ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন

এসএমই ফাউন্ডেশন মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ম্যাক্রো,ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে ৩শ’ কোটি টাকা ঋণ দেবে।
করোনা-ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে ঝিমিয়ে অর্থনীতিকে বিবেচনায় নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশন, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধার ও ত্বরান্বিত করা এবং পল্লী-অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) মাঝে ৩শ’ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এরমধ্যে চলতি অর্থবছরের (২০২০-’২১) জুন-’২১ পর্যন্ত আবেদন পাওয়া স্বাপেক্ষে ১শ’ কোটি টাকার ঋণ এবং বাকী ২শ’ কোটি টাকার ঋণ আগামী অর্থবছরে (২০২১-’২২) বিতরণ করা হবে।
তবে, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এবার নারী-উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হবে। মোট ঋণের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করার বিষয়ে লক্ষ্যও নির্ধারন করা হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম আজ বৃহস্পতিবার টেলিফোনে বার্তা সংস্থা বাসস’র এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শতকরা ৪ ভাগ সুদে ঋণ প্রদানের সত্যতা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন, ইতোমধ্যেই ১১টি ব্যাংক ও ননব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করার মধ্যদিয়ে ৩ শ’ কোটি টাকা ঋণ বিতরণে ফাউন্ডেশনের গৃহীত উদ্যোগ চুড়ান্ত করেছে।
এছাড়াও, অতিসম্প্রতি এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদের ১২০ তম সভায়, ঋণ বিতরণে নীতিমালা ও নির্দেশিকা অনুমেদিত হয় বলেও এই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য,এসএমই ফাউন্ডেশনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, ব্র্যাংক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স এবং লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স।
মুহাম্মদ মোরশেদ আলম জানান, ১১টি ব্যাংক ও ননব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করলেও ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম থেমে নেই।
তিনি বলেন,প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনতে এসএমই ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।
এদিকে,মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসএমই ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরে হয়েছে। এতে জানানো হয়, করোনা মহামারীর কারণে গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, অতিক্ষুদ্র (মাইক্রো), ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে নিম্নবর্ণিত ক্যাটাগরির উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে প্রাধান্য বা অগ্রাধিকার দেয়া হবে ।
অগ্রাধিকার প্রাপ্তরা হচ্ছেন,সরকারের প্রথম দফা প্রণোদনার আওতায় যারা ঋণ পাননি, অগ্রাধিকারভুক্ত এসএমই সাব-সেক্টর এবং ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা, নারী-উদ্যোক্তা, নতুন উদ্যোক্তা অর্থাৎ যারা এখনো ব্যাংক ঋণ পাননি এবং পশ্চাদপদ ও উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম ও তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তা।
প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তারা শতকরা ৪ ভাগ সুদে ঋণ পাবেন। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ব্যাংকার ও ঋণ গ্রহীতার সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪টি সমান মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে।
ব্যাংকের চাহিদাকৃত ডকুমেন্টসহ ‘সম্পূর্ণ/পরিপূর্ণ ঋণ আবেদনপত্র’ ব্যাংকের নিকট দাখিলের পর ঋণ মঞ্জুর করে গ্রাহকের অনুকূলে বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। সাধারণভাবে একক ও যৌথ মালিকানাধীন উদ্যোগের অনুকূলে ঋণ বিতরণ করা হবে।
তবে প্রান্তিক পর্যায়ের কুটির ও ক্ষুদ উদ্যোক্তা, বিশেষ করে নারী-উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনার লক্ষ্যে ব্যাংকার ও গ্রাহকের মধ্যে সম্পর্কের পাশাপাশি উভয় পক্ষের ঐক্যমতের ভিত্তিতেও সর্বোচ্চ ৫জন উদ্যোক্তার অনুকূলে গ্রুপভিত্তিক ঋণ বিতরণ করা যাবে।