তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য চাই আলাদা বাজেট

উদ্যোক্তা ভাবনা

শাখাওয়াত হোসেন মামুন:

আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশই তরুণ। যা, বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা। দেশের এই বিশাল জন শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য দরকার সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রণোদনা এবং তরুণদের দিকে আলাদা নজর দেবার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের দেশে তরুণদের টার্গেট করে কোন নির্দিষ্ট খাত নেই। তরুণ উদোক্তাদের জন্য সরকারিভাবে বিজনেস সেন্টার গড়ে তোলা উচিৎ, যা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রয়েছে। অনেক তরুণ উদ্যোক্তা, নতুন ভাবনা ও উদ্যোগ নিয়েও সফল হতে পাওে না। শুধু বিজনেস সাপোর্ট সিস্টেমের অভাবে। তাই আমরা জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল,জেসিআই থেকে বরাবরই দাবি করে আসছি,তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা বাজেট প্রনয়ণের কথা।

তরুণদের উদ্যোগ বান্তবায়নে দরকার সরকারিভাবে সাপোর্ট সিস্টেম। সরকার হয়তো বলবে তরুণদের জন্য অনেক কিছু করা হয়েছে, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সরকার অনেক চেষ্টা করলেও, নির্দিষ্ট তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। কারন তরুণদের জন্য আলাদা নির্দিষ্ট কোন শাখা বা খাত নেই। তবে আইসিটিতে কিছু কাজ হচ্ছে। আইসিটির বাহিরেও তো অনেকগুলো বড় সেক্টর রয়েছে, যেখানে তরুণ সুযোগ করে দিতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।

অনেক সময় মূলধনের অভাবে নতুন উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে না। তাই তরুণদের জন্য সরকারের আলাদা উইংস থাকা জরুরি। যেখানে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মূলধন যোগান দেওয়া, অফিস দেওয়া, ভ্যাট ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্সসহ সম্পূর্ণ বিজনেস সাপোর্ট দেওয়া এবং সঠিকভাবে মনিটরিং করা ব্যবস্থা থাকবে। নতুন উদোক্তাদের মূলধনের দরকার হয়, অফিসের প্রয়োজন হয়, বিজনেস পলিসি সাপোর্ট লাগে। যা একজন তরুণ উদোক্তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না,তাই সরকারিভাবে বিজনেস সেন্টার থাকলে, তাদের নতুন উদ্যোগ সফল করতে সহায়ক হবে।
এছাড়া কিছু কিছু যায়গায় একটু ছাড় দেওয়াও দরকার। যেমন ট্রেড লাইসেন্স করলে, ৩-৪ বছর পর্যন্ত ট্যাক্স ছাড় দেওয়া, রিটার্ন জমা না দেওয়ার সুযোগ থাকা প্রয়োজন। যদিও সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে সবার জন্য, কিন্তু তরুণদের জন্য আলাদা কোন পদক্ষেপ নেই। যতটুকু আছে, তাও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আলোর মুখ দেখতে পায় না। আমদের দেশে ভ্যাট, ট্যাক্স এবং ট্রেড লাইসেন্স করার প্রক্রিয়াগুলো সহজ নয়। অনেক সময় বিজনেস সামলানোর চেয়েও কঠিন হয়ে পড়ে, এসব বিষয়। তাই এগুলো আরো সহজ ও তরুণবান্ধব করা উচিৎ।

তরুণ উদোক্তাদের পক্ষে বড় মূলধন যোগান দেওয়া কখনই সম্ভব হয় না। তাই বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় মূলধন সংগ্রহ করা। তা দূর করতে হলে,প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা। বিজনেস শুরু থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইন্টারেস্ট ফ্রি লোন (ইএফ ফান্ড) দেওয়া দরকার। ২-৩ বছরের জন্য ইন্টারেস্ট ফ্রি মূলধন সরবরাহ করা বা নির্দিষ্ট সময় পর থেকে সুদ দেয়ার সুযোগ রাখতে হবে,তাহলে নতুন উদ্যোক্তাদের কাজ করা অনেক সহজ হবে। আমরা দেখতে পাই প্রতি বছরই খেলাপী ঋনে বড় অংকের অর্থ হারিয়ে যাচ্ছে। আর ঋণ খেলাপী হচ্ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তি। যদি তরুণদের জন্য নির্দিষ্ট খাতের ব্যবস্থা করা যায় এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইন্টারেস্ট ফ্রি লোনের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়,তাহলে ৫০ শতাংশ উদ্যোগ সফল হয়। এতে করে তুলনামূলকভাবে দেশের উন্নয়নে তরুণরাই অনেক বেশি ভুমিকা রাখতে পারে।

জেসিআই ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপম্যান্ট অফিসার হিসেবে কম্বোডিয়া এবং নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। অভিজ্ঞতার কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের তরুণদের সমস্যা খুব কাছ থেকে উপলব্দি করা গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারিভাবে বিজনেস সেন্টার রয়েছে, ছোট ছোট রুমে ভাগ করে, এক সাথে অনেকগুলো অফিসের সুযোগ করে দিয়েছে বিজনেস সাপোর্ট হিসেবে। যেখানে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত, থাকতে পারে তরুণ উদ্যোক্তারা। যা আমাদের দেশে নেই।

আমাদের দেশে ইন্টেলেকচুয়াল রাইটস নিয়েও তরুণরা হতাশ। কোন কিছু আবিস্কারের পর, তা কাউকে বলতেও পারে না, কারন কোন কিছু আবিস্কার করার পর, কপিরাইটের মাধ্যমে লিপিবব্দ করে রাখা যায়, তাও অনেকের জানা নেই। ইন্টেলেকচুয়াল ভ্যালুয়েশনের উপর ভিত্তি করে তরুণদের লোন দেওয়া উচিৎ। আমাদের দেশে যেটা দেখতে পাই না। বড় ব্যবসায়ীরা মডগেজ দিয়ে লোন নিতে পারে কিন্তু তরুণরা তা পারে না। আমরা দেখতে পাই এসএমই লোনের ভুল ব্যবহার হয়, কারন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য, কম সুদে লোন পাওয়া যায়। ফলে বড় বড় উদ্যোক্তারা, তাদের বউ ও মেয়ের নামে লোন নিয়ে, তা অন্য কাজে ব্যবহার করছে, কারন সেখানে লুকোচুরির জায়গা রয়েছে। কিন্তু তরুণ উদ্যোক্তাদের লুকানোর কোন সুযোগ নেই, কারণ তার বয়স প্রমান থাকবে যেটা চাইলেও, কারো ভুল ব্যবহারের সুযোগ নেই।

বিভিন্ন দেশে তরুণদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে খুব কাছ থেকে দেখেছি আমদের দেশের শিক্ষার মানের সাথে অন্যান্য দেশের শিক্ষার মানের পার্থক্য রয়েছে। আমাদের দেশের শিক্ষার মান ধীরে ধীরে কমছে। দেশের এডুকেশন স্কিল ভয়াবহ খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রফেশনাল স্কিল লোকেরও অভাব রয়েছে, যেখানে কাজ করছে জেসিআই।

জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (জেসিআই) মেম্বারদের বিদেশি ট্রেইনারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সফটস্কিল ট্রেনিং দেওয়া হয়। প্রফেশনাল সিভি রাইটিং ট্রেনিং দেওয়া হয়। প্রফেশনাল ট্রেনিং দেওয়া হয়, দেয়া হয় বিজনেস লিডারশীপ ট্রেনিংও। বিভিন্ন সময় প্রজেক্ট এর মাধ্যমে ৬ মাস থেকে শুরু করে ১ বছর মেয়াদী ট্রেনিং দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে তরুণরা নিজেদেরকে স্কিল করে তুলতে পারে এবং বিজনেস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮০০ মেম্বার রয়েছে। যে কোন পেশার ১৮ বছর থেকে ৪০ বছর বয়সের ব্যক্তি জেসিআই এর মেম্বার হতে পারে। তবে স্টুডেন্টদের জন্য স্টুডেন্ট মেম্বারশিপ রয়েছে।

শাখাওয়াত হোসেন মামুন,ইমিডিয়েট পাস্ট প্রেসিডেন্ট
জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (জেসিআই)

আজকের বাজার:এলকে/সালি/এলকে ১৫ নভেম্বর ২০১৭