১৬ বছরে ৯/১১ হামলা

দিনটি অন্যসব দিনের মতোই শুরু করেছিল মার্কিনীরা। সকালে নাশতা সেরেই অফিসে পৌঁছে অন্যসব দিনের মতো কাজ করছিলেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ৮০ তলায় সবাই অন্যান্য দিনের মতোই কাজে মেতে ছিলেন। ঘূণাক্ষরেও চিন্তা করেননি কী হতে যাচ্ছে তাদের কপালে। ঠিক ৮:৪৫ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারের উত্তর টাওয়ারে আছড়ে পড়লো আমেরকিান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৬৭ বিমান। প্রায় বিশ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল বহন করে আনা বিমানটি বিস্ফোরিত হয় প্রচণ্ড শব্দে। ১১০ তলা দালানের উপরের তলার মানুষ আটকা পড়ে। তাদের উদ্ধার করতে উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। কিন্তু কে জানতো আজ মরণই লেখা আছে তাদের কপালে। ঠিক ১৮ মিনিটের মাথায় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের আরেকটি বিমান সাউথ টাওয়ার ৬০ তলায় ঢুকে পড়ে। ধসে পড়তে থাকে টাওয়ারটি। মাত্র বিশ মিনিটের মাথায় টাওয়ারটি ধসে পড়ে।

১১ সেপ্টেম্বর বলতে সবার চোখের সামনে ভেসে আসে ২০০১ সালের সেই ভয়ংকর দৃশ্য। কমপক্ষে তিন হাজার মানুষ এ ঘটনায় নিহত হয়। প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদ ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়। আহত হয় ছয় হাজারের বেশি। সেইদিন যারা এই ঘটনা নিজ চোখে দেখেছিল তারা পরবর্তীতে বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়। মার্কিনীরা কখনও ভাবতে পারেনি তাদের ওপরেও এরকম ভয়াবহ হামলা হতে পারে।

সেসময় হামলাকারীরা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা করেই ক্ষাণ্ত হননি। আরও একটি বিমান যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান কার্যালয় পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে হামলা করে। চতুর্থ বিমান হামলাটি যাত্রীদের সহায়তায় ব্যর্থ হয়। নিউ জার্সির ন্যুয়ার্ক বিমানবন্দর থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশ্যে উড়েছিল বিমানটি। চল্লিশ মিনিটের মাথায় ছিনতাইকারীরা বিমানের দখল নিয়ে নেয়। যাত্রীরা টুইন টাওয়ার হামলার কথা আগেই জানতেন। তাই ককপিটে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে ছিনতাইকারীর ওপর হামলা করেন তারা। পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি। ছিনতাইকারীরা বিমানটি কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল তা জানা যায়নি। তবে মার্কিন প্রধান গোয়েন্দা কেন্দ্র সিআইএ দাবি করে, বিমানটি আসলে ওয়াশিংটনে হামলা করতে উড়েছিল।

প্রাথমিকভাবে হামলার কারণ স্পষ্ট ছিল না কারও কাছে। তবে সিআইএ দাবি করে, উগ্রপন্থী দল আল কায়েদা এই হামলার পিছনে ছিল। আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন হামলার দায় প্রথমে অস্বীকার করেন। কিন্তু ২০১৪ সালে তিনি হামলার দায় স্বীকার করে নেন। হামলায় ১৯ জন সৌদি আরব ও অন্য কয়েকটি আরব দেশের মানুষ অংশ নেয়। ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন, পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সামরিক উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে সংশ্লিষ্টরা এ হামলা চালিয়েছিলেন বলে বলা হয়।

৯/১১ নামে সবার কাছে এই হামলাটি পারিচিত। এ হামলার পরেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানে শুরু হয় এ যুদ্ধ। ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজতে পাকিস্তানের সাহায্য নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

ভয়াল এ কালো দিন উপলক্ষ্যে স্থানীয় সময় ভোর ৭টা থেকেই নিউইয়র্কবাসীরা স্মরণ করবে নিহতদের। সন্ধায় লাইটিংয়ের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এখনও নিউইয়র্কবাসী সেই দিনের কথা ভুলতে পারেনি। সেই ক্ষত এখনও তাদের তাড়া করে ফেরে।