জঙ্গি সম্পৃক্ততা: আহসানউল্লাহ’র শিক্ষকসহ আটক ৪

জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের (এবিটি) সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে নিখোঁজ আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক এ বি এম শহীদ উদ দৌলাহ ওরফে সোহেলকে (৩২) আটক করা হয়েছে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আহাদুল ইসলাম সাগর, জগলুল হক মিঠু ও মো. তোয়াসিন রহমান নামে আরও তিনজনকে আটক করা হয়। কিন্তু এই আটকের ঘটনার চারদিন আগে শহীদ গত ৪ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিরপুরের বাসায় ফেরার পথে নিখোঁজ হয়েছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছিল।

শহীদ উদ দৌলাহকে আটকের জন্য কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু অভিযানের সংবাদ পেয়ে তিনি পালিয়ে যান। পরে রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করে সিটি ইউনিট।

তার পরিবার জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই শহীদের ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজ নিয়ে সন্ধান না পাওয়ায় শুক্রবার বিকেলে তেজগাঁও থানায় একটি জিডি করেন তার বড় ভাই শফিক উদ দৌলা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় হওয়ায় শনিবার দুপুরে নতুন করে ওই থানায় আরেকটি জিডি করেন তিনি।

এ জিডির পর তদন্তে নামে থানা পুলিশ। শহীদ উদ দৌলাহ’র মোবাইলটি ট্রাক করা শুরু করে পুলিশ। নিখোঁজ হওয়ার আগে তার সর্বশেষ অবস্থান ছিল রমনা থানা এলাকায়। এরপরই তার মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্যই পায় পুলিশ। পরে তদন্ত কর্মকর্তারা কললিস্ট চেক করে দেখে তিনি নিখোঁজের দিন কার কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হামিদ রহমান খান জানান, তিন বছর ধরে শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ঘটনার দিন তিনি যথারীতি এসে ক্লাসও নিয়েছেন। শিক্ষকরা আসেন ক্লাস নেন চলে যান। পড়ানোর বাইরে কে কি করছেন এ সব দেখার সময়টা কই বলেন? তবে তার বিষয়ে কখনোই সন্দেহজনক কোনো তথ্য পাইনি। কারো মনে কিছু থাকলে, সেটা তো আর আমাদের জানার কথা না। পরে শুনেছি ক্লাস শেষ করে বিকেলে বাড়ি যাওয়ার পথে তিনি নিখোঁজ হন।

পরিবারে পক্ষ থেকে যিনি জিডি করেছিলেন নিখোঁজের বড় ভাই এবিএম শফিক উদ-দৌলা জানান, শহীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পাস করেন। ৩ বছর ধরে তিনি আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তাবলীগ জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি রাজনীতি করেন না। আর সন্দেহজনক কোনো কিছুই তার মধ্যে ছিল না।

এদিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আটক শহীদ, আহাদুল, জগলুল ও তোয়াসিনের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, দুটি নোটবুক, দুটি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট, একটি বই ওসামা বিন লাদেনের অনুবাদ গ্রন্থ ‘মানহাজের ব্যাপারে নির্দেশনা’ এবং একটি বই যা শাইখ আনোয়ার আল আওলাকি অনুবাদ গ্রন্থ ‘এ যুদ্ধ কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে’ উদ্ধার করা হয়।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আসামিরা দাওয়াতি শাখার পাশাপাশি ব্লগারদের হত্যার পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিল। তারা পলাতক জঙ্গি হাসান ওরফে রেজার মাধ্যমে ২০১৪ সালে সংগঠনে যোগদান করে বিভিন্ন জঙ্গি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছে। আহসানুল্লাহর ওই শিক্ষক গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে যান। তবে গত রাতে তিনি গ্রেফতার হন। আহাদুল, জগলুল ও তোয়াসিন কথিত জিহাদ শিখতে আফগানিস্তান যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় তারা সিরিয়ায় কথিত জিহাদ করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। সেখানে যাওয়ার আগে অধ্যাপক শহীদ তাদের আগে বিশ্বের কয়েকটি দেশ ঘুরে পাসপোর্ট ভারি করতে বলেন। শহীদ মূলত সংগঠক হিসেবে কাজ করতেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, শহীদই ওই তিনজনকে সিরিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া দায়িত্ব নিয়েছিল। তার সঙ্গে দেশের বাইরে থাকা এবিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে পারে। তবে কাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ তা নিশ্চিত করা যায়নি। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো যাবে।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৮ মে ২০১৭