টাইগারদের অসাধারণ জয়:র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয়ে বাংলাদেশ

অসাধারণ এক জয় দিয়ে টাইগাররা ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষ করেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট হাতে রেখে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। বুধবার ২৪ মে আয়ারল্যান্ডের মাঠে উল্লাসে মেতেছে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী্। দেশের ক্রিকেট ভক্তদের আনন্দও কম নয়।

যদিও তিন দেশের ওই সিরিজের ভাগ্য আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই শিরোপা নিশ্চিত করেছিল নিউজিল্যান্ড। শেষ ম্যাচটি অনেকাংশে ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। তাই বলে প্রাপ্তিও কম নয়। বেশ কিছু অর্জন হয়েছে আজকের ম্যাচের মধ্য দিয়ে। এই জয়ের ফলে র‍্যাঙ্কিং এ বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ স্থান নিশ্চিত হয়েছে। ফলে আগামী বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে পারবে টাইগাররা। এই প্রথম বাংলাদেশ দেশের বাইরে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে।

সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করে ২৭০ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশকে ২৭১ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। তবে এত বড় টার্গেটের সামনেও এতটুকু ভেঙ্গে পড়েনি টাইগাররা। বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে ব্যাট করে ৪ বল বাকী থাকতেই জয় নিশ্চিত করে ফেলে। মূলত চারজনের ব্যাটে ভর করে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। এদের মধ্যে তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমান ৬৫ রান করে করেন। মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ ৪৬ আর মুশফুকুর রহমীম করেন ৪৫ রান।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বড় স্কোরের আভাস দিলেও নিউজিল্যান্ড খুব বেশিদূর এগুতে পারেনি। বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে। প্রথমে নাসির হোসেন, এর পর সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি মুর্তজার জোড়া আঘাতে প্রতিপক্ষকে ৮ উইকেটে ২৭০ রানে বেধে দেয় বাংলাদেশ।

এ জুটির অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন কিউই বোলাররা। আস্তে আন্তে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ১০ বল বাকি থাকতেই দলকে দারুণ এক জয়ে পৌঁছে দেন তারা। ৪৫ বলে ৪৫ করে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। অন্য দিকে ৩৬ বলে ৪৬ রানের দারুণ ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন রিয়াদ।

এদিন টসে জিতে কিউদের ব্যাট করতে পাঠান মাশরাফি। সকালের সীম কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়াই ছিল অধিনায়কের পরিকল্পনা।

শুরুতে মোস্তাফিজ (রনচি ২) ব্রেক থ্রু এনে দিলেও অনেকগুলো ক্যাচ মিসের মাশুল দিতে হয়েছে টাইগারদের। তিন তিন বার জীবন পান নাথাম।প্রথম ওভারেই বিদায় হয়ে যেতে পারত টম ল্যাথামের। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে ওঠা সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন নাসির হোসেন। যার মাশুল গুণতে হয় । ধেই ধেই রান তুলতে থাকে নিউজিল্যান্ড।

১৪তম ওভারের পঞ্চম বলে ফের ক্যাচ তুলে দেন ল্যাথাম। এবারও মিস। অল্পের জন্য ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। ২৬তম ওভারের শেষ বলেই উইকেট পেতে পারতেন ক্যাচ ড্রপ করা নাসির। কিন্তু লং এক্সট্রা কাভারে ওঠা নাথামের ক্যাচটি ড্রপ করেন সৌম্য। অবশ্য পরের ওভারেই উইকেটের স্বাদ পান ৭ মাস পর দলে ফেরা অলরাউন্ডার নাসির।

দারুণ খেলতে থাকা নেইল ব্রুমকে তিনি ফেরান ৬৩ রানে। ব্রুম-নাথাম জুটি মহা চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের জন্য। তিন বার জীবন পাওয়া নাথাম এগুচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু নিজের পরের ওভারেই নাথামকে বোল্ড করেন নাসির। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জোড়া আঘাতে একাদশে ফেরার যথার্থতা প্রমাণ করেন তিনি।

আউট হবার আগে অবশ্য কাজের কাজটি করে যান নাথান। ৮১ বলে খেলেন ৮৪ রানের মূল্যবান ইনিংস। ব্রুম-নাথানের পর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ান টেলর- অ্যান্ডরসন জুটি। দ্রুত রান তুলছিলেন এ জুটিও। ২৪ রানে অ্যান্ডরসন ও সান্টনারকে শূন্যতে ফিরিয়ে রান তোলার গতি কিছুটা হলেও মন্থর করেন সাকিব।

এরপর মাশরাফি ঝলক। অসাধারণ বোলিং করে পরপর দুই উইকেট নিয়ে স্বস্তি এনে এ বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্রথমে তিনি ফেরান নিশামকে,৬ রানে। মাশরাফির পরের শিকার কলিন মোনরো। মাশরাফি তোপে মাত্র ১ রান করতে পেরেছেন মোনরো। শেষ পর্যন্ত ২৭০ রানে থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি, সাকিব, নাসির দুটি করে উইকেট নেন। মোস্তাফিজ ও রুবেল পান একটি করে উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারে ২৭০/৮ ( নাথান ৮৪, রনচি ২, ব্রুম ৬৩, অ্যান্ডারসন ২৪, টেলর ৬০, নিশাম ৬, সান্টনার ০, মনেরো ১ ; মাশরাফি ২/৫২ , মোস্তাফিজ ১/৪৬, সাকিব ২/৪১ , নাসির ২/৪৭, রুবেল ১/৫৬)

বাংলাদেশ ওভারে ৪৮.২ ওভারে ২৭১ /৫ ( তামিম ৬৫, সৌম্য ০, সাব্বির ৬৫, মোসাদ্দেক ১০, মুশফিক ৪৫*, সাকিব ১৯, মাহমুদ উল্লাহ ৪৬* ; প্যাটেল ২/৫৫ )

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ২৪ মে ২০১৭