দিল্লীতে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী সমাপ্ত, এটি শিগগিরই ঢাকায় আসছে

দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর ওপর অনুষ্ঠিত একটি জিডিটাল প্রদর্শনী আজ শেষ হয়েছে। এবারে বাংলাদেশে এই প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হবে হবে। ইতিহাসে এ ধরনের প্রদর্শনী এই প্রথম।

বাংলাদেশ ও ভারতের রক্তের বন্ধনের গাঁথা ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল এক্সিবিশন’-এ যে আত্মত্যাগ দুটি মহান রাষ্ট্রকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে, তা তুলে ধরেছে। ১৭ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন।

প্রদর্শনীতে উপমহাদেশের দুই দেশের এই দুই মহান নেতার জীবন-কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এটি ‘শিগগিরই’ বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই ডিজিটাল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশের পর প্রদর্শনীটি জাতিসংঘে যাবে এবং ২০২২ সালে কোলকাতায় প্রদর্শনীটির সমাপনী আয়োজন হবে।

দু’টি দেশের স্বাধীনতার সংগ্রমের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তা, কূটনৈতিক, শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এই দেড় মাসব্যাপী প্রদর্শনীটি দেখতে যান। প্রতিবেশী দেশ দু’টি ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা-সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাস অভিন্ন।

এই প্রদর্শনীতে এমন অসামান্য দুই ব্যক্তির জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরা হয়েছেন যারা আজও তাঁদের দেশ ও বিশ্বের কোটি মানুষের জন্য অনুকরণীয় হয়ে আছেন। শতাধিক জিডিটাল উপস্থাপনার মধ্যে এতে আরো রয়েছে হলোগ্রাফিক টাইম মেশিনে ইতিহাসকে তুলে ধরার আয়োজন। আর তাই এটা দর্শকদের কাছে দুই নেতার আন্দোলন-সংগ্রামের নানা ঘটনা প্রায় বাস্তবের মতো হয়ে ধরা দেবে।

মহাত্মা গান্ধী ডিজিটার মিউজিয়ামের বিরাদ রাজারাম ইয়াজনিক ২১টি তথ্যবহুল দেয়াল ও ১০০ পয়েন্ট ডিজিটাল উপকরণ দিয়ে প্রদর্শনী আয়োজনে সহায়তা করেন। দু’দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর বিভিন্ন ডিজিটাল নথি ও ছবি প্রদর্শনীর পাশাপাশি দুই মহান নেতার ঐতিহাসিক উক্তিও প্রদর্শনী হলের দেয়ালকে অলংকৃত করেছে।

এগুলো মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত উক্তি, ‘আমার দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আর আমার দেশের মানুষের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ভালবাষা আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা’ এবং মহাত্মা গান্ধীর ঐতিহাসিক উক্তি, ‘আমার জীবনই আমার বার্তা’।

প্রদর্শনীটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে ‘মিটিং ওয়াল’। এতে বঙ্গবন্ধু ও বাপু’র এক ফ্রেমের ছবিটি রয়েছে। বিশ্বে এই দুই মহান নেতার এক ফ্রেমে এই একটি ছবিই রয়েছে। এখানে এই দুই নেতার রবোটিক স্বাক্ষর ও তাঁদের প্রিয় সঙ্গীতও রয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর লবন পদযাত্রা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও এই প্রদর্শনী অলঙ্কৃত করেছে।

বলপ্রয়োগের মাধমে বাংলাদেশী ও ভারতীয়দের ওপর নির্মম উৎপীড়নের চিত্র হিসেবে ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালা বাগে জেনারেল ডায়ারের বাহিনীর এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনা সদস্যদের জঘন্য, নির্মম ও বর্বরোচিত গণহত্যাও এখানে ডিজিটালি প্রদর্শিত হয়েছে।

‘গণহত্যা টানেলে’ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী সেনা সদস্যদের দ্বারা বহু বাংলাদেশীর নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকিস্তানী সেনা সদস্যদের দ্বারা বাংলাদেশী নারীদের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতনের বেশকিছু চিত্রও এতে স্থান পেয়েছে।

প্রদর্শনীতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ছবিও ডিজিটালি প্রদর্শিত হয়েছে। এতে ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ৩৬০ ডিগ্রী দৃশ্য, বঙ্গবন্ধু ও বাপুর একটি রবোটিক স্বাক্ষর ও ব্যাকগ্রাউন্ডে দুই নেতার প্রিয় সঙ্গীত বাজানো হচ্ছে।

এই প্রদর্শনীর কিউরেটর বলেন, ‘যুব-সমাজকে এই দুই মহান নেতার মূল্যবোধ ধারণ করার জন্য উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে এই প্রদর্শনী ভূমিকা রাখবে। আমাদের স্বাধীনতার চেতানার পাশাপাশি স্বাধীনতা অর্জনে এই দুই মহান নেতা অবদান এবং শহীদদের আত্মদান থেকে যুবকরা অনুপ্রেরণা পাবে- যেমনটা আজ আমরা সবাই অনুপ্রাণিত হলাম।’ তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান