তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন: দেশীয় কোম্পানির অগ্রাধিকার জরুরি

এ.এস.এম. জামালুদ্দিন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদের সামনে নিয়ে আসলেন, ওই সময় আমাদের মানুষের মনে একটা কৌতূহল ছিল যে, ডিজিটাল বাংলাদেশটা কী? ওই সময় থেকে এখন ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই আট-নয় বছরে যদি আপনি বাংলাদেশের অবস্থা বিশ্লেষণ করেন, দেখবেন যে আমাদের দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরের মানুষই কিন্তু এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের মধ্যে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। আপনি দেখবেন, এখন প্রত্যেকের হাতেই মোবাইল ফোন। আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে যে তথ্য সেবা কেন্দ্র রয়েছে, সেখান থেকে মানুষ বিভিন্ন ধরনের সেবা নিচ্ছে। প্রত্যেকটা সেক্টরেই আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন। ডিজিটাল পরিবর্তন কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন জীবনে চলে আসছে। মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, ভাইবারে কথা বলছে। ব্যাংকিং সেক্টরেও এখন অনলাইনে লেনদেন করা যাচ্ছে। এমন অনেক কিছু যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, চলাফেরার মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি। তার মানে ডিজিটাল বাংলাদেশটা কী? একসময় আমাদের সবকিছু অ্যানালগ সিস্টেমে ছিল, সবকিছু আমাদের কাগজপত্র দেখে করতে হতো। এখন আমাদের সবকিছু একটা অটোমেটেড সিস্টেমে চলে আসছে। ফোনে কথা বলার সময় আমরা ছবি দেখতে পাই, এমন অনেক প্রযুক্তি আসছে। এই যে জিনিসটা, এটা কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করার পর থেকেই আমরা কিন্তু আস্তে আস্তে বাস্তবে যেভাবে দেখছি, এগুলো কে করলো? সফটওয়্যার ইন্ড্রাস্ট্রি বা আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো কিন্তু এই কাজগুলো করেছে।

আইসিটি সেক্টরের সম্পৃক্ততা বাড়বে
যতই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো, ততই কিন্তু এই সেক্টরের সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকবে। সেজন্য আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে আইটি ব্যাকগ্রাউন্ডের ছেলে-মেয়ে দরকার। আমাদের নিজেদের যে কাজগুলো আমরা ম্যানুয়ালি করতাম, সে কাজগুলো যে প্রসেসে আমরা করতাম, সেই প্রসেসটাকে অটোমেটেড করতে হবে, মোডিফাই করতে হবে। এটা খুব বড় একটা কাজ, যেটা এখন মাত্র শুরু হয়েছে। আমরা এখন ম্যানুয়াল কাজগুলোকে আস্তে আস্তে করে কম্পিউটারাইজড করে আনছি। আমাদের কিন্তু সম্পূর্ণ প্রসেসটা অটোমেশন করতে হবে। অটোমেশন যখন হয়ে যাবে, প্রসেস কিন্তু তখন অনেক শর্টকাট হয়ে আসবে। এই জিনিসগুলো আমাদের এখনও অনেক বাকি। এ সেক্টরে আমাদের যেমন অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে, তেমনি অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ডেভেলপমেন্ট ও ইমপ্লিমেন্টেশন এবং সে অনুযায়ী লোকদের ট্রেইন করা, অপারেশন, সার্ভিস ও মোডিফাই করার জন্য, আবার নতুন টেকনোলজি নিয়ে আসার কাজ চালু রাখতে হবে। তাই এখানে সম্পৃক্ততা অনেক বেশি এবং এ সেক্টরে আমাদের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল।

চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখানে একটি কাজ দুই তিনভাবে মানুষ করতে পারে। যেমন একটা হচ্ছে, আমি বিস্তারিত জানলাম এবং সে অনুযায়ী করলাম। আরেকটা হচ্ছে, ট্রায়াল এবং এরর বেইজড করা। আমাদের দেশে ট্রায়াল এবং এরর বেইজড প্রসেসটাই আসলে বেশি উইজ হবে। কারণ, যারা ডিসিশন মেকার, তারা তো আগে দেখেন নাই যে, এই কাজটা কীভাবে করতে হবে। আবার যারা ইমপ্লিমেন্টেশন করবে বা ম্যানেজমেন্টের সাথে যুক্ত হবে, আমাদের পরিবেশ এবং লোকবলসহ সব কিছু মিলে আসলে ট্রায়াল এন্ড এরর বেইজড হবে, কিছু মিস-ইউজ হবে, সেটাকে আমাদের এক্সসেপ্ট করতে হবে। এটা রিস্কের মধ্য দিয়ে যাবে, যদিও আমরা সলিউশন ডেপ্লয় করি, আমরা কিন্তু বিভিন্ন সলিউশন ডেপ্লয় করার আগে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করি, তো সব দেশেই আপনি দেখবেন যে, অনাকাক্সিক্ষত কিছু না কিছু হয়। তো আমাদের ক্ষেত্রেও এরকম হবে।

