দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ : পাবনার আবহাওয়া সূর্যমূখী চাষের উপযোগী

হলুদ রঙের নান্দনিক একটি ফুল সূর্যমুখী। দেখতে সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই ফুলকে সূর্যমুখী বলে। সূর্যমুখী থেকে তৈরি তেলও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ। বিশ্বেজুড়েই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা এখন ব্যাপক। আমাদের দেশেও ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এই তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বাসস জেলা প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষের চিত্রটুকু তুলে ধরার প্রয়াসে ‘দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে পাবনা জেলায় সূর্যমুখী চাষের চিত্র-
পাবনার ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন কেন্দ্র এবং হর্টিকালচার সেন্টারের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চাষ হয়েছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর সৌর্ন্দয্যে ভিড় জমাচ্ছেন বিপুল সংখ্যক দর্শক। আবহাওয়া, পানি ও মাটি সূর্যমুখী চাষের উপযোগী পাবনার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমূখী আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া, পানি ও মাটি সূর্যমুখী চাষের উপযোগী। সূর্যমুখী বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান থাকে, সূর্যমুখীর তেলে তেমন নেই। বিশেষ করে এই তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত। তাই দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন কেন্দ্র চলতি মৌসুমে তাদের নিজস্ব খামারে প্রায় ৯ একর জমিতে বারি-৩ জাতের নতুন সূর্যমূখী ফুলের চাষ করেছে।
ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, গুণগত মান ও স্বাস্থ্যম্মত তেল পাওয়ার আশায়ই ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৯ একর জমিতে যে বারি-৩ জাতের সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে, সেখান থেকে ৩ হাজার ৬০০ কেজির বেশি বীজ পাওয়া যাবে। আগামী দিনে এই বীজ কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এরপরের মৌসুমে কেন্দ্রের আরও ২০ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হবে। সবার আশা, ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে সূর্যমুখী একদিন দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাবে।
উপ-পরিচালক বলেন, এবার দ্বিতীয়বারের মতো বারি-৩ জাতের আবাদ হচ্ছে। এই জাতে প্রতি একর আবাদে ৫ কেজি বীজ লাগে। এবার বীজ পাওয়ার পর তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ পাবনা এর উপ-পরিচালক মো. আব্দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে তেলের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে সুর্যমূখী বিশেষ ভুমিকা রাখবে। সুর্যমূখী চাষ বৎসরে ২ বার করা যায়। এ তেল স্বাস্থ্য সম্মত। তেলের পরিমাণ ৪৫ ভাগ। কৃষদেরকে আমরা সূর্যমূখী আবাদ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। পাবনার আবহাওয়া সূর্যমূখী চাষের উপযোগী হওয়ায় চরাঞ্চলসহ জেলার প্রায় সব এলাকায় চাষ করা সম্ভব। এর আগে বারি-২ জাতের সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছিল। কিন্তু বারি-২ জাতের সমস্যা হলো, গাছটা বেশি বড় এবং কান্ডগুলো নরম হয়। যার কারণে সামান্য ঝড়-বৃষ্টিও সামলাতে পারে না এই গাছগুলো, ভেঙে পড়ে। এই জাতের আবাদে কৃষকের ক্ষতি বাড়ে। তাই নতুন জাতটা আনা হয়েছে। এই জাতের গাছ শক্তপোক্ত হয়, প্রতি শতকে ৪০ কেজির বেশি সূর্যমুখী বীজ পাওয়া যায়।
সম্প্রতি টেবুনিয়ায় গিয়ে দেখা গেল, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফুটে আছে সূর্যমুখী ফুল। শত-শত মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। ভিড় সামাল দিতে বাড়তি লোক নিয়োগ দিতে হয়েছে।