খাতা মূল্যায়নের পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ ছিল:শিক্ষামন্ত্রী

আগে উত্তরপত্র (খাতা) মূল্যায়নের পদ্ধতি খুবই ত্রুটিপূর্ণ ছিল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘নতুন পদ্ধতিতে নম্বর দেওয়ার কারণে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে অন্য বছরের চেয়ে বেশি ফেল করেছে।’ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার,৪ মে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।

এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দশ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত বছর গড় পাসের হার ছিলো ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এবার পাসের হার ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমেছে। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন। এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৫ হাজার জন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবার ফলাফল দেখে অনেকেই এমনকি আপনারাও কিছুটা বিস্মিত হতে পারেন। আমাদের ফলাফল দেখে মনে হবে অনেক বেশি ফেল করেছে কিংবা জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ইত্যাদি। বিস্ময় এ রকম হতে পারে যে আমাদের লেখাপড়া খারাপ হচ্ছে, ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় খারাপ করছে। কিন্তু বিষয়টা ঠিক এইভাবে নয়। আমরা এজন্য প্রস্তুত ছিলাম। কারণ জানি আমরা যে পদক্ষেপগুলো নিতে যাচ্ছি। তার প্রভাবে প্রথমদিকের পরীক্ষায় এভাবেই পড়তে পারে।’

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষায় খাতা দেখার রেওয়াজ অতীতকাল থেকে চলে আসছিল। তা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে ছিল। বোর্ড থেকে তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা খাতা নিয়ে যেতেন। সেই খাতা দেখে আবার জমা দিতে যেতেন। এখানেই শেষ। এটার কোন মনিটিরিং ছিল না। এর (খাতা মূল্যায়ন) কোন নিয়ম-রীতি আমাদের ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি উপলব্ধি করে গত ৩ বছর ধরে বিইডিইউ (বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট) ধরে কাজ করে। গবেষণা করে, বিভিন্ন জায়গায় খাতা দেখে, শিক্ষকরা কীভাবে খাতা মূল্যায়ন করে তা দেখে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয় তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।’
খাতা মূল্যায়নের পদ্ধতি খুবই ত্রুটিপূর্ণ ছিল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এর ফলে সত্যিকার অর্থে খাতা মূল্যায়ন করা হয় না। আমরা কিছুটা শিক্ষকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করেই খাতা মূল্যায়ন করি।’

‘উদাহরণ হিসেবে বলছি একটা খাতা বাছাই করে ২০টি কপি করে ২০ জন শিক্ষককে দেওয়া হল। দেখা গেল খাতায় ২০ ধরনের নম্বর দেওয়া হয়েছে। ১০ এর মধ্যে কেউ দিয়েছেন ৮, কেউ ৬, কেউ ৫, কেউ ৭ নম্বর। এমন তারতম্য হয়ে যাচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় শিক্ষকরা মোটামুটি দেখে অনুমান করে একটা নম্বর দিয়ে দেন। যখন দিতেন মনে করতেন না দেখে দিচ্ছি যা হোক একটা নম্বর দিয়ে দেই, হয়তো এমন হতে পারে। বা কম পেয়ে যেতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন মূল্যায়নের ফলে ছেলেমেয়েদের নম্বরের যে তারতম্য হয়ে যাচ্ছে এর প্রভাবে পড়ছে তার ফলাফলে।’

‘একজন হয়তো ভাল লিখেও কম নম্বর পেয়েছে। আবার কেউ ভাল না দিলেও বেশি নম্বর পেয়ে গেছে। এটা সত্যিকার অর্থে মূল্যায়ন নয় কিংবা যাচাই করে একজন শিক্ষার্থীকে আমার সঠিক ফলাফল দিতে পারছি না’ বলেন নাহিদ। তিনি বলেন, ‘এটা থেকে বেরিয়ে আসতে আমার প্রধান পরীক্ষকদের ওই মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রস্তুত করেছি, একটা ট্রেনিংও দিয়েছি। তাদের অধীনে যে পরীক্ষক তাদেরও সংক্ষিপ্ত ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। এবার পরীক্ষায় বাস্তবে প্রয়োগ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা অগ্রসর হই। পদক্ষেপ যখন আমরা নিতে গেছি তখন ভাল করে বুঝতে পারছি এটার একটা প্রভাব হয়তো আমাদের ফলাফলে পড়তে পারে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মানের সাড়ে ১২ শতাংশ খাতা বিভিন্ন জনকে দেখাইছি। খাতা দেখার পরে আমরা মিলিয়ে দেখছি যে ঠিক হচ্ছে কি হচ্ছে না। প্রধান পরীক্ষকের খাতা দেখার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের রাখছি যারা এটা মূল্যায়ন করবেন। যাতে দেখতে পারি তারা (প্রধান পরীক্ষক) ঠিক মতো খাতা দেখেছেন কীনা। তারা আগে মূল্যায়ন না করেই বলতেন মূল্যায়ন করেছি।’

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘সব পরীক্ষক চাপের মধ্যে ছিলেন যে তার খাতা আবার দেখা হতে পারে। এজন্য তাকে কঠোর পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। এবার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোন পরীক্ষকের ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ ছিল না। শতভাগ হয়ে গেছে এটা আমি বলছি না। সেই দিক থেকে বলা যায় বিরাট পরিবর্তন এখানে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটা দিক হলে পরীক্ষার পর প্রধান পরীক্ষকরা ও ভাল শিক্ষকরা বসে মোটামুটি উত্তরটা কি হওয়া উচিত, এর উত্তরটা সেটা তারা তৈরি করেন। বলা হচ্ছে এটা হচ্ছে সাধারণ উত্তর। এটাকে মানদণ্ড ধরে শিক্ষক নম্বর দেবেন। এর চেয়েও ভাল কেউ লিখতে পারে। এটা আমরা এবার কার্যকর করেছি। এজন্য এবার খাতা ভালভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।’

‘নতুন পদ্ধতিতে একই ধারায় নম্বর দেওয়ার কারণে তুলনামূলকভাবে অন্য বছরের চেয়ে বেশি ফেল করেছে। তবে এ বিষয়টি আমাদের কাছে কাম্য ছিল’ বলেন মন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া এবার প্রশ্নপত্র আগে আউট করে নিয়ে উত্তর লিখবার সুযোগ বলতে গেলে বাস্তবে এবার ছিল না। এটা এড়াতে শিক্ষকদের উপর আমাদের প্রচন্ড চাপ ছিল। অন্যায় সুযোগ নিয়ে নম্বর বেশি পাওয়ার চেষ্টাও বন্ধ করার বিষয়টিও ফলাফলে সামান্যে হলেও প্রভাবে পড়েছে।’
এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো, আলমগীরসহ শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

আজকের বাজার:এলকে/ এলকে/৪ মে,২০১৭