চট্টগ্রামে সাড়ে তিন মাসে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ

চট্টগ্রামে সাড়ে তিন মাসে করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সংখ্যা ও হার দু’ক্ষেত্রেই এ সময়ের মধ্যে একদিনের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। একই দিনে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ হাজার অতিক্রম করে। তবে জেলায় কোনো করোনা রোগীর মৃত্যু হয়নি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার ১ হাজার ৯৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৭২ জন পজিটিভ পাওয়া যায়। সংক্রমণ হার ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর আগে ২৯ নভেম্বর ১ হাজার ৪০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৯১ জন পজিটিভ পাওয়া যায়। সংক্রমণ হার ছিল ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সেদিন শনাক্ত রোগী ছিল চট্টগ্রামে তার আগের সাড়ে চার মাসের সর্বোচ্চ। সর্বশেষ এর চেয়ে বেশি সংক্রমণ হার পাওয়া যায় ১৩ ডিসেম্বর, ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
রিপোর্টে জানা যায়, নগরীর সাতটি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে নতুন শনাক্ত ২৭২ জনের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ২৩৪ জন এবং ১৩ উপজেলার ৩৮ জন। জেলায় মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ৩৮ হাজার ২৩ জন। সংক্রমিতদের মধ্যে ৩০ হাজার ১১৫ জন শহরের ও ৭ হাজার ৯৯৮ জন গ্রামের। উপজেলায় আক্রান্তদের মাঝে সীতাকু-ে ৬ জন, হাটহাজারী ও বোয়ালখালীতে ৫ জন করে, ফটিকছড়ি ও সাতকানিয়ায় ৪ জন করে, পটিয়া ও রাউজানে ৩ জন করে, রাঙ্গুনিয়া ও এবং মিরসরাইয়ে ২ জন করে এবং সন্দ্বীপ, লোহাগাড়া, আনোয়ারা ও চন্দনাইশে ১ জন করে রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চট্টগ্রামে কারো মৃত্যু হয়নি। ফলে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৩৮৩ জনই রয়েছে। এর মধ্যে ২৮১ জন শহরের ও ১০২ জন গ্রামের। সুস্থ্যতার ছাড়পত্র দেয়া হয় ৪০ জনকে। ফলে মোট আরোগ্যলাভকারীর সংখ্যা ৩৩ হাজার ৫৫২ জনে উন্নীত হলো। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ৪ হাজার ৫৬২ জন ও বাসায় চিকিৎসায় সুস্থ্য হন ২৮ হাজার ৯৯০ জন। হোম আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত হন ৩৫ জন ও ছাড়পত্র নেন ১০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১ হাজার ৮৪ জন।
উল্লেখ্য, গতকাল শনাক্ত জীবাণুবাহকের সংখ্যা ও হার সাড়ে তিন মাসে একদিনের সর্বোচ্চ। চলতি মাসে চারদিন সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা দুইশ’ ছাড়িয়ে গেল। এর মধ্যে ১৮ মার্চ চট্টগ্রামে ২১২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। সংক্রমণ হার ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ সময়ে কোনো করোনা রোগীর মৃত্যু হয়নি। গত বছরের ৭ ডিসেম্বরের পর একদিনে এটাই ছিল সর্বোচ্চ সংক্রমণ।
জানা যায়, করোনার প্রথম প্রকোপের সময় ৩০ জুন ছিল সে সময়ের সর্বোচ্চ ৪৪৫ জন আক্রান্ত। ১৬ জুলাই ৩৯৯ জন জীবাণুবাহক শনাক্ত হন। এ সময়ে ১ জুলাই ৩৭২ জন, ২৯ জুন ৩৪৬ জন, ৭ জুলাই ২৯৭ জন, ৮ জুলাই ২৯৫ জন এবং ৬ জুলাই ২৯২ জন ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়।
করোনার চলমান প্রকোপে এবার সবচেয়ে কম সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়। এবার সময় লাগে মাত্র ৬ দিন। এর আগে ৩৭ হাজার পূর্ণ হয় ১৭ মার্চ, ৭ দিনে। ৩৬ হাজার পূর্ণ হয় ১০ মার্চ, ১০ দিন সময় নিয়ে। এর আগে ১ মার্চ ৩৫ হাজার পূর্ণ হয়। সে সময় এক হাজার পূর্ণ হতে ১৪ দিন লেগেছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৪ হাজার অতিক্রম করার সময় ১ হাজার পূর্ণ হয় ১৫ দিনে। ৩১ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১ হাজার পূর্ণ হয়ে ৩৩ হাজার অতিক্রম করে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে হাজার পূর্ণ হওয়ার কাল। অথচ তার আগে ৯ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৩২ হাজার অতিক্রম করে গত ১৫ জানুয়ারি। আট দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ৬ জানুয়ারি। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলায় মোট শনাক্ত রোগী ৩০ হাজার অতিক্রম করে। ২১ ডিসেম্বর মোট আক্রান্ত ২৯ হাজার অতিক্রম করে। জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৪ ডিসেম্বর।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৮৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এখানে গ্রামের ৭ জনসহ ৫৭ জন জীবাণুবাহক চিহ্নিত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৫৪৪ জনের নমুনায় গ্রামের ১২ জনসহ ১০৯ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১২৬ জনের নমুনায় গ্রামের ৬ জনসহ ২০ জন আক্রান্ত শনাক্ত হন। নগরীর বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে ১২টি নমুনা পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়। এখানে গ্রামের ১ টিসহ ৮টিতে করোনার ভাইরাস পাওয়া যায়।
নগরীর বেসরকারি তিন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির মধ্যে শেভরনে ২৯৬ নমুনা পরীক্ষা করে গ্রামের ১১ জনসহ ৪৩ জন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৯৯ নমুনায় গ্রামের ১ জনসহ ২৮ জন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ২০ নমুনায় শহরের ৭ জন করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়।
এদিন চট্টগ্রামের ১৪ জনের নমুনা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় সবক’টিরই নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে বিআইটিআইডি’তে ৬ দশমিক ৮১, চমেকে ২০ দশমিক ০৩, সিভাসু’তে ১৫ দশমিক ৮৭, আরটিআরএলে ৬৬ দশমিক ৬৬, শেভরনে ১৪ দশমিক ৫৩, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ২৮ দশমিক ২৮ এবং আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৫ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।