ডেলিভারি সার্ভিস নির্বাচনে ১০ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য উপস্থাপন করা হলো

বর্তমানে অনলাইন মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের কারণে ডেলিভারি সার্ভিস প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনার পণ্যটি গ্রাহকের হাতে পৌঁছানোর পর পরই সবকিছু শেষ হয় না। বরঞ্চ ডেলিভারি পয়েন্টটি ভবিষ্যতে আপনার সম্ভাব্য গ্রাহক প্রাপ্তির একটা বড় মাধ্যম। তাই চলুন জেনে নিই, সেরা পার্সেল ডেলিভারি পরিষেবা বেছে নেয়ার সময় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত।

ডেলিভারি সার্ভিস নির্বাচনে ১০ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:-

কত দ্রুত গ্রাহকের নিকট পৌঁছাচ্ছে:-

আপনার পণ্যটি ডেলিভারি সার্ভিস কোম্পানি আপনার গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে কেমন সময় নেবে তা জানা সবচেয়ে দরকারি। শুধু যে অর্ডার পাওয়ার পরই আপনাকে ডেলিভারি সময় নিয়ে ভাবতে হবে, তা নয়। আপনি যে কোন সময় ডেলিভারির জন্য অর্ডার পেতে পারেন। তাই আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে যেন যত দ্রুত সম্ভব ডেলিভারি করা যায়। সুতরাং প্রতিটি কোম্পানির ডেলিভারির গড় গতি যাচাই করে দেখুন। শুধু ব্রোশিয়ার বা বিজ্ঞাপনে দ্রুত ডেলিভারি নিশ্চিত করা হয় দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়। তাই অনলাইন রিভিউ থেকে শুরু করে কোম্পানিগুলোর সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকেও জানার চেষ্টা করুন তাদের সার্ভিসের গতির ব্যাপারে।

কতটুকু এলাকার মধ্যে তারা ডেলিভারি দেয়:-

আপনি যদি সীমিত পরিসরে আপনার পণ্য পরিবহন করতে চান, তাহলে একটি স্থানীয় ডেলিভারি সার্ভিস ব্যবহার করুন। স্থানীয় ডেলিভারি কর্মকর্তাদের এলাকা সম্পর্কে অধিক জ্ঞান থাকে। তাছাড়া তারা বড় কোম্পানিগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম সার্ভিস চার্জ করে থাকেন। আর যদি দীর্ঘ দূরত্বের মধ্যে আপনার পণ্য পরিবহন করতে চান, অথবা আপনার ব্যবসা দেশের বাইরে প্রসারিত করার কথা ভেবে থাকেন, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সম্বলিত ডেলিভারি সার্ভিস কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ডেলিভারির সময় পণ্যের নিরাপত্তা বজায় থাকবে কিনা:-

আপনি যদি সূক্ষ্ম আইটেম, ভঙ্গুর পণ্য বা এমন কিছু পাঠাতে চান যা খুব সাবধানে পরিবহন প্রয়োজন, এমতাবস্থায় ডেলিভারি সার্ভিস হোল্ডারের ব্যাপারে ভালো করে খোঁজ-খবর নিন। এ রকম অনেক ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে যে, পরিবহনের সময় তারা পণ্য ভেঙে ফেলে, অথবা পরিবহনের মাধ্যম বা যানবাহনটি পণ্যটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বাছাইয়ের সময় তাদের কাছ থেকে জেনে নিন যে কিভাবে তারা আপনার পণ্যটি ডেলিভারি করবে।

এরপরেও যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনার পণ্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, গ্রাহকের কাছে দেরিতে পৌঁছতে পারে; এমনকি নিখোঁজও হতে পারে। এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের কোন ব্যবস্থা বা বীমা পলিসি আছে কিনা যাচাই করে নিন। এমতাবস্থায়, যারা টাকা ফেরত গ্যারান্টি দেয় তাদের সন্ধান করাটা বুদ্ধিমানের কাজ।

