চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ালো

চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৫ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হলে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৯০ জনে। একই সময়ে ৪ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গতকাল শুক্রবার নগরীর আটটি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ১ হাজার ৬০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন শনাক্ত ১৮৫ জনের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ১৩০ জন এবং তেরো উপজেলার ৫৫ জন। সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে হাটহাজারীতে ১৫ জন, রাউজান, সীতাকু- ও পটিয়ায় ৭ জন করে, ফটিকছড়িতে ৬ জন, মিরসরাই, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালীতে ২ জন করে এবং বাঁশখালী, চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়ায় ১ জন করে রয়েছেন। জেলায় মোট সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ৫০ হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৪০ হাজার ১৪৫ জন ও গ্রামের ৯ হাজার ৯৪৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত এক নারীসহ ৪ রোগীর মৃত্যু হয়। চার জনই নগরীর বাসিন্দা। এ মাসে ১৩৫ জন মারা যান। জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৫২৪ জন। এতে শহরের ৩৮৯ জন ও গ্রামের ১৩৫ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮১ জন। মোট আরোগ্যলাভকারীর সংখ্যা এখন ৩৬ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ৫ হাজার ১০৫ জন এবং হোম আইসোলেশেনে থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হন ৩১ হাজার ৩৭০ জন। হোম আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হন ২৭ জন ও ছাড়পত্র নেন ২০ জন। বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ৪৯২ জন।
সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি আজ বাসস’কে বলেন, ‘সংক্রমিতের সংখ্যা গত কয়েকদিন কমে এসেছে। এটা লকডাউনের সুফল। মানুষ তিন কারণে ঘর থেকে অপেক্ষাকৃত কম বের হচ্ছে। কারণ তিনটি হলো : লকডাউনে অধিকাংশ কর্মক্ষেত্র বন্ধ থাকা, রমজান ও অতিরিক্ত গরম। রাস্তাঘাটে জনসমাগম কম ঘটলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমবে। এছাড়া, মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার বিষয়ে সচেতনতা যতো বাড়ানো যাবে সংক্রমণ ততো কমবে।’
মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে সিভিল সার্জন বলেন, ‘বয়স্ক ও আগে থেকে অন্য রোগ ভুগতে থাকা মানুষ বেশি মারা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, এ ধরণের লোকজনের কোনো ধরণের উপসর্গ দেখা গেলেই দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। প্রয়োজন হলেই হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়া। কেননা রোগী ঘরে থাকলে সময়ের সাথে তার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। অনেক সময় যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন ডাক্তারদের করার কিছু থাকে না।’
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, গতকাল সবচেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে। এখানে ৪৮৬ জনের নমুনায় গ্রামের ১২ জনসহ ৫২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস থাকার প্রমাণ মিলে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৩৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় গ্রামের ১ জনসহ ১১ জন জীবাণুবাহক পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২১৪টি নমুনার মধ্যে গ্রামের ১১টিসহ ৪০টিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৫৬ জনের নমুনায় শহরের ১১ জন ও গ্রামের ২৪ জন করোনায় আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হন।
নগরীর বেসরকারি চার ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির মধ্যে শেভরনে ২০৩টি নমুনা পরীক্ষা করে গ্রামের ৪টিসহ ২২টি, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ১০৮টি নমুনায় শহরের ৭টি, মেডিকেল সেন্টারে ২৭টি নমুনার মধ্যে গ্রামের ১টিসহ ৫ টি এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ৩০টি নমুনায় গ্রামের ১টিসহ ১১টিতে করোনাভাইরাস চিহ্নিত হয়। চট্টগ্রামের ৬ জনের নমুনা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় একটি ছাড়া বাকী পাঁচটির নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। এদিন নগরীর একমাত্র বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএলে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট পর্যবেক্ষণে বিআইটিআইডি’তে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ, চমেকে ২ দশমিক ৯৪, সিভাসু’তে ১৮ দশমিক ৬৯, চবি’তে ২২ দশমিক ৪৩, শেভরনে ১০ দশমিক ৮৪, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৬ দশমিক ৪৮, মেডিকেল সেন্টারে ১৮ দশমিক ৫২, মা ও শিশু হাসপাতালে ৪০ শতাংশ এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে গতকালের ৪ জনসহ চলতি মাসে মোট মৃতের সংখ্যা ১৩৫ জন। এর মধ্যে করোনাকালের সর্বোচ্চ ১১ রোগীর মৃত্যু এবং সর্বোচ্চ ৫৪১ জন আক্রান্ত শনাক্তও এ মাসে।
এদিকে, এবার পাঁচ দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়েছে। সর্বশেষ ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রামে ২০৮ জনের নমুনায় ভাইরাস শনাক্ত হলে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৫ জনে। এর আগে ১৮ এপ্রিল ৪৭ হাজার অতিক্রম করে চার দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে। দুই দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট আক্রান্ত ৪৬ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৪ এপ্রিল। তিনদিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে ১২ এপ্রিল জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ২৯১ জনে। এর আগে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করেছিল ৯ এপ্রিল। এ সময়ে পরপর পাঁচবার তিনদিনে করোনা রোগীর হাজারপূর্ণ হয়। ৪৩ হাজার পার হয় ৭ এপ্রিল ও ৪২ হাজার অতিক্রম করে ৫ এপ্রিল। ২ এপ্রিল ৪০ থেকে ৪১ হাজারে যেতেও সময় লাগে ৩ দিন। অথচ, ৪০ হাজার পূর্ণ হয়েছিল ৩১ মার্চ, পাঁচ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে। ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছিল ২৬ মার্চ, তাও পাঁচ দিনে। এর আগে ৩৮ হাজার পূর্ণ হয় ২২ মার্চ, ছয় দিনে। ৩৭ হাজার পূর্ণ হয় ১৭ মার্চ, ৭ দিনে। ৩৬ হাজার পূর্ণ হয় ১০ মার্চ, ১০ দিন সময় নিয়ে। এর আগে ১ মার্চ ৩৫ হাজার পূর্ণ হয়। সে সময় এক হাজার পূর্ণ হতে ১৪ দিন লেগেছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৪ হাজার অতিক্রম করার সময় ১ হাজার পূর্ণ হয় ১৫ দিনে। ৩১ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১ হাজার পূর্ণ হয়ে ৩৩ হাজার অতিক্রম করে।