কৃষি পেশার উপর অনিহা দেখাচ্ছে। তারা ঢাকায় এসে চাকরির সন্ধান করছে। ফলে আমাদের কৃষি সেক্টর যোগ্য জনবল হারাচ্ছে। অন্যদিকে তারা সর্বদা ভাবছে লেখাপড়া শেষ করেছি, কিছু একটা করতে হবে।

এক্ষেত্রে যুবকদের যা করতে হবে তা হলো- আমাদের কৃষি কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। কেউ কৃষি কাজ কররে, কেউ আবার কৃষিতে সেবা দিবে, কেউবা কৃষিকে ঘিরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে, আবার কেউবা প্রচার-প্রচারণায় কাজ করবে। এভাবে দেশের বেকার যুবকদের পুঞ্জিভূত করতে হবে।

এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, কী ধরণের কৃষি কাজ করবে যুবকরা? উত্তরে তিনি নিজেই বলেন, আমরা জানি যে, দেশে ভালো ভালো যে কৃষিপন্যগুলো উৎপাদনে লাভবান হয়েছে, যেমন- ফলের উৎপাদন, মাছের চাষ, মুরগী কিংবা গাভীর খামার সবই কিন্তু আমাদের যুবকরা করেছে। নিজের উদ্দ্যোগে অথবা বাবা মায়ের সহযোগিতায় কিংবা সমাজ তাদের এ কাজে সহযোগিতা করায় তাঁরা সাফল্য পেরেছে। এই সার্পোটগুলোয় যদি তাদের সাফল্য এনে দিয়ে থাকে, তবে তাদেরকে আমাদের রাষ্ট্রের সার্পোট করতে অসুবিধাটা কোথায়?

যুবকদের তহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রশিক্ষণ দিতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে, এছাড়া এদেরকে শুল্কমুক্ত ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আর এগুলো পেলেই তারা কৃষি খাতে কাজ করতে আগ্রহী হবে।
আমরা যদি মাঠ ফসলের কথা বলি তবে, ঘাস উৎপাদন করে বিক্রি করলে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারে তারা। যদি সবজির কথা বলি তবে, এক ধরণের বিদেশি সবজি আছে (যেমন-ক্যাপসিকাম) যা আমাদের দেশে এখনও আমদানি করে বিক্রি করা হয়। এগুলো চাষ করতে পারে তারা। ফলের কথা যদি বলি তবে, পেয়ারা আছে, এছাড়া দেশীয় ফল এবং বিদেশি সব ধরণের ফলই এখন দেশে চাষ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের ফলের চাষ করতে পারে তারা। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় চাষ করতে তারা জমি পাবে কোথায়? তবে বলবো জমি লিজে নিয়েও তারা চাষাবাদ করতে পারে।

তারপর কৃষিতে এখন অনেক সার্ভিস চার্জ লাগে যেমন- চাষাবাদ, উত্তলন, ধান লাগাতে, কাটাতে, এভাবে সবজি বা আলু, সব ধরণের কৃষিতে সার্ভিস চার্জ লাগে। এখন যুবকদের হাতে এই ব্যায় বহন করার মতো টাকা নেই। থাকলেও অল্প যা দিয়ে চাষাবাদের সর্ব প্রক্রিয়া শেষ করা যায় না। সরকার থেকে যদি একটা যন্ত্র তাদের হাতে তুলে দেওয়া যায় তাহলে তারা কিন্তু সল্পমূল্যের বিনিময় অঞ্চলভিত্তিক এই সেবাটা দিতে পারে। এসব সার্ভিসের চাহিদা আছে, মূল্যায়নও আছে।

আমাদের তরুনরা কর্টেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, যেমন- চানাচুর, আচার, চাটনির কারখানা তৈরি করতে পারে। আপনারা কক্সবাজারে গেলে দেখে থাকবেন অনেকেই আচার কিনছে। এই আচার যদি মিয়ানমারের মতো একটা অনুন্নত দেশ থেকে আসতে পারে তবে আমাদের দেশের তরুণরা কেন তা তৈরি করতে পারবেনা। একইভাবে আমাদের দেশে যে ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলো হচ্ছে এখানে যদি ব্যাপকতর তৈরি করে দেওয়া যায় তবে এখান থেকে কর্মসংস্থান বাড়তে পারে। ফলে একটা মূল্যবাদ কৃষি মার্কেট তৈরি হবে এবং দেশের উন্নয়ন ও একই সাথে আমাদের যুবকদের জন্য একটা ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