কোয়ালিটি ধরে রাখতে হবে: আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের কোয়ালিটি ধরে রাখা। কোয়ালিটি ধরে রাখতে হলে আমাদের যে এডুকেশনাল ব্যাকবোন, যে স্টুডেন্টদের আমরা তৈরি করি প্রফেশনাল পার্সন হিসেবে, সেই স্টুডেন্টদের কোয়ালিটি একটা ইস্যু। এখানে আমাদের আরও নজর দিতে হবে যে, কিভাবে আমরা তাদের ইন্ড্রাস্ট্রি ওরিয়েন্টেড করতে পারি। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে যে, আমাদের যারা প্ল্যানিং এবং ডিসিশন মেকিং-এ আছেন, অনেক সময় তারা ভাবতে পারেন যে, এ কাজটা করতে গেলে ভুল হয়ে যেতে পারে। এ চিন্তাধারা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে । এটা আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তারা হয়তো ভাবতে পারেন, আমি একটা ইন্টারন্যাশনাল সলিউশন নিয়ে আসি যেটা টেস্টে প্রুভেন, আমার দেশে এটা আমি নেবো না। যখনই আমি ইন্টারন্যাশনাল প্রুভেন সলিউশন নিয়ে আসছি, তখন হয়তো সেটা আমাকে রেজাল্ট দেবে, তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ওই সলিউশন আমাদের দেশে ইমপ্লিমেন্ট করা অনেক ডিফিকাল্ট।

দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রায়োরিটি দিতে হবে:দেশীয় প্রতিষ্ঠান যেগুলো আছে, তাদের ডেফিনেটলি হাইয়েস্ট প্রায়োরিটি দিয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। যেমন, আমি একটা পরিবারের গৃহকর্তা। আমার ছেলে-মেয়ে দোষ করলো, ভুল করলো, কোথায় ঘাটতি আছে, সেগুলো কিন্তু ওভারকাম করার জন্য আমি বিভিন্ন স্টেপ নিচ্ছি। এসব দিক চিন্তা করে, বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, তাদের পেট্রোনাইজার হিসেবে আমাদের আসতে হবে। আমি একটা অ্যানালাইসিস করলাম, ইমপ্লিমেন্টেশনের সময় এটাকে আমি কিভাবে ম্যানেজ করবো, সেগুলোর কিন্তু সিস্টেম আছে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এভাবেই হয়েছে। এগুলো হচ্ছে মূলত ম্যাথডোলজি, সিস্টেম, নলেজ ইত্যাদি। এভাবেই হবে জিনিসটা। এজন্য আমাদের সহনশীল মনভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

স্টুডেন্টদের ইন্ড্রাস্ট্রি ওরিয়েন্টেড করতে হবে: যেহেতু অ্যামেরিকায় পড়াশোনা করেছি, আমি ওই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই বলি, যখনই দুই বছরের কোর্স কমপ্লিট হয়ে যায়, থার্ড ইয়ারে ওঠার পর থেকেই প্রত্যেক স্টুডেন্ট, স্পেশালি যারা টেকনিক্যাল হয়, ওরা কিন্তু কোনো না কোনো ইন্ড্রাস্ট্রির সাথে এলাইনমেন্ট হয়ে থাকে। থার্ড ইয়ার থেকে গ্র্যাজুয়েশনের আগ পর্যন্ত যে সময়টা, সে সময়ে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এনভায়রনমেন্টটা কি, কিভাবে একটা আইডিয়াকে ইমপ্লিমেন্ট কওে, জিনিসগুলো কিন্তু শেখে। আমাদের এখানে একটা বড় গ্যাপ আছে। এখানে মানুষ যখন পড়ে কিংবা নিজে নিজে কিছু করে, কালেক্টিভলি বা ইন্ড্রাস্ট্রির সঙ্গে মিশে যে করবে, সেটা কিন্তু হচ্ছে না।

ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্ট্যারন্যাশনাল লিমিটেড
ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্ট্যারন্যাশনাল লিমিটেড আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি ১৯৯৩ সালে। প্রায় ২৪ বছর আমাদের পথচলা। এ পথচলায় অনেক ধরনের বাস্তবতার মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে আসছি। এতে আমাদের যে সুবিধা হয়েছে, তা হলো যে কোনও পরিস্থিতি সামাল দেয়া, কাজটাকে পারফর্মেন্স ওরিয়েন্টেড করে নিয়ে আসা । এগুলো আমাদের অনেক বড় অর্জন। এমন অনেক চ্যালেঞ্জ আমরা ফেইস করেছি, যেগুলো অনেকে সমাধান করার কথা ভাবতেই পারে না। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশে কস্ট ইফেক্টিভ বা কম খরচে আইটি সলিউশন প্রোভাইড করা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি
পুঁজিবাজার সেক্টরটা অনেক বড়। এজন্য এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের বিনিয়োগটাকেও এগিয়ে নিতে হবে। আমরা এই লক্ষ্যে ক্যাপিটাল মার্কেটে নিজেদের ফোকাস করতে যাচিছ। জনগণকে সম্পৃক্ত কওে, যদি কোন কিছু করা যায়, তাহলে ফলাফলটা অনেক ভালো আসবে। আমরা চাচ্ছি, আমাদের আরো কিছু নতুন প্রডাক্ট আনতে, যার মাধ্যমে ভোক্তারা আমাদের সাথে পুঁজিবাজারেও সম্পৃক্ত থাকবেন, পাশাপাশি ঘরে বসে আমাদের পণ্য ব্যাবহারের মাধ্যমেও আমাদের সাথে যুক্ত থাকবেন। এতে করে তাদের মধ্যে একটা ভালো অনুভূতির সৃষ্টি হবে। এটা আমাদের একটা লক্ষ্য বা পরিকল্পনাও বলতে পারেন। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, আর্ন্তজাতিকভাবে যদি ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে হয় তাহলে স্টক মার্কেট হলো এর সঠিক জায়গা। এজন্য আমরা ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে ফান্ড নিয়ে ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।

এ.এস.এম. জামালুদ্দিন
চেয়ারম্যান, ইনফিনিটি টেকনোলোজি ইন্টারন্যাশনাল লি.