টাইব্রেকারে ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

উত্তেজনাপুর্ন ম্যাচে টাইব্রেকারে ব্রাজিলকে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ক্রোয়েশিয়া। আজ দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া পেনাল্টিতে ৪-২ গোলে ব্রাজিলকে পরাজিত করেছে। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোল শুন্য ড্র হবার পর অতিরিক্তি ৩০ মিনিটে ১-১ গোলে ড্র থাকায় টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হয়েছে ম্যাচের ফলাফল।
অতিরিক্ত সময়ে নেইমারের দেয়া গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি পাঁচ বারের বিশ^ চ্যাম্পিয়নদের। অতিনিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিটে নেইমারের চমক দেখানো গোলে ব্রাজিল এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে গোলটি পরিশোধ করে দেন ব্রুনো পেটকোভিচ। ফলে টাইব্রেকারে যায় ম্যাচটি। আর টাইব্রেকারে অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে জয়লাভ করে ক্রোয়েশিয়া।
বিজয়ী ক্রোয়েশিয়ার হয়ে প্রথম চারটি পেনাল্টিতে গোল করেছেন যথাক্রমে নিকোল ভøাসিচ, লোভরো মায়ের, লুকা মড্রিচ ও মিসলাভ ওরসিচ। এদিকে ব্রাজিলের হয়ে কাসেমিরো ও পেড্রো গোল করলেও ব্যর্থ হয়েছেন রডরিগো ও মারকুইনহোস।
দক্ষিন কোরিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলর ম্যাচের অপরবির্তিত একাদশটি আজ মাঠে নামিয়েছিলেন ্রাজিলীয় কোচ তিতে। অপরদিকে জাপানের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয় পাওয়া একাদশে দুটি পরিবর্তন আনেন ক্রোয়েশিয় কোচ জøাটকো ডালিচ। অসুস্থতার কারনে জাপানের বিপক্ষে খেলতে ব্যর্থ হওয়া ডিফেন্ডার বোনা সোসার সঙ্গে একাদশে ফিরেন মারিও পাসালিচ। ৪৪হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত চলতি আসরের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের শুরুতে আক্রমনে যায় ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে মিডফিল্ডার মাতেও কোভাচিচ বল নিয়ে ব্রাজিলীয় সীমানায় ঢুকে পড়লে তাকে ব্রাজিলের রক্ষণভাগ অবৈধভাবে ফেলে দিলে ফ্রি কিক পায় ক্রোয়েশিয়া। তবে সেখান থেকে কোন সুবিধাই আদায় করতে পারেনি তারা।
তবে প্রতিআক্রমনে করতেও দেরি করেনি ব্রাজিল। ম্যাচের ৬ষ্ঠ মিনিটে ক্রোয়েশিয় গোল রক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচের পরীক্ষা নেন ব্রাজিলীয় উইঙ্গার ভিনিসিয়াস জুনিয়র। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে গিয়ে বাঁকানো শট নেন তিনি। তবে কোন বিপদই ঘটতে দেননি ক্রোয়েশিয় গোল রক্ষক।

ম্যাচের ১২তম মিনিটে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ক্রোয়েশিয়া ডি বক্সে গিয়েও খেই হারান রাফিনহা। ১৫ মিনিটে প্রতিআক্রমন থেকে ডান প্রান্ত দিয়ে ব্রাজিলীয় সীমানায় ঢুকে মারিও পাসালিচ ক্রস করলে সময় মতো পোস্টের সামনে গিয়েও বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন দুই সতীর্থ আন্দ্রে ক্রামারিচ ও ইভান পেরিসিচ।

২২তম মিনিটে ভিনিসিয়াস ও রিচারলিসন বল আদান প্রদান করতে করতে ক্রোয়েশিয় সীমানায় ঢুকে পড়ে। রিচার্লিসন পোস্টে শট নিলেও বিশ^ সেরা ক্রোয়েশিয় গোল রক্ষককে পরাজিত করতে জন্য সেটি যথেষ্ঠ ছিলনা। বেশ সহজেই বল গ্রিবে পুরে নেন তিনি। এ পর্যায়ে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। এ সময় তাদের নিয়ন্ত্রনে ছিল ৬০ শতাংশ।
৩০ মিনিটে রাফিনহা বল নিয়ে দ্রুত ক্রোয়েশিয় সীমানার দিকে যাওয়ার পথে তাকে ফাউল করেন মার্সেলো ব্রোজোভিচ। কিন্তু বক্সের বেশ বাইরে থেকে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে খুব একটা সুবিধা আদায় করতে পারেনি তিতের শিষ্যরা।

