ক্যারিয়ারকে দীর্ঘায়িত করতে ফরম্যাট বেছে খেলবেন মুস্তাফিজ

ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে দীর্ঘায়িত করতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফরম্যাট বেছে খেলার ইচ্ছা পোষন করেছেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।

চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলতে বর্তমানে ভারতে আছেন মুস্তাফিজ। এবারের আসরে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলছেন তিনি। আইপিএল চলাকালীন নিজের ক্যারিয়ারের ভবিষ্যত নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানান মুস্তাফিজ।

তিনি জানান, ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে দীর্ঘায়িত করার জন্য ‘বেছে-বেছে’ তিন ফরম্যাটে ম্যাচ খেলবেন। এক্ষেত্রে টেস্টে খেলার কোন ইচ্ছা নেই তার। সাফল্যের বিবেচনায় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতেই ফোকাস দিয়েছেন তিনি।

২০১৫ সালের এপ্রিলে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন মুস্তাফিজ। এরপর একই বছরের জুনে ওয়ানডে ও জুলাইয়ে টেস্ট অভিষেক হয় তার। এই ৭ বছরের ক্যারিয়ারে ইতোমধ্যে ৭৪টি ওয়ানডে ও ৬৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ফিজ। কিন্তু টেস্ট খেলেছেন মাত্র ১৪টি। মুস্তাফিজের অভিষেকের পর ৩৯টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ তিন বছরে ২ টেস্টে ৩ উইকেট শিকার করেন ফিজ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন তিনি।

উইকেট শিকারের দিক দিয়ে রঙিন পোশাকে যতটা আলো ছড়িয়েছেন সাদা পোশাকে ততটা নয়। টেস্টে ৩৬ গড়ে ৩০ উইকেট, ওয়ানডেতে ২৩ গড়ে ১৩১ উইকেট ও টি-টোয়েন্টিতে ১৯ গড়ে ৮৭ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ।

তাই ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির সাফল্যে টেস্ট ক্রিকেটে ফোকাসটা কমই মুস্তাফিজুরের। দীর্ঘ ক্যারিয়ার বিবেচনায় নিজ থেকেই টেস্ট খেলার ইচ্ছা হারিয়েছেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকায় টেস্টে নেই ফিজ।

তিনি বলেন, ‘টেস্ট খেলার বিষয়ে বিসিবিকে আমার মনোভাব জানাবো। যদি বিসিবি আমার কাছে জানতে চায়, তাহলে আমি জানাবো। আমার অনেক সিনিয়র বিসিবির সভাপতির সাথে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে, কোন একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে তারা খেলবে কি-না এ বিষয় পরিষ্কার করেছে। আমি নিজেও বোর্ড সভাপতির সাথে কথা বলবো। এই বিষয়টি নিয়ে বেশ সচেতন সভাপতি। বিসিবি কখনও এই বিষয় (টেস্ট) নিয়ে আমাকে চাপ দেয়নি। এই মুর্হূতে বিসিবির সাথে আমার লাল বলের কোন চুক্তি নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার সুস্থ থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি বাংলাদেশ দলকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সেবা দিতে চাই, তাহলে ফিট থাকা গুরুত্বপূর্ণ এবং ফিট থাকার জন্য তিনটি ফরম্যাটের মধ্যে বাছাই করা সবচেয়ে ভালো উপায়। আমি আমার সাফল্য বিবেচনায় ফরম্যাট বেছে নিয়েছি। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে আমার সাফল্য বেশি (টেস্ট ক্রিকেটের চেয়ে)। এ কারণেই আমি এই দু’টি ফরম্যাটে ফোকাস করছি। বিশ্বে অনেক ক্রিকেটারই ক্যারিয়ারকে দীর্ঘয়িত করতে ফরম্যাট বেছে নিচ্ছেন। একটি দল গঠন করতে, একটি নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করা যায় না।’

মুস্তাফিজের মতে, সাফল্য পেতে হলে দুই ফরম্যাটের জন্য আলাদা পেস ইউনিট গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাকে পেলে পেস ইউনিটের শক্তি বৃদ্ধি করবে এমন চিন্তা করার পরিবর্তে, যদি আমরা ভাবি, লাল এবং সাদা বলের ফরম্যাটের জন্য আলাদা পেস ইউনিট করা যায়, যা আমাদের প্রয়োজন, তাহলে সেটি ভারসাম্যপূর্ণ হবে এবং পেস বোলাররাও ধারাবাহিকভাবে ভালো করবে।’

সাদা ও লাল বলের জন্য আলাদা পেস ইউনিট করলে নতুন খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে বলে জানান মুস্তাফিজ। তিনি বলেন, ‘আমরা জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে নতুন ক্রিকেটারদের সুযোগ দিতে পারি। আমরা যদি নতুন ক্রিকেটারদের সুযোগ না দেই, তবে তাদের কিভাবে উন্নতি হবে?’

মুস্তাফিজের জানান, অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করতেই আইপিএল খেলেন। তবে জাতীয় দলের দায়িত্বটাই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়।

তিনি বলেন, ‘আইপিএলের প্রতিটি দলই খুব শক্তিশালী এবং ১১ জন খেলোয়াড়ই বিশ্বমানের। এসব খেলোয়াড়দের সাথে খেললে, সবসময় আপনাকে কিছু শিখতে সাহায্য করবে। বিশ্বমানের খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের সাথে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেয়ার অভিজ্ঞতা আলাদা। তবে জাতীয় দলের চেয়ে আইপিএল বড় নয়। ২০২০ সালে আমি আইপিএলে খেলিনি, কারণ আমাদের শ্রীলংকা সফর ছিল (যা স্থগিত করা হয়েছিলো, পরে ২০২১ সালের এপ্রিলে খেলা হয়)। আমি সবসময় জাতীয় দলকে প্রাধান্য দিয়েছি।’ খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান