গরু পালনের ভিন্ন অভিজ্ঞতা স্বপনের

একটি গরু তার জীবদ্দশায় ২০টি বাচ্চা দেয়ার ঘটনা বিরল। এমনই বিরল ঘটনা ঘটেছিল হতদরিদ্র নগেন্দ্র নাথের পরিবারে। গরুটি নগেন্দ্র নাথের পরিবারের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল ঠিকই।

কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে ছেলে মেয়েদের মুখে ২ বেলা দু মুঠো ভাত তুলে দিতে একে একে ১৯টি বাছুরই বিক্রি করতে হয়েছিল তাকে। অনেক কষ্টে একটি বাছুর রাখতে পেরেছিলেন তিনি যেটি মা গাভীর মতই ২০টি বাচ্চা দিয়েছিল। এ গাভীর বাচ্চা গুলোর অধিকাংশই রাখতে পেরেছিলেন কারণ এরই মধ্যে ৩ ছেলে রবিন, স্বপন ও বিপুল কর্মক্ষম হয়ে উঠেছিল।

নগেন্দ্র নাথের ৮ সন্তানের মধ্যে ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে। বছর ৭ আগে নগেন্দ্রনাথ গত হয়েছেন। মারা যাবার পূর্বে গরু পালনের উপার্জিত অর্থে ৫ মেয়েকে পাত্রস্থ করে গেছেন। তার পালিত ঐ গরুর বংশ ধারা এখনও বর্তমান । বাড়ির আঙ্গিনায় গরুর খামারে ছোট বড় মিলিয়ে এখন ২২টি গরু আছে। ৩ ভাইয়ের মধ্যে গরুর খামার দেখা শুনার দায়িত্ব স্বপনের।

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বারবাজার ইউনিয়নের মাঝদিয়া গ্রামের স্বপন ঘোষের (৪৩) পরিবার গরু পালন করে দারিদ্রকে জয় করেছেন। ৩ ভাইয়ের যৌথ সংসারে এখন আর কোন অভাব অনটন নেই। স্বপন জানান, ২০০৬ সালে বাবা মারা যাওয়ার পূর্বে গরু পালনের অর্থ দিয়ে ১৫ বিঘা জমি কিনে গিয়েছেন। আর তারা ৩ ভাই বাবার মৃত্যুর পর আরো ৫ বিঘা জমি কিনেছেন গরু খামারের উপার্জিত অর্থ দিয়ে। তিনি জানান তার খামারের ২২টি গরুর জন্য ৫০০ টাকার ভূষি, ৩০০ টাকার খৈল, ৩০০ টাকার খড়, ৩০০ টাকার চালের খুদ ও অন্যান্য খরচসহ দিনে প্রায় ১ হাজার ৭০০ টাকা খরচ হয়।

এ হিসেবে মাসে প্রায় ৫১/৫২ হাজার টাকা খরচ হয়। অন্য দিকে দুধ ও গোবর সার বিক্রি করে খরচের প্রায় সিংহভাগ টাকা উঠে আসে। আর গাভীর বাছুর থেকে যায় লাভ হিসেবে । স্বপন জানান, সকল খরচ বাদে তার খামার থেকে প্রতি বছর ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা মুনাফা আসে।
তিনি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহয়তায় একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরী করছেন। রান্নার গ্যাসের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত করণ কার্যকরী সারও পাচ্ছেন। এ সার নিজের জমিতে ব্যবহারের পাশাপাশি অন্য কৃষকের কাছে বিক্রি করে বছরে ভালো মুনাফা পাচ্ছেন । তাদের দেখাদেখি গ্রামের বেশ কয়েকজন বেকার যুবক গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

আজকের বাজার: আরআর্/ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