গ্রেনেড হামলা হয়েছিলো খালেদার অনুমোদনে এবং তারেকের পরিচালনায়

গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা যে রাষ্ট্রীয় মদদে হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার অনুমোদনে এবং তারেক রহমানের পরিচালনায় হয়েছে এটা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে সোমবার (২৪ আগস্ট) রাতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ ওয়েবিনার ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গিবাদের উত্থান’ বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা যদি বিশ্লেষণ করি তবে দেখা যায়, তৎকালীন জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে এই ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবেশ, একটি নব্য পাকিস্তান সৃষ্টির শুরুটা হয়েছিল ১৫ আগস্ট। তারই ধারাবাহিকতায় ১৫ আগস্টে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায় সেই পুরনো একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাস লালনের শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়, জিয়া ক্ষমতায় এসে ১৯৭৯ সালে পার্লামেন্টে সেটাকে আইনে রূপান্তর করেন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শুরুটা জিয়া পরিবারের রন্ধে রন্ধে বহমান, যার প্রমাণ ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত তার স্ত্রী বেগম জিয়ার বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং ২০০১-২০০৬ ক্ষমতায় থাকাকালীন তার ছেলে তারেক রহমানের জঙ্গিদের লালন-পালন ও আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।

তিনি বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা যে রাষ্ট্রীয় মদদে হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার অনুমোদনে এবং তারেক রহমানের পরিচালনায় গ্রেনেড হামলা হয়েছে এটা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট। বেগম খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় তখন জঙ্গিনেতা শায়খ আব্দুর রহমানের উত্থান হয়েছে, বাংলা ভাইয়ের উত্থান হয়েছে, ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা হয়েছে, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলাও এই খালেদা জিয়ার আমলেই হয়েছে। সবদিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যখনই জিয়া পরিবার ক্ষমতায় এসেছে তখনই রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাস লালন-পালন হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট একই সূত্রে গাঁথা। একটাকে বাদ দিয়ে আরেকটা সম্পর্কে বলা যাবে না। তারা মনে করেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই দেশে আর কোনো মানুষ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলবে না, কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। যখন তারা দেখলো তাদের এই আশা পূরণ হচ্ছে না, তখন তারা বঙ্গবন্ধুর সিপাহীশালার চার জনকে জেলখানায় হত্যা করে। তাদের হত্যা করার একটাই কারণ ছিল যে, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তারা স্বাধীনতার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন এরা যদি বেঁচে থাকেন তাহলে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা আবার গর্জে উঠবে। তারপর তারা বেছে নিলো বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার শরীরে প্রবাহিত তাদের যদি শেষ করতে না পারে তাহলে তাদের ইচ্ছা পূরণ হবে না। এ জন্যই শেখ হাসিনাকে মোট ১৯ বার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, সেদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার, আর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল হাওয়া ভবন, যা পরিচালনা করতেন তারেক রহমান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যে গ্রেনড হামলা হয়েছে তা একবারে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়নি, পর্যায়ক্রমে এর উত্থান ঘটেছে। ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার, সেদিন আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে বাড়িঘরে আগুন দেয়, ধর্ষণ করে, চিরদিনের জন্য আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক ধ্বংস করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তথা জঙ্গিবাদ।

প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন বলেন, এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই। গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, গ্রেনেড হামলা মামলার সাক্ষী মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন।

আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল ছাড়াও অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয় বিজয় টিভির পর্দায়, সময় টিভি, বিডি নিউজ২৪, বাংলা নিউজ২৪, বার্তা২৪, সমকাল, যুগান্তর, ইত্তেফাক, সারাবাংলা, ভোরের কাগজ, ঢাকা টাইমস২৪, জাগোনিউজ২৪ ও বাংলাদেশ জার্নালের ফেসবুক পাতায়। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান