চীন গড়ছে বিশ্বের প্রথম বনজ নগরী

ছবি: স্টেফানো বোয়েরি আর্কিটেট্টি

বেইজিং অলিম্পিকের সময় বায়ু দূষণ এড়াতে রাজধানী শহর ও এর আশপাশের শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল। এইতো গেল বছর  চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নতুন নেতা নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত সম্মেলন উপলক্ষে বিশ্ববাসী চোখে দূষণ বিষয়টি এড়াতেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কয়েক বছর আগে তো বায়ু দূষণ বিষয়ক রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল বেইজিং শহরে। ওই সময় দু’ হাজার টাকায় এক বোতল অক্সিজেন কিনে প্রাণে বাঁচতে হয়েছিল নাগরিকদের।

শুধু বেইজিং নয়, রকেট গতিতে ঘুমন্ত ড্রাগনের অর্থনৈতিক উলম্ফন দেশটি জুড়ে ‘চীনের নব্য দুঃখ’ হিসেবে আর্বিভুত হয়েছে। তাই বলে ডাইনোসর আকৃতির বিপুল নির্মাণ যজ্ঞ থেকে একটুও পিছ পা হয়নি চীন।

কিন্তু মন দিয়েছে পরিবেশের দিকে। দূষণের এই জ্বালা আর প্রাণে সইছে না পেরে হয়তো বলছে, ‘ফিরিয়ে দাও অরণ্য, লও হে নগর।’ বাংলা এই পঙতিটি পড়েছি কি না, ঠিক জানা না গেলেও মর্মটা বেশ ভালো করে উপলব্ধি করতে পেরেছে চীন।

বিশ্বের প্রথম নগর-বনভূমি গড়ে তুলতে যাচ্ছে কনফুসিয়াস দার্শনিকের জন্মভূমি। দক্ষিণ চীনের গুয়াংচি পাহাড়ি রাজ্যের লিউজু এলাকায় লিউজিংয়াং নদীর তীর ঘেষে এই সবুজ নগরটি পত্তন করা হবে।

 

কয়েক বছরের মধ্যে তৈরি হতে যাওয়া এই শহরের ৩০ হাজার বাসিন্দাদের ঘর-বাড়ি বা থাকার ভবনগুলো ঢাকা থাকবে নানাবিধ উদ্ভিদে। কেবল থাকার জায়গা নয়, নগরের হোটেল, হাসপাতাল, অফিস, এবং স্কুলগুলো সবুজের অাচ্ছাদনে ঢাকা থাকবে। পুরো শহরটাকে সবুজের গালিচায় মোড়াতে ৪০ হাজার গাছ, এবং এক শত প্রজাতির ১০ লাখ উদ্ভিদ রোপন করা হবে।

 

লিউজু বন-নগরের এ সব উদ্ভিদ বছরের ১০ হাজার টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও ৫৭ টন দূষিত পদার্থ শোষণ করবে। অপরদিকে নগরবাসীর বুকটা ভরে ‍দিতে বাতাসে ছড়াবে ৯ শত টন বিশুদ্ধ অক্সিজেন।

 

দ্রুতগতির রেল ও সড়কের মাধ্যমে দেশের অপরাপর অংশের সাথে যুক্ত থাকবে নগরটি। এ ছাড়া, রাস্তায় চলবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। নগরটিতে থাকবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, এবং বিনোদনের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। আরও থাকবে দু’টি স্কুল ও একটি হাসপাতাল। বাসার তাপানুকুল ব্যবস্থা চলবে ভূ-তাপ ও ছাদে থাকা সৌর বিদ্যুৎ কোষে।

লিউজু মিউনিসিপ্যালটি আরবান প্ল্যানিং কর্তৃপক্ষের ত্ত্ত্বাবধানে পুরো নগরটির বিশদ নকশা তৈরি করেছে স্টেফানো বোয়েরি আর্কিটেট্টি। নকশ তৈরি করা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, উদ্ভিদের উপস্থিতি নগরের গড় বায়ু তাপ, হট্টগোল কমানোর পাশাপাশি বাড়াবে জীব বৈচিত্র্য।