ম্যাচের ৪৩ তম মিনিটে বিপজ্জনক এলাকায় ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। এ সময় ভিনিসিয়াস বাঁ প্রান্ত দিয়ে ডি বক্সে প্রবেশের মুখে তাকে ফেলে দেন ব্রোজোভিচ। ফলে ফ্রি কিকের নির্দেশ দেন রেফারি। ডি বক্সের বাঁ প্রান্তের লাইন থেকে নেইমারের নেয়া ডান পায়ের বুলেট গতির শটের বলটি বেশ দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রনে নেন ক্রোয়েশিয় গোল রক্ষক লিভাকোভিচ। এরপর কোন পক্ষই যুতসই আক্রমন রচনা করতে পারেনি। ফলে
গোলশুন্য ড্রয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।
উল্লেখ্য এর আগে চারবারের মোকাবেলায় কোনবারই ক্রোয়েশিয়ার কাছে হার মানেনি ব্রাজিল। তিনটিতে জয় ও একটিতে ড্র করেছিল তারা। বিশ^কাপের দুই ম্যাচেই জয়লাভ করেছে ব্রাজিল। ২০০৬ সালে ১-০ এবং ২০১৪ সালে ৩-১ গোলে জয়লাভ করেছিল দক্ষিন আমেরিকার দলটি।
বিরতির পর আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠে ব্রাজিল। ৫০তম মিনিটে দারুন এক আক্রমনের সময় ক্রোয়েশিয় পেনাল্টি বক্সে বল হাতে লাগে জোসিপ জুরানোভিচের। সেটি পেনাল্টি কিনা দেখার জন্য ভিএআর চেকের আবেদন উঠে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ভাবে হাতে লাগায় পেনাল্টির সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকেন রেফারি।
এর পরপর আরো কয়েকদফা আক্রমন চালায় ব্রাজিল। ৬৫ মিনিটে রডরিগো, ৬৭ মিনিটে নেইমার এবং ৬৯ মিনিটে কাসেমিরোর আক্রমন দক্ষতার সঙ্গে রুখে দেয় ক্রোয়েশিয় রক্ষনভাগ। ৭২ ও ৭৯ মিনিটে রডরিগো ওয়ান অন ওয়ান পজিশনে গিয়েও পরাস্ত করতে পারেননি ক্রোয়েশিয় গোল রক্ষক লিভাকোভিচকে। এছাড়া ৭৭ মিনিটে বক্সের মধ্যে নেইমারকে দারুন এক পাস দিয়েছিলেন রিচারলিসন। এবারো দ্রুত এগিয়ে এসে নেইমারকে শট নিতে দেননি লিভাকোভিচ। তিনি একাই লড়ে গেছের ব্রাজিলীয় আক্রমনের বিপক্ষে। ৮১তম মিনিটে বক্স থেকে লুকাস পাকুয়েটার জ্ড়োালো শটের বলটিও গ্রীবে পুরে নেন ক্রোয়েশিয়ার এই গোলরক্ষক। এতে হতাশা আরো বাড়তে থাকে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন শিবিরে। চার মিনিটের ইনজুরি টাইমে সাঁড়াশি আক্রমন চালিয়েও গোলের দেখা পায়নি ব্রাজিল। ফলে গোলশুন্য ড্রয়েই শেষ হয় নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের ইনজুরি (১০৫+১) নিজের তারকা খ্যাতি প্রমান করেন নেইমার। ডি বক্সের বাইরে থেকে প্যারিস সেন্ট জার্মেইর (পিএসজি) এই তারাক সতীর্থ পাকুয়েটার সঙ্গে বল আদান প্রদানের মাধ্যমে ক্রোয়েশিয় বক্সে ঢুকে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে তাদের গোল রক্ষককে ডজ দিয়ে বেশ ঠান্ডা মাথায় দুরূহ কৌনিক শটে বল জালে জড়ান (১-০)। নেইমারের ওই আক্রমনটি মনে করিয়ে দেন ব্রাজিলীয় মহাতারকা পেলেকে। সেই সঙ্গে ওই গোলের মাধ্যমে পেলের সামন বিশ্বকাপে সাত গোলের মালিক বনে যান নেইমার। গোলটির পরপরই অতিরিক্ত সময়ের বিরতির বাঁশি বাজান কর্তব্যরত রেফারি।
বিরতি থেকে ফেরার পরও ক্রোয়েশিয়ার উপর চাপ অব্যাহত রাখে ব্রাজিল। আরো কয়েকটি আক্রমন চালায় তারা। তবে শ্রোতের বিপরিতে গিয়ে ১১৭ মিনিটে প্রতিআক্রমন চালিয়ে গোলটি পরিশোধ করে দেয় ক্রোয়েশিয়া। মিসলাভ ওরসিচের কাছ থেকে বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল পেয়ে ছোট ডি বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন বদলি হিসেবে আসা ব্রুনো পেটকোভিচ (১-১)।
ফলে টাইব্রেকারেই নিস্পত্তি হয় ম্যাচের ফালফল। পেনাল্টিতে ৪-২ গোলে ব্রাজিলকে পরাজিত করে ক্রোয়েশিয়া।
উল্লেখ্য সর্বশেষ আটটি বিশ^কাপেই কমপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে ব্রাজিল। অপরদিকে বিশ^কাপের সর্বশেষ চার আসরের নকআউটে ক্রোয়েশিয়া জয়লাভ করেছে অতিরিক্ত সময়ে খেলে। একবারো ৯০ মিনিটে জয়লাভ করতে পারেনি তারা। তবে পেনাল্টিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে।