গেমস নতুন করে আয়োজনের কাজ শুরু করেছে জাপান

করোনভাইরাসের কারনে এক বছরের জন্য পিছিয়ে দেয়া হয়েছে ২০২০ টোকিও অলিম্পিক গেমস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া আসরের আয়োজক হিসেবে গত সাত বছর যাবত নিজেদের তিলে তিলে গড়ে তোলা জাপানের জন্য এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া মোটেই সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারীতে সারা পৃথিবী আজ যেখানে বিপর্যস্ত সেখানে জাপানের সামনে গেমস পিছিয়ে দেবার বিকল্প ছিলনা। যদিও কাল এই ঘোষনা দেবার পর থেকে নতুন করে আগামী বছর গেমস আয়োজনের জন্য উজ্জীবিত মানসিকতা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে জাপান অলিম্পিক কমিটি। ভেন্যু, নিরাপত্তা, টিকিট, বাসস্থান- কার্যত সব কিছু নিয়েই জাপানকে এখন নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে। শতভাগ প্রস্তুত থাকা দেশটির ব্যয়ভারও নি:সন্দেহে কয়েকগুন বেড়ে যাবে। এখনো নিশ্চিত নয় গেমস আদৌ কবে নাগাদ শুরু হতে পারে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) যদিও জানিয়ে দিয়েছে নতুন তারিখ অবশ্যই ২০২০’র পরে তবে তা ২০২১’র গ্রীষ্মের পরে নয়। জাপান সব সময় বলে আসছিল এই টোকিও গেমস হবে তাদের জন্য ‘রিকভারি গেমস’। বিশ্বেকে দেখিয়ে দেয়া তিনটি বড় দূর্যোগ থেকে তারা কিভাবে বেরিয়ে এসেছে। ২০১১ সালে বড় ধরনের ভূমিকম্প, সুনামি ও ফুকুশিমা নিউক্লিয়ার বিপর্যয়ে জাপান প্রায় অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। জাপনের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, ২০২০ টোকিও অলিম্পিক গেমস হবে বিশ্বকে নতুনভাবে ধ্বংস করে দেয়া ভাইরাস থেকে বেঁচে ওঠা মানুষের জন্য একটি পরীক্ষা। জাপান ও আইওসি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘এবারের গেমস হতে পারে কঠিন এই মুহূর্তে বিশ্ববাসীর জন্য নতুন একটি আশা’ আর অলিম্পিক মশাল হতে পারে টানেলের শেষে দেখতে পাওয়া এক বিন্দু আলোকরশ্মি যার মধ্যে বিশ^ তার বেঁচে থাকার শেষ আশাটুকু খুঁজে পাবে।’

করোনভাইরাসের কারনে পুরো বিশ্বক্রীড়াঙ্গন যেখানে থমকে গিয়েছিল সেখানে আইওসি তাদের গেমস আয়োজনের ব্যপারে অনড় অবস্থানে থেকে বেশ সমালোচিত হয়েছে। যদিও দেরীতে হলেও সারা বিশে^র এ্যাথলেট ও সংশ্লিষ্ট সকলের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত গেমস পেছানোর ঘোষনা দিতে তারা বাধ্য হয়। টোকিও গেমসে ১১ হাজারেরও বেশী এ্যাথলেটের সাথে প্রায় ৯০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণ করা কথা ছিল। এছাড়াও হাজার খানেক অফিসিয়াল ও বিশ্বজুড়ে সমর্থকরা তো রয়েছেই। গেমস পেছানোর দাবীতে গেমসে অংশ নেয়া প্রায় সব দেশের এ্যাথলেটরাই বেশ সোচ্চার ছিল। বিশেষ করে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছিল। ১২বারের অলিম্পিক পদকজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের তারকা সাঁতারু রায়ান লোচে বলেছেন, ‘বিষয়টি দিনদিনই অসহনীয় হয়ে পড়েছিল। আমি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলনের সুযোগ তৈরী করে নিয়েছিলাম। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বিষয়টা খুবই কঠিন। এই মুহূর্তে অলিম্পিকের থেকে অনেক কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পুরো বিশ্বই আজ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সমানভাবে লড়াই করে যাচ্ছে।’ সারা টোকিও জুড়েও প্রায় একইরকম অনুভূতি লক্ষ্য করা গেছে। পুরো প্রস্তুতি শেষ, সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে, ভেন্যুগুলো সময়ের আগেই তৈরী-অথচ সবকিছুই এক নিমিষে থমকে গেছে। অলিম্পিক রিংসগুলো উপরে উঠানো হয়েছে, মাস্কট শহরের সব বিলবোর্ডে শোভা পাচ্ছে, গেমস উপলক্ষে চালু হওয়া কমিউটার ট্রেনগুলো উদ্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই শহরের সব মানুষ আজ গৃহবন্দী। গেমস পিছিয়ে দেবার এই সিদ্ধান্তকে অধিকাংশ জাপানীজ গণমাধ্যমই স্বাগত জানিয়েছে। যদিও ডেইলি পত্রিকা টোকিও শিমবান বিষয়টিকে ‘বিস্ময়কর ও অস্বস্তিদায়ক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ডেইলি নিক্কেই বিসনেজ বলেছে, ‘দেখে মনে হচ্ছে গত সাত বছরের কষ্ট এক জায়গায় গিয়ে থেমে গেছে।’ বৃহস্পতিবার অলিম্পিক টর্চ রিলে ফুকুশিমা থেকে শুরু হবার কথা ছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আপাতত তা বন্ধ রাখা হয়েছে।

আয়োজকদের সামনে এখন বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উপস্থিত হয়েছে, ভেন্যুগুলো কি শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে, যারা টিকিট কিনেছে তাদের কি হবে, স্বেচ্ছাসেবকদের কিভাবে ধরে রাখা যাবে, ২০২১’এ ব্যস্ত ক্রীড়া সূচীতে কিভাবে অলিম্পিকের তারিখ পুন:নির্ধারিত হবে। হাজার হাজার হোটেল কক্ষের বুকিং বাতিল করতে হবে, এ্যাথলেট ভিলেজে নির্মিত ৪ হাজার সুসজ্জিত এ্যাপার্টমেন্টগুলো বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। গেমস উপলক্ষে জাপান সরকারের প্রায় ১২.৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। আবারো নতুন করে আয়োজনে এর প্রায় অর্ধেক অর্থ ব্যয় করতে হবে। জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৮২ বছর বয়সী ইয়োশিরো মোরি টোকিও ২০২০ আয়োজক কমিটির সভাপতি। ক্যান্সারে আক্রান্ত এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বলেছেন, ‘আমাদের হাতে কোন বিকল্প ছিলনা। তবে আশা এখনো জেগে আছে। আমি ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছি। তবে নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছি শুধুমাত্র অলিম্পিকের জন্যই। আপনারাও আমার সাথে এই স্বপ্নে বেঁচে থাকুন।’ তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/ আখনূর রহমান