দেশকে অরাজকতার হাত থেকে রক্ষায় ইসলামী শক্তির ঐক্য জরুরি : এরশাদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশকে অরাজকতার হাত থেকে রক্ষায় প্রয়োজন ইসলামী শক্তির ঐক্য।

জাতীয় ওলামা পার্টি ঢাকা মহানগরের সভাপতি এরশাদ উল্লাহ আকমলের সভাপতিত্বে ২১ আগষ্ট সোমবার দলের চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, দেশে এখন দুর্নীতি, সন্ত্রাস, লুটপাট আর ধর্ষনের মহৎসব চলছে। স্কুলের শ্রেণী কক্ষে স্বামীর সামনে শিক্ষিকাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এর চেয়ে বর্বরতা আর কি হতে পারে। এসব অরাজকতা ও র্ববরতার হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য দেশের সকল ইসলামী শক্তিকে এক প্লাটফর্মে আসতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে দেশে আবারো শান্তি ফিরে আসবে। জাতীয় পার্টি হচ্ছে নির্ভরযোগ্য ইসলামী ফ্লাটফর্ম । তাই জাতীয় পার্টির সঙ্গে সকল ইসলামী শক্তিকে হাত মেলানোর আহবান জানান এরশাদ।

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ মন্তব্য করেন, মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদি মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে তাহলে সাগর পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ কেন বিদেশ যাচ্ছে ?

এরশাদ বলেন, সরকার যখন মধ্যম আয়ের কথা বলেন- মানুষ তখন মুখ টিপে টিপে হাসে। আপনারাতো গ্রাম-গঞ্জে যান না, গ্রামে যান দেখবেন মানুষের কি অবস্থা। মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে থাকলে, মানুষ জীবনে ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতো না। তাদের কোন উপায় নেই তাই বাধ্য হয়ে বিদেশ যাচ্ছে।

চালের দাম প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন- মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, তাই চালের দাম বাড়লেও সমস্যা হচ্ছে না। গ্রাম ঘুরে আসেন, ধারণা পাল্টে যাবে। তিনি পঁচা গম আমদানি করেছিলেন, এখনো মন্ত্রী থাকেন কি করে ? প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এ সব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, নেতৃত্ব দেশকে যেমন সুন্দর করতে পারে আবার ধ্বংসও করতে পারে। আজ সঠিক নেতৃত্বে অভাবের কারণেই বৃটিশ সাম্যরাজ্য ও মার্কিন সাম্যরাজ্যবাদ কৌশলে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে আগ্রাসন চলছে। এ দেশকেও শাসনের নামে শোষন করেছে ২০০’শ বৎসর।

এরশাদ বলেন, ইসলাম শান্তি ও সাম্যের ধর্ম। কিন্তু মুসলমান বললেই বুঝায় জঙ্গী ও সন্ত্রাসী। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ইসলামকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা হচ্ছে। সারাবিশ্বে জঙ্গীবাদ কে সৃষ্টি করেছে ? আপনারা করেছেন। আপনারা কেনো ইরাক ধ্বংস করলেন? কেনো গাদ্দাফিকে হত্যা করলেন? কি দোষ ছিলো তাদের! নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছেন। হাজার হাজার সৈন্য আফগানিস্থানে যুদ্ধের জন্য পাঠাচ্ছেন। বার্সেলোনায় হামলা হলো, সারাবিশ্বে হা-হুতাশ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনইতো ফিলিস্থানে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তার জন্যতো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিনা, মুসলমান মরলে কিছু যায় আসেনা। মুসলমানরা কি মানুষ না!

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের সময় কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরের উপর হামলা হয়নি। দু’টি মন্দিরে হামলা হয়েছিলো, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকারি খরচে মন্দির করে দিয়েছিলাম। যে কারণে কেউ হামলা করার সাহস পায়নি। বর্তমানে জাতীয় পার্টির ৩৪ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন তাদের এলাকাতে কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও নারী ধর্ষন হয়নি। অনেকেই বলেছেন, এতোদিন তাদের ভোট দেওয়ার একটি জায়গা ছিলো, সেটি এখন নষ্ট হয়ে গেছে। সেই ভোটের জায়গাটি এখন জাতীয় পার্টির হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আল্লাহর বিচারের পরেই, বিচারকদের বিচার। আমি তাদের সেভাবেই মর্যাদা দিয়েছিলাম। আমি বিচারালয়ে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করিনি। অষ্টম সংশোধনী বাতিল করে ছিলো যে বিচারক, তাকে প্রধান বিচারপতি করেছিলাম।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি.এম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সুনীল শুভরায়, এস এম ফয়সল চিশতী, ওলামা পার্টির সভাপতি মাওলানা ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আল জুবায়ের, জাতীয় যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক ফকরুল আহসান শাহজাদা, বাংলাদেশ মসজিদ সমাজের সভাপতি মাওলানা মোঃ নওয়াব আলী ভূইয়াসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর খালেদ আখতার (অব.), উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, সোমনাথ দে, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু, আলমগীর সিকদার লোটন, দফতর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, যুগ্ম দফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান, কেন্দ্রীয় নেতা- সুমন আশরাফ, মাখন সরকার, মোঃ শামছুম হুদা মিয়া, আজহারুল ইসলাম সরকার, জাতীয় ওলামা পার্টি ঢাকা মহানগর নেতা, এইচ কে এম নুরুল্লাহ, অ্যাড. নাজমুল হুদা সারওয়ার, হাফেজ আব্দুল বাতেন, মাও: নাসরুল্লাহ আল মানসুরসহ আরো অনেকে।

আজকের বাজার: এলকে/এলকে ২১ আগস্ট ২০১৭