অবশ্য তাদের হাতে যদি প্রযুক্তির ছোঁয়া না আসে তবে ঐতিহ্যগতভাবে কৃষিকে ব্যবহার করে তঁরা লাভবান হতে পারবে না। তখন দেখা যাবে একদিকে বেকার সমস্যা বাড়ছে, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য তাদের হাতে প্রযুক্তি এনে দিতে হবে। আর এই প্রযুক্তিগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করে সরকার এবং প্রাইভেট সেক্টরকে যোগান দিতে হবে। প্রযুক্তির অর্থ কেবলমাত্র উন্নত বিজ নয়। ভালো যন্ত্রপাতি, উন্নত ব্যবস্থা, ভালো উৎপাদন পাওয়ার কলাকৌশলও তাদের হাতে দিতে হবে। তঁদের কাছে এই প্রযুক্তির ছোঁয়া পৌছে দেতে পারলেই কেবল আমাদের দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ শিক্ষিত যুবক ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে তাদেরকে পুঞ্জিভুত করা যাবে। তখন আমাদের বেকার সমস্যাটা থাকবেনা।

আমরা পূর্ণাঙ্গ কৃষি ব্যবস্থাপনার উপর কাজ করছি, যেখানে আমার প্রযুক্তির কথা বলছি, যোগাযোগের কথা বলছি, তদন্তের কথা বলছি, অনুশীলনের কথা বলছি। এছাড়া আমাদের শিল্পকারখানায় যে কৃষকরা পণ্য সরবারহ করে তাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ ও নতুন প্রযুক্তি দিয়ে থাকি। যেসকল কৃষক আমাদের পণ্য যেমন, সিট, মটরের যন্ত্রপাতি প্রভৃতি, ব্যবহার করছে তাদেরকে আমরা উন্নত প্রযুক্তি এনে দিচ্ছি, প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, এর সবই আমরা করছি। আমরা আমাদের ‘কৃষকই সম্পদ’ ভিশনে যেটা করছি তা হলো, কৃষকের যা লাগছে তাই দিচ্ছি। কৃষকের প্রয়োজন শুধু সার, কীটনাশক নয়, প্রযুক্তি, যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা এবং পণ্য সবই কৃষকের দরকার।

মূলত উদ্দ্যোগ আর প্রচারণা দুটি ভিন্ন বিষয়। যখন ছাদ কৃষি নিয়ে প্রতিবছর একটা অনুষ্ঠান হয়, ক্যাম্পেইন হয়, প্রশিক্ষণ হয়, তখন আমরা দেখি আমরা একটিভ হয়ে যাই এবং এটাকে সার্পোট করতে শুরু করি। এটার মানে এই যে উদ্দ্যোক্তা থেমে থাকেনা, উদ্দ্যোক্তা সর্বদা চলমান। কয়েকদিন আগে আমরা একটা বেসকরারি চ্যানেলে দেখতে পেয়েছি যে, মিরপুরে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তার ছাদের উপর বিশাল বাগান গড়েছে। সে এটা করে খুবই আনন্দিত। তার উদ্দেশ্য হলো অবসরের পর এখন বাগান থেকে যা পাবে তা পরিবারকে দিয়ে আনন্দ অনুভব করবে। আর সেটা সে করছে।
উদ্দ্যোক্তা থামেনি, মিডিয়ার দৃষ্টিতে হয়তো এখন আসছেনা। আমরা যদি গত বছরের সাথে তুলনা করি তবে দেখবো এ বছরও উদ্দ্যোক্তা বেড়েছে। আমি মনে করি আবার যখন ক্যাম্পেইনের সময়টা আসবে তখন দেখা যাবে যারা ছাদ কৃষি করেছে তারা আসবে এবং তাদের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করবে।

ড. এফ এইচ আনসারী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
এসিআই এগ্রিবিজনেস।