পণ্যের আকার এবং ওজন নিয়ে কোন সীমাবদ্ধতা আছে কিনা:-

এটি লক্ষণীয় যে, আপনার পণ্যের আকার এবং ওজন অনুসারে আপনার বেছে নেয়া ডেলিভারি সার্ভিসে শর্ত থাকতে পারে। হয়ত তারা বড় আইটেম ডেলিভারির জন্য অতিরিক্ত খরচ নেয় অথবা এমনও হতে পারে যে তারা বড় এবং ভারী পণ্য পরিবহনই করে না।

নির্দিষ্ট পরিমাণ ও বিভিন্ন ওজনের পণ্যের জন্য অবশ্যই মূল্য তালিকা ও শর্তাবলী থাকবে। সেগুলো ভালো করে যাচাই করে নিন। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর মতো অধিকাংশ স্থানীয় ডেলিভারি সার্ভিস কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইটে আপনার আইটেমের জন্য ক্যাটাগরি ভিত্তিক নির্দেশিত পরিমাপ ও ওজন লিপিবদ্ধ থাকে।

কতদিন ধরে ডেলিভারি সার্ভিস দিয়ে আসছে:-

যেহেতু আপনি নতুন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি নতুন চালু হয়েছে এমন কোন ডেলিভারি সার্ভিস হোল্ডার বাছাই করবেন না। তাই কোম্পানিটি কতদিন ধরে ব্যবসা করছে, তা ভালো করে দেখে নিন। আদর্শভাবে, আপনার এমন একটি কোম্পানি নির্বাচন করা উচিত হবে যেটি প্রতিষ্ঠিত এবং আপনার মতো এরকম আরও কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছে। একটি অভিজ্ঞ ডেলিভারি সার্ভিস প্রতিষ্ঠান আপনাকে শুধু ভাল পরিষেবাই দিবে না, সাথে আপনার ব্যবসার প্রসারের জন্য সুপরামর্শও দিতে পারে।

বাহ্যিক বেশভূষা:-

আপনার গ্রাহকরা আপনার পণ্য হাতে যাকে দেখবেন তার উপর ভিত্তি করে আপনার ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে। সুতরাং তারা তাদের যানবাহন এবং নিজেদের পোষাক-পরিচ্ছদ কতটুকু সুন্দর ও পেশাদার করেছে সেদিকে নজর দিন। সুন্দর একটি লোগো থেকে শুরু করে গ্রহণযোগ্য রঙ; সর্বপরি ক্যামন মোড়কে আপনার পণ্যটি ভরে তারা আপনার গ্রাহকের সামনে হাজির হচ্ছে- এ ব্যাপারগুলোর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।

ডেলিভারির পাশাপাশি আরও কিছু সুবিধা দিচ্ছে কিনা:-

আপনি কোন ডেলিভারি কোম্পানিকে অধিক মূল্য দিবেন? যারা শুধুমাত্র এ বিন্দু থেকে বি বিন্দুতে আপনার পার্সেলগুলো সরবরাহ করছে তাদেরকে, নাকি এর পাশাপাশি যারা আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে তাদেরকে? কিছু ডেলিভারি কোম্পানি তাদের সার্ভিসের সাথে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মান সংযোজন করে। যেমন: প্যাকেজিং, লেবেলিং, গুদাম ব্যবস্থাপনা, সরবরাহ, মুদ্রণ এবং এমনকি মেইল পরিপূর্ণতা। এ ধরনের ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা আপনার জন্য সহজ করে দিবে।

তাদের ডেলিভারিটি আপনি ট্র্যাক করতে পারবেন কিনা:-

আপনি যেহেতু আপনার পণ্য সরবরাহের জন্যে একটি ৩য় পক্ষ কোম্পানির শরণাপন্ন হতে যাচ্ছেন, তাই আপনার পণ্যটির সঠিক ডেলিভারি হচ্ছে কিনা তা যাচাই করে নেয়া ভালো। আপনি পণ্যটি ছেড়ে দেয়ার পর থেকে তা কোন কোন জায়গা দিয়ে আপনার গ্রাহকের কাছে পৌঁছাচ্ছে তা জানা আবশ্যক। অনেক কোম্পানিই এই সুবিধাটি দিয়ে থাকে। আপনার হাতের স্মার্টফোনেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার পণ্যের বর্তমান অবস্থানের খবর। পাশাপাশি ট্র্যাকিং সিস্টেমটি আপনাকে বলে দিবে যে, আর কত সময়ের মধ্যে আপনার পণ্যটি আপনার গ্রাহকের হাতে পৌঁছাচ্ছে।

তাদের গ্রাহক সেবা কতটুকু সহজলভ্য:-

আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে নিন, যেকোন সমস্যায় আপনি ফোনের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে সাহায্য পাবেন কিনা। শুধু যে আপনার সাথেই বন্ধুভাবাপন্ন হবে তা নয়, খেয়াল করুন ডেলিভারি কর্মকর্তারা আপনার গ্রাহকের সাথেও সদাচরণ করছে কিনা। অনেক ক্ষেত্রেই পণ্য বহনের সময়টা আপনার নিয়ন্ত্রণের না থাকার দরুণ সে সময়ে আপনার গ্রাহক কেমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা আপনার অজানা থেকে যেতে পারে। আপনার গ্রাহকদের সামনে ডেলিভারি চালক কীভাবে আচরণ করছে তার উপর নির্ভর করছে আপনার কাছ থেকে গ্রাহকটি আবার পণ্য কিনবেন কিনা। একটি পেশাদার ডেলিভারি কোম্পানি তার যানবাহনগুলো ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার পাশাপাশি খেয়াল রাখে যে তার কর্মীরা আপনার গ্রাহকদের সাথে সদা বন্ধুসুলভ যোগাযোগ বজায় রাখছে কিনা।

তাই এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিরীক্ষণ করে নিন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে এমন কারো কাছ থেকে এ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। কেননা একমাত্র তাদের মতামতই এ ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য পর্যালোচনা দিতে পারে।

ডেলিভারি সার্ভিসের মূল্য:-

ডেলিভারি সার্ভিস নির্বাচন করার আগে সর্বদা একই পার্সেল চালানে কোম্পানিগুলো কেমন মূল্য ধার্য করছে- তা পরীক্ষা করুন। কিছু কোম্পানি একই পরিষেবা এবং ডেলিভারি সময়গুলোর ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি চার্জ করে। এক্ষেত্রে, পরিষেবাগুলোর তুলনামুলক দাম যাচাই করার মাধ্যমে আপনি নিরর্থক অপচয় থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

তবে খেয়াল রাখবেন, কেবল সস্তা বিকল্পের জন্য যেন মানের সাথে আপস না করে বসেন। লুকানো সারচার্জ বা অন্যান্য কারণের জন্য দামগুলো ভালো করে লক্ষ্য করুন।

পরিশেষে, এটা বলা বাহুল্য যে, অনলাই ব্যবসায় ডেলিভারি সার্ভিস কোম্পানিগুলোর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে। তাই অনলাইনে কেনা এবং ডেলিভারি গ্রহণের সময় আপনার গ্রাহকরা যেসব সাধারণ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, সে সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন হোন। গ্রাহকদের কাছ থেকে ডেলিভারি সার্ভিসের অভিযোগ পাওয়ার সময় আপনি কিভাবে তার সমাধান করবেন তার পরিকল্পনা করে রাখুন। মনে রাখবেন, প্রতিবার শপিং কার্ট থেকে গ্রাহকের বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে সার্ভিস বিতরণের মধ্যেই নিহিত আপনার ব্র্যান্ডের সুনাম বজায় রাখার চাবিকাঠি। খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান