জীবনযাত্রার মান বাড়াতে প্লাস্টিক পণ্য আনলো এসিআই

ড. এফ এইচ আনসারী : আপনি যদি খেয়াল করেন আমাদের মিশনের কথা তবে দেখবেন আমরা বলেছি বাংলাদেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে রেসপন্সিবল টেকনোলজি দিবো। রেসপন্সিবল টেকনোলজি মানেই হলো যে টেকনোলজি মানুষকে হেল্প করে, যে টেকনোলজিতে মানুষ কম্ফোর্ট পায়, যে টেকনোলজি সাসটেইনেবল হয়, যে টেকনোলজি পরিবেশের ক্ষতি করেনা।সে ক্ষেত্রে খুবই মজার বিষয় হলো আমরা কেনো প্লাস্টিকে আসলাম? বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে অবস্থান করছে । আমরা এখন অর্থনীতিতে উন্নতি করছি।মানুষের যেহেতু অবস্থার উন্নতি হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নতির কারনেই কিন্তু আমরা এই হিসাবটা করছি ।

অর্থনীতির উন্নতি হলেই কিন্তু মানুষ জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে ভালো আসবাবপত্র ব্যাবহার করবে, ভালো জায়গায় থাকবে, ভালো জিনিসপত্র ব্যাবহার করবে। তাই আমাদের এই প্লাস্টিক আসবাবপত্রের ব্যবসায় আসা।

যেখানে মানুষ কাঠের পিড়াতে বসে বা মাটির পাত্রে খাচ্ছে বা মাটির পাত্রে শাকসবজি রাখছে । সেখানে যদি আমরা সুন্দর রঙের এবং আকর্ষনীয় নতুন ডিজাইনের প্লাস্টিকের আসবাবপত্র দিতে পারি। আমাদের যে জায়গা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এসেছি তা অনেক শক্ত পরিশ্রমের ফল। তাহলে দেখা যাবে কিছুটা হলেও গ্রামের মানুষ নতুন কিছু দেখতে পারবে। তাই আমরা প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিতে পথ চলা শুরু করেছি। এখন হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে আমরা বলেছি রেসপন্সিবল টেকনোলজি নিয়ে আসবো, তাহলে প্লাস্টিক ইন্টারেকশন করা কতটা রেসপন্সিবল?

বর্তমান যুগে আসলে প্লাস্টিক ছাড়া কৃষি আগাবে না। যতো ভালো ভালো জায়গায় কৃষি ভালো হচ্ছে, নতুন নতুন ফসল হচ্ছে, নতুন টেকনোলজি আসছে সেখানে কিন্তু প্লাস্টিকের ইন্টারেকশন রয়েছে। যদি এমন হয় যেখানে ফসল করবেন সেখানে অতিরিক্ত গরম যা ফসলের ক্ষতি করবে, ফলে সেখানে প্লাস্টিকের সেড ব্যবহার করা যাবে।অথবা প্রচন্ড ঠান্ডা হলে সেখানে প্লাস্টিকের সেড ব্যাবহার করা যেতে পারে।

ছাদে প্লাস্টিকের পলিথিনের ভেতর মাটি দিয়ে গাছের চারা রোপন করে যেতে পারে। এখন বিষয় টা হলো প্লাস্টিক টা ব্যাবহার করার পর এটা কোথায় যাচ্ছে, এটা কি মাটিতে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করছে কি না? প্লাস্টিকটা দায়িত্বশীলভাবে ব্যাবহার করলে এবং ব্যাবহারের পর পূনঃপ্রক্রিয়াকরন করা গেলে সেটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে না। আর প্লাস্টিকটাও কিন্তু পরিবেশ থেকেই আসছে।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আমরা এখন অর্থনীতিতে অনেক ভালো করছি। পাশাপাশি আমাদের দেশে এখন তরুন জনসংখা বেশি। সুতরাং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সংসার হবে । ফলে চেয়ার- টেবিল থেকে শুরু করে নতুন নতুন অনেক আসবাবপত্র দরকার হবে। যার কারনে গাছ কেটে এইসব আসবাবপত্র তৈরি করতে গেলে আমাদের দেশের বনের পরিমান কমতে থাকবে। যা আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই আকর্ষনীয় রঙের প্লাস্টিকের ক্রোকারিজ, চেয়ার টেবিলসহ দরকারি সব আসবাবপত্র সময়উপযোগী এবং তরুনদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন ডিজাইনের প্লাস্টিক পন্য বাজারে নিয়ে আসবে। এসিআই’র প্লাস্টিক পন্য পুরনো হয়েগেলে সেটা পূনঃপ্রক্রিয়াকরনের মাধ্যমে আবার অন্যভাবে ব্যাবহার করা যাবে। ফলে এসিআই’র এই নতুন উদ্যোগ আমাদের দেশের পরিবেশকে রক্ষা করবে।

প্লাস্টিকে কিন্তু আমরা নতুন না। বছর দশেক আগে আমরা এই ইন্ড্রাস্টিতে এন্ট্রি নিয়েছিলাম এবং এটা একটা বড় ইন্ড্রাস্টি এবং আমরা খুব সাসটেনেবলভাবে এই ব্যবসাটা করছি। প্রফিটেবল একটা ব্যবসা। এদেশের অনেক বড় বড় কোম্পানি দেশি বিদেশি কোম্পানি সবাই কিন্তু সাথে আমাদের পার্টনার। আমরা তাদেরকে এই সমস্ত মেটারিয়াল সাপ্লাই দেই এবং বাংলাদেশে ২ বা ৩ শত এমন ফ্যাক্টরি আছে। আর আমরা ১০ বছর মাত্র এই ব্যবসাটা শুরু করি। এখানে অন্যান্য কোম্পানি ২০ থেকে ২৫ বছর আগে ব্যবসা শুরু করেছে। তারপরও কিন্তু আমরা বাংলাদেশে ১ নম্বর অবস্থানে আছি। আমরা কোয়ালিটির দিকে ভালো। কোয়ালিটি কন্ট্রোলের জন্য আমাদের নিজস্ব ল্যাবরেটরি আছে। যেটি এদেশের কারও নাই। এটি এমন একটি ল্যাবরেটরি যেখানে কোয়ালিটি কন্ট্রোলের জন্য যতটা যন্ত্রের দরকার সবগুলো দিয়েছি।

যে ফ্যাক্টরি আমরা স্টার্ট করেছি সেটি খুব ভালো মানের ফ্যাক্টরি রিসেন্টলি। ফুটেড কোয়ালিটির প্লাস্টিক প্যাকেজ সাপ্লাই দেওয়ার জন্য আমরাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে। এখন প্রশ্ন আসলো বাংলাদেশে তো অনেক কোম্পানি আছে তো এসিআই কেন আসলো? আমরা অপেক্ষা করছিলাম যে বাংলাদেশের ইকোনোমিক স্ট্যাটাসটা কোথায় যায়। যে মুহুর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতি ডেভলপিং কান্ট্রিতে স্টেপিং করেছে, সে মুহুর্তে আমরা বুঝতে পেরেছি একটা মানুষের মনের ব্যাথা।

এই দেশের ইয়াং জেনারেশন তার অন্তরের কথা আমরা বুঝতে পেরেছি। তারা চাই ভিন্ন ধরণের কিছু, কালারফুল কিছু। দেখতে বিদেশিদের মতো। আর আমাদের প্রোডাক্ট কিন্তু জেনারেল প্রোডাক্ট থাকবে না। এই সেগমেন্টে আমরা প্রোডাক্টটা দেবো এবং এই এক্সপেন্সে আমরা এইটা সাপোর্ট করব। লাভ হবে এই। এক দিকে যেমন আমাদের ইনকামিং ঠিক থাকলো, অন্যদিকে আমাদের ইয়াং জেনারেশনের নিডটা ফুলফিল হলো। সাথে সাথে আমরা একটা ভালো মার্কেট পাবো এবং প্রফিটেবল এরিয়া ধরার আশা করব। লাভ হবে এই। কাস্টমার হেপি হবে। আমরা হেপি হব এবং একটা সাসটেনেবল ব্যবসা হবে। যেটা কেউ করে নাই এই দেশে। সেই কাজটা আমরা করছি। আমাদের দেশে আমরা যদি একটা স্কেলের কথা বলি সেই স্কেলটা হবে এভারেজ পারক্যাপিটা প্লাস্টিকের ব্যবহার ৩ কেজি। যেখানে ভারতে হয় ৮-৯কেজি চীনে ৫০-৬০ কেজি আর আমেরিকাতে হয় ৯০ কেজি। এখান থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আমাদের মার্কেট এখনো অনেকটা ছোট।

আমাদের এই মার্কেটটা বড় করতে হবে। বাংলাদেশের যে নিড আছে তা যদি ফুলফিল করা যায়, সার্ভিস ঠিক থাকে, কোয়ালিটি কনসিসটেন্ট থাকে তাহলে আমাদের মার্কেট দ্রুত বেড়ে যাবে। আমাদের প্লাস্টিকের যে প্রোডাক্টগুলো তা মোস্টলি কিন্তু মধ্যবিত্ত বা নিন্ম মধ্যবিত্ত তারা ব্যবহার করে। আমাদের দেশে কৃষক কিন্তু কম না। আমাদের কৃষকের যা যা দরকার, বটিতে বসে যে শাক সবজি কাটবে তার জন্য পিড়ি দরকার। সেটাও আমরা সাপ্লাই করেছি। আর কিচেনের একটা সেল্ফ লাগবে সেটাও আমরা সাপ্লাই করেছি। বাসাতে যে সুন্দর কাপড়চোপড় রাখবে তার জন্য আমরা একটা আলমিরা বানিয়ে দিয়েছি প্লাস্টিকের।

শাক সবজি ধোয়ার জন্য যে একটা পাত্র লাগবে সেটা আমরা দিয়েছি এবং চাল ধোয়ার জন্য একটা পট দিয়েছি। টেবিলে সুন্দর একটা জগ দিয়েছি। আর খাবার যে রেখে দিবে, ছেলেমেয়েদেরকে খাবার সঙ্গে দিয়ে দিবে তার জন্য একটি টিফিন কেরিয়ার দিয়েছি। তার বাড়িতে ছোট একটা কোনাতে সোফা সেটের মতো চেয়ার টেবিল থাকবে সেটাও আমরা বানিয়ে দিয়েছি এবং অলমোস্ট তার যা দরকার সবই দিয়েছি। ঘরের মধ্যে ময়লা কাপড় রেখে দিবে সেই পাত্র আমরা দিয়েছি। একটা কৃষকের যা যা লাগবে তার সবকিছুই আমরা প্লাস্টিকে সংগ্রহ করেছি এবং আজকে দিনেও তারা সেগুলো পাচ্ছে। নিন্ম মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, কৃষক, শ্রমিক অথবা আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকজন, ছাত্রসহ সবার কথা আমরা চিন্তা করেছি। এর জন্য যে আমাদের খুব বেশি বিনিয়োগ করা লাগবে তা না। মার্জিনাল বিনিয়োগ।

এটা আলটিমেটলি এটা একটা উইনিট প্রাইজে হবে। কিন্তু তারা এক্সপেনশনকে সাপোর্ট করবে। ডিজাইন নিয়ে যদি বলার থাকে তারা তবে তা নিয়ে ভাববে। তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক আমরা আবার সংগ্রহ করে নিবো। তবে এই প্লাস্টিক দিয়ে যে আমরা ফার্নিচার বানাবো তা না। প্লাস্টিকটাকে আমরা সেনেটারি পাইপ বা অন্য কোনো কিছু বানাবো।

ভার্জিন প্লাস্টিক দিয়ে আমরা ফার্নিচার, ক্রোকারিজ, ফিকচার বানাবো। আর পরিবেশের স্বার্থে আামরা সেটা কালেক্ট করে নিবো। সেটা দিয়ে আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে লাগে এমন প্লাস্টিক বানিয়ে নিবো। আমরা প্রথমে যেটা টার্গেট করেছি, আমরা ছোট বাচ্চাদের কথা ভেবেছি। ছোট ছোট বাচ্চারা বড় হয়। তা কী করে? তারা কাঁদা মাটিতে গড়াগড়ি করে। তারা যখন দেখে, টেলিভিশন খুললে দেখতে পায়, একটা বাড়িতে একটা ফ্যামিলিতে একটা ছোট বাচ্চা কতো সুন্দরভাবে খেলনা দিয়ে খেলছে। একটা ছোট সাইকেল কিংবা একটা ছোট মিনিবাস দিয়ে খেলছে। আমরা প্রথমেই কিন্তু একটা মিউজিক্যাল সাইকেল দিয়েছি। যার কোয়ালিটি দেখলে অবাক হওয়ার মতো।

মনে হবে যেন এটা আমেরিকা বা জাপান থেকে এসেছে। সেটা আমরা চেষ্টা করেছি। সাথে সাথে আরো যে বেসিক খেলনা আছে তা আমরা দিয়েছি। ছোট বাচ্চা, গৃহবধূ, বৃদ্ধ মানুষ, যারা কিচেনে কাজ করে, ইয়াং জেনারেশন সবার জন্য যা দরকার পুরো ম্যাচিং করে আমরা সবকিছু আনার চেষ্টা করেছি।

ড. এফ এইচ আনসারী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
এসিআই এগ্রিবিজসেন।

রাসেল/