ডিজিটাল দ্বীপ হিসেবে মহেশখালীর যাত্রা

দেশের প্রত্যন্ত দ্বীপ মহেশখালি ডিজিটাল আইল্যান্ড হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মহেশখালি, যা চিরদিন অবহেলিত ছিল, আজকে এই ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে মূল ভূখন্ডের সাথে এবং বিশ্বব্যাপী এই মহেশখালির একটি সংযোগ স্থাপিত হয়ে গেল।’ তিনি বলেন, ‘এই যে সুযোগটা আজকে সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে এটা শুধু মহেশখালি নয়, আরো যেসব বিচ্ছিন্ন এলাকা আছে সেখানেও আমরা এই ডিজিটাল পদ্ধতিটা চালু করে দেব। সেটাও আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। আর মহাশূন্যে আমরা যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবো (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট) সেটা উৎক্ষেপণ হয়ে গেলে আরো সুবিধা হবে।’

অনুষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল থেকে কোরিয়া টেলিকম (কেটি) কোম্পানীর শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জুলফিকার আহমেদ এবং দেশের মহেশখালি প্রান্তে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা প্রশাসন, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং স্থানীয় জনগণ সম্পৃক্ত ছিলেন। এতে সিউল প্রান্ত থেকে কেটি’র চেয়ারম্যান কিউ শিক শিন, মহেশখালি প্রান্ত থেকে আইওএম-এর চিফ অব মিশন শরৎ চন্দ্র দাস এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বক্তৃতা করেন। গণভবনে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত আন সিওন দো, সংসদ সদসবৃন্দ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার ভিডিও কনফরেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

প্রায় ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মহেশখালি দ্বীপের ৪ লাখ বাসিন্দার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রায় ২২ কোটি ৩৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হবার কথা রয়েছে। কোরিয়ান টেলিকম (কেটি) প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহযোগিতায় প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে মহেশখালির মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি সেবা পাবে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রবেশাধিকার বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ আর নিজেদেরকে কখনও অবহেলিত ভাববে না। তাছাড়া মহেশখালিতে আমরা আরো অনেকগুলি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। কাজেই এই অঞ্চলের সার্বিকভাবে উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি মহেশখালিবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই যে, এই অঞ্চলের উন্নয়নে সবরকমের প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। তাতে ঐ অঞ্চলের মানুষ আরো উন্নতমানের শিক্ষার সুযোগ পাবে, চিকিৎসার সুযোগ পাবে, তাদের কর্মসংস্থানের সুবিধা হবে। আর ঐ দ্বীপে বসেই সারাবিশ্ব তাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে। সারা বিশ্বকে জানতে পারবে। দেশে-বিদেশে যোগাযোগটা রাখতে পারবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি স্বাধীন জাতি। এই স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, তিনি আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা, সেভাবেই গড়ে তুলবো। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে আমরা দারিদ্রমুক্ত করতে চাই।

তিনি বলেন, সে অর্থে আমাদের এই উদ্যোগ মহেশখালিবাসীর সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলেই আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার সুযোগ থেকে এই দুর্গম এলাকার লোকেরা যেন বঞ্চিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যায় অতর্কিতে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাতেও তারা যেন সতর্ক থাকতে পারে সেজন্যও এই ডিজিটাইজেশন। সরকার প্রধান বলেন, হাইস্পিড ইন্টারনেট সুবিধা আমরা যে মহেশখালির মত একটি দ্বীপে করতে পারছি সেজন্য আজকে আমি সত্যই আনন্দিত। তিনি বলেন, আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যত করে ফেলেছি, এখন সেটাকে আরো উন্নতি করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কেটি’র প্রতিনিধি, আইওএম’র প্রতিনিধি, পিএমও কার্যালয় এবং এটুআই প্রকল্পসহ, আইসিটি এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, সমুদ্র সীমা আমরা পেয়ে গেছি। এই সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগানো এবং পাশাপাশি জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের জীবন মানের উন্নয়ন করাই তাঁর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি কক্সবাজারে বাবার সঙ্গে যাতায়াত করে দেখেছেন এই অঞ্চলটা এক অফুরন্ত সম্পদের ভান্ডার। যা অতীতে কোন দিন কাজে লাগানো হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারের আসার পরই উদ্যোগ নিয়েছি পতিত অঞ্চলগুলোর উন্নয়নের জন্য। কারণ আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালার মূল কথাটাই হচ্ছে উন্নয়নের ছোঁয়াটা একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে হবে। সাধারণ গ্রামের মানুষ, বিচ্ছিন্ন এলকার মানুষ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ, হাওড়-বাওড় অঞ্চলের মানুষ যেন এই উন্নতির ছোঁয়াটা পায়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী জানান, এ অঞ্চলের জনগণ ইতোমধ্যেই ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা পেতে শুরু করেছে। এখানে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ডিজিটাল আল্ট্রা সাউন্ড সেবা, ইউরিন অ্যানালাইজার প্রভৃতি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।