টানা নবম বাজেট ঘোষণা করবেন মুহিত

‘উন্নয়নের মহাসাগরে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হবে। দেশের ৪৬তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট এটি। আজ ১ জুন বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় জাতীয় সংসদে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা নবম বার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তিনি।

এর আগে টানা ৬ বার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বাজেট পেশের রেকর্ড গড়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এস.এ.এম.এস. কিবরিয়া। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছর থেকে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ৬টি বাজেট পেশ করেছিলেন তিনি। এস.এ.এম.এস. কিবরিয়ার সেই রেকর্ড ২০১৫-১৬ অর্থবছরে টপকে যান বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবুল মাল আবদুল মুহিতই প্রথম অর্থমন্ত্রী; যিনি টানা ৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত ৮টি বাজেট পেশ করেছেন তিনি। এর আগে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছিলেন মুহিত।

সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দেওয়ার দিক থেকে এখনও এগিয়ে রয়েছেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। মোট ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন তিনি। বেশিবার বাজেট ঘোষণার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত; নিজের একাদশ বাজেট ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন তিনি। আর ৬টি বাজেট ঘোষণা করে তৃতীয় স্থানে আছেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস. কিবরিয়া।

প্রসঙ্গত, ১৯৩৪ সালে সিলেটের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা তিনি।

পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন মুহিত। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের তৃতীয় সন্তান তিনি। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরী বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

ছাত্রজীবনে অত্যন্ত উজ্জ্বল ও মেধাবী ছিলেন মুহিত। ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে তৎকালীন সারা প্রদেশে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এমএ পাস করেন তিনি। চাকরিরত অবস্থায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন মুহিত।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগদানের পর জনাব মুহিত তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার, পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চিফ ও উপসচিব থাকাকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বৈষম্য বিরাজমান ছিল তার ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংবিধানের বাধ্যবাধকতা পালনে পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এটিই ছিল এবিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন। ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন মুহিত। অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় সুপরিচিত একজন ব্যক্তি তিনি।

১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরামর্শক হিসেবে ফোর্ড ফাউণ্ডেশন ও ইফাদে কাজ শুরু করেন মুহিত। ১৯৮২ সালের মার্চ থেকে ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীকালে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছিলেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে উড্রো উইলসন স্কুলে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন।

লেখক হিসেবেও সমান পারদর্শী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনৈতিক সমস্যা বিষয়ক গ্রন্থসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার খেলা বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের একজন পথিকৃৎ এই রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এবং এর পূর্বসুরি ‘পরশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি।

আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্ত্রী সৈয়দ সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা বেগম সামিনা মুহিত একজন ব্যাংকার এবং মুদ্রানীতি ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিউইয়র্কে; বড় ছেলে সাহেদ মুহিত স্থপতি ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। ছোট ছেলে সামির মুহিত টেক্সাসের হিউস্টনে শিক্ষকতা করছেন।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১ জুন ২০১৭