টিকার নিবন্ধন করেও যারা মেসেজ পাননি, তাদের কী হবে?

করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে দেশে চলছে গণটিকা কর্মসূচি। মানুষের মধ্যে টিকা সম্পর্কে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জানা গেছে টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করার পরে এখন অপেক্ষায় রয়েছেন এক কোটি ৩৫ লাখের বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ একমাসের বেশি আগে নিবন্ধন করলেও এখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনও বার্তা পাননি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে যারা টিকা নিয়ে কোনও মেসেজ পাননি, তাদের কী হবে? এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে বুধবার পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৭ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪৯ লাখ ২ হাজার ১৭৩ জন। তবে টিকা নেয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন ২ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার ৫১৯ জন। অর্থাৎ এখনো টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন এক কোটি ৩৫ লাখ ৫১ হাজার ৭২ জন।

গৃহবধূ জোহরা পারভীন টিকা নিতে সুরক্ষা পোর্টালে নাম নিবন্ধন করেছেন এক মাসের বেশি সময় আগে। কিন্তু এখনো তিনি কোনও অ্যাপয়েন্টমেন্টের মেসেজ পাননি। তিনি বিবিসিকে বলেন, আমার নিবন্ধন করা হয়েছে ৭ জুলাই। তারপর তো একমাসের বেশি সময় পার হয়ে গেল। আমার পরেও কতজন নাম নিবন্ধন করে টিকা পেল। কিন্তু আমার তো এখনো মেসেজই এলো না। চিন্তায় আছি।

তিনি জানান, দেরি হওয়ায় তিনি আবার নিবন্ধনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, একবার হয়ে যাওয়ায় তিনি আর নিবন্ধন করতে পারবেন না। আরেকজন গৃহবধূ লতিফা আক্তার লিপি সুরক্ষা পোর্টালে নিবন্ধন করেছেন ২৬ জুলাই। এরপর থেকে তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন, কবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে থেকে মোবাইলে মেসেজ আসবে, কবে তিনি টিকা নিতে যাবেন।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোহানা পারভীন ২৮ জুলাই নিবন্ধন করেছেন। এরপর তিনি ওয়েবসাইটে ঢুকে নিশ্চিত হয়েছেন যে নিবন্ধন হয়েছে। তিনি বলেন, আমি এই পর্যন্ত তিন থেকে চারবার সাইটে গিয়ে দেখেছি যে আমার কোন ডেট এলো কিনা। আমি টিকার কার্ডটাও নামিয়ে রেখেছি। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।

টিকার মেসেজ আসে কীভাবে?

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএনসিএএইচ টিকা বিষয়ক দফতরের পরিচালক মো. শামসুল হক বলেন, টিকার নিবন্ধনে নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তার পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্রে তালিকা পাঠানো হয়। এরপর তারা প্রতিদিনের জন্য টিকার যে বরাদ্দ রয়েছে, সেই সংখ্যক মানুষকে টিকা নিতে আসার জন্য ক্ষুদে বার্তা পাঠান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সফটওয়্যার ব্যবহার করে সাধারণত আগের দিন এসব বার্তা পাঠানো হয়। এজন্য টিকা নিবন্ধনের যে সিরিয়াল রয়েছে, সেটি অনুসরণ করে বার্তা পাঠাতে বলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের যে পরিমাণ টিকা দেয়ার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়, নিবন্ধনের তালিকা তার চেয়ে অনেক বেশি। এই কারণে হয়তো অনেকে নিবন্ধন করার পরেও তাদের ডেট আসছে না।

তবে টিকাদান কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, সব সময় এই সিরিয়াল অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। কারণ বিভিন্ন সুপারিশে অনেকের টিকা নেয়ার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসা হয়ে থাকে। হাতে কলমে এসএমএস পাঠানোর এই পদ্ধতিতে যদি কারও নাম একবার বাদ পড়ে যায়, তাহলে সেটি টের পাওয়ার সহজ উপায় নেই।

টিকাদান কেন্দ্র মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেছেন, একটি কেন্দ্রের টিকা দেয়ার ক্ষমতা যদি হয় ১২০০, তাহলে তার অর্ধেক চলে যায় দ্বিতীয় ডোজ দিতে গিয়ে। বাকিদের প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হলেও সেখানে অগ্রাধিকার পান আগে এসএমএস পাওয়া ব্যক্তিরা, বয়স্ক, বিদেশযাত্রী, নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএনসিএইচ বিভাগের পরিচালক ডা. মো. শামসুল হক বলেন, যারা টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন, পর্যায়ক্রমে সবাই পাবেন। ম্যাসেজ না আসলে একটু অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, নিবন্ধনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সবাইকে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। নিবন্ধন বেশি হওয়ায় একটু দেরি হতে পারে। কিন্তু পর্যায়ক্রমে সবাই টিকা পাবেন।

এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘টিকা নিবন্ধনের বয়সসীমা কমিয়ে আনার পর থেকেই নিবন্ধন অনেক বেড়ে গেছে। এই কারণে তালিকাও লম্বা হচ্ছে। একটি কেন্দ্রে টিকা দেয়ার যে সক্ষমতা থাকে,তার চেয়ে নিবন্ধন বেশি হচ্ছে। এই কারণে এসএমএস যেতে একটু সময় লাগতে পারে। তবে পর্যায়ক্রমে সবাই টিকা পাবেন। তথ্য-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান