গাড়িবহর দেখে দৌড়, বাড়িতে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী দিলেন শেরপুরের ডিসি

জিপ, পিকআপ, কারসহ একসাথে কয়েকটি গাড়িবহর গলির রাস্তা দিয়ে ঢুকতেই দৌড়ে যে যার ঘরে চলে গেলেন। এরপর বাড়িতে ঢুকলেন জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মকর্তাদের দেখে ভয়ে ভয়ে বলে ওঠলেন, ‘স্যার আমি কিছু করি নাই। কাজ-কাম নাই। ঘর থাইক্কা (থেকে) বাইর অই না (হই না)। বাড়ির সামনেই দাঁড়াইছিলাম।’ জেলা প্রশাসক আশ্বস্ত করলেন, বললেন, ‘চিন্তার কিছু নেই। আপনারা বাড়ি থেকে বের হবেন না। নিয়ম মেনে ঘরে থাকুন। আমরা বাড়িতেই আপনাদের খাবার সামগ্রী পৌঁছে দেব ইনশাআল্লাহ।’

এসময় জেলা প্রশাসক তিন কেজি চাল এবং ডাল, তেল-সাবান, লবন-আলু, পেঁয়াজ-মরিচসহ বস্তাভর্তি খাদ্য সামগ্রী তুলে দিলেন। এসব খাদ্যসামগ্রী পেয়ে দারুণ খুশি শহরের নবীনগর এলাকার ভ্যানচালক ইদ্রিস মিয়া (৬৭)। তার মতোই খাদ্যসামগ্রী পেয়ে দরিদ্র গৃহকর্মী আছিয়া বেগম (৪৫), রশিদা বেগমসহ (৫৫) অন্যান্যরা খুব খুশি। ভ্যানচালক ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘আইজ (আজ) তিনদিন ধইরা (ধরে) কোনো কামাই রোজগার নাই। সবকিছু বন্ধ। আতে (হাতে) কয়ডা (কয়েকটা) টেহা (টাকা) আছিল, এর মধ্যেই সব শেষ। খুব চিন্তার মইদ্দে (মধ্যে) আছিলাম। ডিসি সাবের খাবার জিনিসগুলা পাইয়া মনে খুব শান্তি পাইলাম। এক-দুইবেলা কইরা খাইয়া ৫-৬ দিন চলুন (চলা) যাবো।’

রবিবার দুপুরে শেরপুর শহরের নবীনগর, শেরীপাড়া, নামা শেরীরচর, খোয়ারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবিএম এহছানুল মামুন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারুক আল মাসুদ, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. মিজানুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও (ইউএনও) বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কর্মহীন দরিদ্র-অসহায় মানুষের বাড়িতে চাল-ডাল, আটা, লবণ, তেল ও সাবান বস্তাভর্তি করে পৌঁছে দিচ্ছেন। খাদ্যসামগ্রী পেয়ে খুশি নিম্ন আয়ের কর্মহীন মানুষরা। সরকার এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতিও তারা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা হিসেবে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জেলায় দুই দফায় মোট ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার ৫ উপজেলায় ১১১ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই শনিবার বিকাল থেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান শুরু করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিতরণের সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ছাড়াও পিআইও, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও লোকসমাগম বন্ধ থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে দরিদ্র মানুষের মাঝে এসব খাদ্য বিতরণ শুরু করেছি। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’ সূত্র- ইউএনবি

 

আজকের বাজার/ শারমিন আক্তার