চামড়া শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণের আহবান

১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে এসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন চ্যাং সাও তেছেং। ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম ইপিজেডে স্থাপন করেন জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পতেঙ্গা ফুটওয়্যার লিমিটেড। ছোট-বড় নানা সমস্যা মোকাবেলা করে এখন পর্যন্ত সফলভাবে কারখানা পরিচালনা করে আসছেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে আরো বিদেশী বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও প্রয়োজন রয়েছে। একই আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ও খাতসংশ্লিষ্ট বেসরকারি উদ্যোক্তারাও।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো (ব্লিস ২০১৭)’ বিষয়ক তিন দিনব্যাপী এক প্রদর্শনী আয়োজনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। ১৬-১৮ নভেম্বর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠেয় প্রদর্শনী উপলক্ষে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরো বেশি বিদেশী বিনিয়োগের আহবান জানান চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গুডস অ্যান্ড লেদার ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এলএফএমইএবি) যৌথভাবে ব্লিস ২০১৭-এর আয়োজন করছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি থেকে প্রদর্শনীটি উদ্বোধনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন মাইকেল শুলথেস, ফরেন ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক ক্রিশ্চান এওয়ার্ট ও পতেঙ্গা ফুটওয়্যার লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক চ্যাং সাও তেছেং।
সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালক ছিলেন এলএফএমইএবির সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম। তিনি বলেন, একক পণ্যভিত্তিক বাংলাদেশের রফতানি খাতকে আরো বৈচিত্র্যপূর্ণ করা প্রয়োজন। বিষয়টি অনুধাবন করেই চলতি বছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করেছে সরকার। নগদ প্রণোদনাসহ আরো নানা নীতিগত সুবিধাও ঘোষণা করা হয়েছে। পোশাক খাতের বিকল্প ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত হিসেবে এটি আরো সম্প্রসারণের সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে। প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণার ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের সোর্সিং শোর আয়োজন করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রদর্শনীটি বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইনে বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় সোর্সিং কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে। এতে আমরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ড, ক্রেতা, সোর্সিং এজেন্ট, রিটেইলার, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পসংশ্লিষ্ট বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এর মাধ্যমে তারা সরাসরি বাংলাদেশ থেকে পণ্য সোর্সিংয়ের সুবিধা ও বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
২০০৩ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশে কারখানা পরিচালনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে গিয়ে পতেঙ্গা ফুটওয়্যার লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক চ্যাং সাও তেছেং বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত খাতে আরো অনেক বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন সংযোগ শিল্প বা ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো অনেক দেশে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ কম করেছে। চীন থেকে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ এখনো রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, উৎপাদনের কাজে আমদানিকৃত চালান ছাড়করণে অনেক সময়ক্ষেপণ হয়। এটি খাতের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। বন্দর অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম আরো গতিশীল করার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানান তিনি।
শুভাশীষ বসু বলেন, মাত্র ছয়টি পণ্য থেকে বাংলাদেশের ৯৩ শতাংশ রফতানি আয় আসে। এ পরিস্থিতিতে রফতানি খাতকে বৈচিত্র্যময় করতে সরকার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোর্সিং প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বব্যাপী প্রচার হবে। সরকার খাতটিকে অনেক ধরনের নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে। এসব তথ্যও প্রচার পাবে, যার মাধ্যমে এ খাতে বিনিয়োগ আরো বাড়বে।
আজকের বাজার : সালি / ১৫ নভেম্বর ২০১৭