গোপালগঞ্জের সিলনা এখন উচ্ছে গ্রাম নামেই পরিচিত

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সিলনা এখন উচ্ছে গ্রাম নামেই পরিচিত। এ গ্রামে প্রবেশ করলেই মাঠের পর মাঠ চোখে পড়বে সব মৌসমের প্রিয় সবজি করলা। স্থানীয় ভাবে এটাকে বলে উচ্ছে। যে দিকে চোখ যায় দেখা যায় উচ্ছের ক্ষেত। ‘উচ্ছে গ্রাম’ নামের সার্থকতা মেলে এখানে।

সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় শুধু সিলনা গ্রাম নয় গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কমবেশী এখন উচ্ছে চাষ করছেন কৃষকরা। এ এলাকার উচ্ছে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। আর দাম ভালো পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। করলা, উস্তে বা উচ্ছে সুপরিচিত এ সবজিটি বিভিন্ন নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিচিত। গোপালগঞ্জ এলাকায় এক নামে সবাই একে উচ্ছে বলেই চিনে। আর এ উচ্ছের চাষ করেই জেলার সদর উপজেলার সিলনা গ্রাম পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘উচ্ছে গ্রাম’ নামে।

গুয়াধানা গ্রামের অঞ্জু মজুমদার জানান, তাদের এলাকার কৃষকরা ধানের চেয়ে সবজির চাষ বেশি করেন। কারণ সবজিতে বিশেষ করে উচ্ছেতে লাভ বেশি। সিলনা ও গুয়াধানা গ্রামের প্রায় প্রতিটি চাষিই জমিতে উচ্ছে চাষ করেছেন। তেতো বলে অনেকেই উচ্ছে খেতে পছন্দ করেন না। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। তাদের পছন্দের তালিকার উপরেই আছে উচ্ছে।

অপর কৃষক আকরব হোসেন জানান, পুরো মাঠ জুড়ে সবুজ পাতা আর হলদে ফুলের মাঝে জড়িয়ে আছে বোল্ডার, বেগ্রী, মেস্কি ও স্থানীয় উন্নত জাতের উচ্ছে। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ এক সাথে উচ্ছে সংগ্রহের কাজ করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ব্যাপক। ফলন ভালো পেয়ে দিন দিন উচ্ছে আবাদের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

সিলনা গ্রামের কৃষক রিপন অধিকারী জানান, তাদের এলাকা তুলনামূলক উঁচু হওয়ায় বর্ষায় পানি কম ওঠে। তাই আগেই তারা উচ্ছের চাষ শুরু করতে পারেন। গুয়াধনা গ্রামের আরেক কৃষক পলাশ অধিকারী জানান, এবারে উচ্ছের কোনো রোগবালাই না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘাতে ফলন হয়েছে প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ। দামও তুলনামূলক ভালো। প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। উচ্ছে কেনাবেচায় সিলনা গ্রামে অস্থায়ী বাজারও গড়ে উঠেছে। উচ্ছের সাথে সাথে বেগুন, শশা এবং মিষ্টি কুমড়ার চাষও করছেন কেউ কেউ।

পাইকারি ব্যবসায়ী হরিপদ রায় জানান, তারা সিলনা-গুয়াধানা এলাকার জমি ও আড়ত থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে উচ্ছে কিনে জেলার বাইরে বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রি করেন। বিভিন্ন জেলায় এখানকার উচ্ছের ভালো চাহিদা থাকায় তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় জানান, জেলায় এ বছর ৪শ হেক্টরের বেশী জমিতে উচ্ছে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সিলনা ও গুয়াধানা গ্রামেই হয়েছে বেশি। উচ্ছের পাশাপাশি অন্যান্য সবজি চাষের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান