কেরাণীগঞ্জ ডকইয়ার্ডে লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে

ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী তীরবর্তী ঐতিহ্যবাহী কেরানীগঞ্জ উপজেলায় নদীর তীর ঘেঁষে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ডকইয়ার্ড তথা জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠেছে।এখানে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

নিঃসন্দেহে এটি দেশের বেসরকারী উদ্যোগে বৃহত্তম শিল্প এলাকা। এ শিল্প এলাকায় বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। কোন প্রকার উচ্চতর প্রশিক্ষণ ছাড়াই চোখের মাপে এখানে নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের লঞ্চ কার্গো ও জাহাজ। যেগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন সাইজের নদী পথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করে থাকে। পুরাতন জাহাজ মেরামতকে কেন্দ্র করে বিগত ১৯৫৮ সালে ঢাকা সদরঘাটের উল্টো দিকে কেরানীগঞ্জে এ ডকইয়ার্ড শিল্প গড়ে উঠে। পানি বাহিত পরিবহন ব্যবসা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এ জাহাজ নির্মাণ শিল্পেরও প্রসার ঘটতে থাকে।

বর্তমানে এ সম্ভাবনাময় শিল্প এলাকায় ৬৫ থেকে ৭০টির মতো ডকইয়ার্ড রয়েছে বলে জানান কেরাণীগঞ্জ ডক ইয়ার্ড মালিক সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় শুভাঢ্যা ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মো.ইকবাল হোসেন। এখানে জাহাজ নির্মাণের জন্য ২০টি অত্যাধুনিক ওয়ার্কশপ রয়েছে। এসব ডকইয়ার্ডে প্রায় শতাধিক ঠিকাদার জাহাজ মেরামত ও নির্মাণের কাজে নিয়োজিত আছে। ডকইয়ার্ড মালিকরা মূলত পঞ্চাশের দশকে এখানে কাঠের জাহাজ ব্যবসা শুরু করে। তবে স্বাধীনতার পরপরই ডকইয়ার্ড শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে আধুনিকতার স্পর্শে এসে ষ্টীলের জাহাজ নির্মাণ শুরু করে। বর্তমানে এ ডকইয়ার্ডে বছরে বিভিন্ন সাইজের প্রায় শতাধিক যাত্রীবাহী ও মালবাহী জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে।

কোন বছর তারও অধিক জাহাজ কার্গো লঞ্চ নির্মিত হয়। প্রকার ভেদে এক একটি জাহাজ নির্মাণে খরচ পড়ে ৬০ লাখ টাকা থেকে সবোর্চ্চ সাত-আট কোটি টাকা পর্যন্ত। কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নারায়নগঞ্জ, খুলনা এবং বরিশালেও অনুরূপ ডকইয়ার্ড শিল্প এলাকা রয়েছে। তবে ডকইয়ার্ড মালিকরা জানান, ঢাকার কেরানীগঞ্জে এ ইয়ার্ড শিল্প এলাকাই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এ শিল্প এলাকাকে কেন্দ্র করে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ডক ইয়ার্ড শ্রমিক মো. আলম জানান, এখানে কাজ করে আমার সংসার ভালোই চলছে। প্রতিদিন ৫০০ টাকা হাজিরা পাই। নিয়মিত কাজ পাই। এখানে কাজ করতে করতে জাহাজ তৈরীর অভিজ্ঞতা হয়েছে। একজন অভিজ্ঞ শ্রমিক ১০০০ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকে।

জাহাজ তৈরীর ঠিকাদার মো. সেন্টু বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর এ কাজের সাথে জড়িত আছি। আমি যেকোন ধরনে জাহাজ তৈরী করতে পারি। একবার দেখে অবিকল জাহাজ তৈরী করতে পারি। মালিকের কাছ থেকে কন্টাকে জাহাজ তৈরীর কাজ নেই। জাহাজে ধরন অনুযাই সঠিক সময়ের মধ্যে তৈরী করে দেই। ডক ইয়ার্ড মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো.ইকবাল হোসেন বাসসকে জানান, এখানে গার্মেন্টসের চেয়ে বেশী লোক কাজ করে। কাজেই এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রমিক পাওয়া যায়। ফলে এখানে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরী তুলনামূলক ভাবে কম। এ শিল্পে কর্মরত মাষ্টার বা শ্রমিকদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই।

কাজ করতে করতেই তারা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হয়ে উঠে। তাই তিনি এটাকে শ্রমিক একাডেমি হিসেবেই মনে করেন। কারণ এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বহু শ্রমিক দেশের বাইরে গিয়ে বৈদেশিক রেমিটেন্স উপার্জন করছেন। তাছাড়া এ প্রাকটিকাল অভিজ্ঞতা দিয়েই তারা নতুন নতুন ডিজাইনের জাহাজ নির্মাণ করছে। নির্মাণাধীন জাহাজ গুলোর অধিকাংশ যন্ত্রাংশ এবং বডির ষ্টীলের সীড চট্টগ্রামস্থ ভাংগা জাহাজ থেকে সংগ্রহ করে সংযোজন করা হয়। অতঃপর জাহাজ নির্মাণের পর নতুন মেশিন জাহাজে লাগিয়ে জাহাজ চালানো হয় বলেও তিনি জানান। আকার ভেদে এক একটি জাহাজ নির্মাণ করতে ৬ মাস, আট মাস, ১২ মাস সময় লেগে যায়।

ক্ষেত্র বিশেষ দু’বছর সময় লেগে যায়। তবে জাহাজ নির্মাণে সময় নির্ভর করে নিয়োজিত শ্রমিকদের উপর। শ্রমিক বেশী হলে সময় কম লাগে আর শ্রমিক কম হলে সময় বেশী লাগে। নতুন জাহাজ নির্মাণের পর বিআইডবিউ টিএ কর্মকর্তাদের জানানো হয়। তারা আনুষ্ঠানিক ভবে পরিদর্শন করে জাহাজ চলাচলের অনুমতি পত্র সামুদ্রিক পরিবহন অধিদপ্তরে প্রদান করে। বর্ষার আগে মেরামতের কাজ বেশী হয়। তবে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ একযুগ ধরে বেশী হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান, তারা আরো বলেন, সরকার এ শিল্পের প্রতি নজর দিলে কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান