টেলিকম বিভাগের সাফল্য তুলে ধরলেন তারানা

মন্ত্রিসভায় রদবদলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব হারানো তারানা হালিম তিন দিন পর নতুন দপ্তরে যোগ দিয়ে বলেছেন, এই দপ্তর বদল নিয়ে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই।
এসময় তিনি টেলিযোগাযোগ বিভাগে তার সময়ের বিভিন্ন সফলতার চিত্র তুলে ধরেন। বলেন, এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবদানে। তাঁদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় সফল হয়েছি।’
গত ৩ জানুয়ারি তারানা হালিমকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে সরিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়। দপ্তর পাল্টানোয় তার অভিমানের কথা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছিল গণমাধ্যমে। ৭ জানুয়ারি সকালে তারানা যোগ দিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ে। এরপর তিনি সেখানে মত বিনিময় করেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
তারানা হালিম বলেন, ‘আমি দুর্নীতির সঙ্গে কখনও আপোষ করিনি, করব না, করা সম্ভব নয়। ভালো কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যখন যেখানে দেবেন সেখানেই কাজ করব, সততার সঙ্গে কাজ করব, দক্ষতার সঙ্গে কাজ করব। কথা কম বলে কাজ বেশি করব। এটাই কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শিখিয়েছেন।’
তিনি বলেন, “আমি মনে করি একটি চ্যালেঞ্জিং মিনিস্ট্রি থেকে বিশ্বাস ও আস্থার জায়গায় আরেকটি চ্যালেঞ্জিং কাজ আমাকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমি কোনোভাবেই মনে করি না এখানে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ আছে। কাজ করলে সব জায়গাতেই করা যায়।”
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে তার আমলে বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন তারানা হালিম। বলেন, এর মধ্যে যা কিছু সাফল্য, তা সরকারের সাফল্য, শেখ হাসিনার সাফল্য। আর কোনো ব্যর্থতা থাকলে তা তারানা হালিমের।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের নবনিযুক্ত মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বুধবার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “টেলিকম ডিভিশনের প্রতিমন্ত্রী সেখানে আর নেই, কেন নেই আমি তা বলব না।”
মন্ত্রীর মতে, দেশের টেলিযোগাযোগ খাত ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং অন্ধগলিতে আইসিটি খাত। কিন্তু এর সমাধানে কোন উদ্যেগ নেওয়া হয়নি। আর এই ‘ডুবন্ত নৌকা’কে টেনে তুলতে প্রধানমন্ত্রী তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
মন্ত্রীর এসব বক্তব্যের সরাসরি জবাব দেননি তারানা হালিম। বলেন, ‘আমি আগের মন্ত্রণালয়ে থাকতে কিছু সাফল্যের কথা তুলে ধরতে চাই। যেখানে মন্ত্রী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এবং যার পরামর্শে সবমসয় কাজ করেছি তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়। তাদের নির্দেশনায় দুই বছর প্রায় চার মাসে যে কাজ গুলো করেছি তা কম নয়।’
এই দপ্তর বদলের পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গণমাধ্যমে যারা সংবাদ উপস্থাপন করেন, তারা বিভিন্নভাবে করেন। আমি এটুকু বলতে চাই, সত্যিকার অর্থে সেই বিভাগ সম্পর্কে আমি একটি কথাও বলব না।”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “সেই বিভাগ থেকে এই বিভাগে এসেছি। আমার কি কোনো রকমের এখতিয়ার আছে সেই বিভাগ সম্পর্কে কথা বলার? এখতিয়ার বর্হিভূত কাজ ছোটবেলা থেকেই করিনি। অশোভন কথা বলাও শিখিনি। আমি আমার শোভন থাকার মাত্রা কোনোভাবেই অতিক্রম করতে চাই না।”
টেলিযোগাযোগ দপ্তর হারানোয় তারানা একটি অনলাইন পোর্টালকে বলেছিলেন, মানুষ হিসেবে বিষয়টি তার ‘গায়ে লেগেছে’।
সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারানা বলেন, “আপনারা পুরোটা পড়ে দেখলেই পেয়ে যাবেন। আপনারা কিছু কায়দা জানেন, পুরো সংবাদের চারটি লাইন, কোনটা লিখলে মানুষ পড়ে..। ওই কথাটা ছিল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে। প্রশ্ন করা হয়েছিল ‘উৎক্ষেপণের সময় আপনার কেমন লাগবে, আপনি থাকবেন না’- সেটির স্বাভাবিক একটি উত্তর ছিল।”
এরপর উদাহরণ হিসেবে তারানা বলেন, প্রধানমন্ত্রী দিবারাত্র পরিশ্রম করে কমিউনিটি ক্লিনিক করলেন, খালেদা জিয়া এসে বন্ধ করে দিলেন। তখন তাকে যদি জিজ্ঞাস করা হয় যে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ হওয়ায় কেমন লেগেছে? এই রকম জিনিস আরকি।”
এক সময়ের জনপ্রিয় এই টিভি অভিনেত্রী এসময় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কাজ শতভাগ কাজ শেষ করা, বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়া, রবি ও এয়ারটেল একিভূত করার মাধ্যমে বাজারে একটি প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য তৈরি করা, কলড্রপে মিনিট ফেরত দেয়া বাধ্যতামূলক করাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।
তারানা বলেন, ‘বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে স্মার্ট ফোন। মাত্র ৫ মাসে ১১ কোটির অধিক বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করা ছিল আমার জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ, যা আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক মনিটরিং প্লাটফর্ম বিটিআরসিতে স্থাপন করেছি। যেখান থেকে আমরা সহজে বুঝতে পারি কোন গ্রাহকের নামে কতটি সিম ব্যবহৃত হচ্ছে।’
নতুন তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ তৈরিতে কাজ করেছি। মাত্র দুই বছর তিন মাসের মধ্যে এর নীতিমালা সংশোধন করে অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে লাইসেন্স প্রদান করেছি আমরা। আশা করছি আগামী এপ্রিলের মধ্যে এই এনএনপি সেবা জনগণের মধ্যে দেওয়া সম্ভব হবে।’
প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ৬৪ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন হয়েছে জানিয়ে তারানা বলেন, ‘নানা সমস্যা মোবাবেলা করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ফোরজি চালুর সব ধরনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ’
নতুন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইন্টারনেটের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তারানা জানান, ‘ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য আমরা কমিটি করেছিলাম। সেই কমিটি তাদের কনসাল্ট পেপারস আমাদের কাছে জমাও দিয়েছিল। সেখানে তারা সুপারিশ করেছিল কীভাবে আমরা ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারি।’
রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্টান টেলিটক নিয়েও তার উদ্যোগ তুলে ধরেন তারানা হালিন। বলেন, ‘টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে বহুল আকাঙ্খিত ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অর্থমন্ত্রণালয় পাস করে দিয়েছেন আমার মন্ত্রণালয় রদবদলেরর সাতদিন আগে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে টেলিটক অনেকদূর এগিয়ে যাবে। টেলিটক কীভাবে উঠে দাঁড়াবে সেই ব্যবস্থা আমরা করে এসেছি।’
টেলিযোগাযোগের পাশাপাশি ডাক বিভাগের উন্নয়নেও নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন তারানা। জানান, তিনি দায়িত্বে থাকাকালে ২৩ টি পয়েন্টে ই-কমার্স চালু হয়েছে। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চালু হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। ‘ডাক টাকা’ নামে একটি সফটওয়ার চালু হয়েছে। যে সফওয়্যারের প্রমোশন অপারেটর আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের যেসব নাগরিক ব্যাংকিং সেবার বাইরে অবস্থান করছেন তাদের এর আওতায় ব্যাংকিং সেবার সাথে যুক্ত হবেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে এক পরিবারের সদস্য হিসেবে বর্তমান সরকারের জন্য কাজ করবেন বলে জানান নবনিযুক্ত তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। সেখানে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী স্বাগত জানান তারানা হালিমকে। তিনি বলেন, ‘তাঁর (তারানা হালিম) কাজের অনেক দক্ষতা-সফলতা আছে। আর এই দক্ষতা এখানেও তিনি কাজে লাগাবেন। আমরা এখানে একত্রে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখব।
আজকের বাজার: সালি / ৩১ জানুয়ারি ২০১৮