দ্বিতীয় সাবমেরিনের যুগে বাংলাদেশ

অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ সেপ্টম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুয়াকাটায় অবস্থিত দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সি-মি-উই-৫) উদ্বোধনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় আরও কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুযোগ থাকা সত্বেও প্রযুক্তির জ্ঞান না থাকায় বিএনপি দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা দেশ চালাবে তাদের যদি দেশকে এগিয়ে নেয়ার চিন্তাভাবনা না থাকে, স্বপ্ন না থাকে এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকে তবে দেশ যে কত পিছিয়ে যায় তা নিশ্চয়ই দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাবমেরিন কেবলের সংযোগটা যখন দক্ষিণ এশিয়ায় আসে তখন ক্ষমতাসীন বিএনপি জোট সরকার বিনা পয়সার এই ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এজন্য প্রস্তাবও বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া বলে দিয়েছিল এটা নাকি সংযু্ক্ত করা যাবে না। কারণ এটা সংযুক্ত করলে বাংলাদেশের সকল তথ্য বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। তখন বিএনপির সকল মন্ত্রী ও এমপিরাও এই সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নয়। ফলে সেই প্রস্তাব নাকোচ হয়ে গেল। আমরা বিনাপয়সায় সংযোগটা পেলাম না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুইবার বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছিল বাংলাদেশের। কিন্তু প্রযুক্তির জ্ঞান না থাকায় তা নাকচ করে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে বিএনপি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হবার উদ্যোগ নিলাম, কিছু পদক্ষেপ নিলাম, কিছু কার্যক্রম করেও গেলাম। পরবর্তীতে যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসলো তখন তখন সীতাকুন্ড থেকে এটা নিয়ে যাওয়া হলো কক্সবাজার। সেখানে বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হলো। একটা ক্যাবল দিয়ে যেহেতু এটা কক্সবাজারে তাই এটা দিয়ে বাংলাদেশকে কভার করা কিংবা গতিটা ধরে রাখা বেশ কঠিন কাজ ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। আজ আমাদের সৌভাগ্য যে সেটা উদ্বোধন করতে পেরেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সবসময় অবহেলিত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া কোনো সরকারই এই এলাকার উন্নয়নের দিকে ফিরেই তাকায়নি। এটা একদম বাস্তব সত্য। যাইহোক আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান আছে। এর মধ্যে আছে কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবন, প্রশাসনিক ভবন। তিনি বলেন, কুয়াকাটার সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন আজ আমরা উদ্বোধন করছি। এই কুয়াকাটা অনেকতো তো চিনতই না। এখানে আমাদের দেশের এমন একটা যায়গা যেখানে দাঁড়ালে দেখা যায় সাগরের ভেতর থেকে সূর্য উদিত হচ্ছে এবং সাগরের মধ্যে সূর্য অস্তমিত হচ্ছে। এমন একটা চমৎকার জায়গা এখন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।

এর আগে চলতি বছরের ৩১ জুলাই একবার এই ক্যাবলের উদ্বোধনের তারিখ দেওয়া হয়েছিল। তার আগে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ক্যাবলটি উদ্বোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

তবে রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি বিটিসিএল সঞ্চালন লাইনের কাজ ঠিকমতো শেষ করতে না পারায় এতদিনের এই বিলম্ব। অথচ দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে বিএসসিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন কয়েকদিন আগে জানান, উদ্বোধনের দিন থেকেই ২০০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ পাব। পর্যায়ক্রমে তা ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএসে উন্নীত হবে।

এর আগে, গত ২১ ফ্রেব্রুয়ারি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এই কনসোর্টিয়ামের উদ্বোধন হয়। গত ১৬ জানুয়ারি হাওয়াইয়ের হনুলুলুতে ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৪ টেরাবাইট পার সেকেন্ড (টিবি/এস) গতির এই সি-মি-উই-৫ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। এই কনসোর্টিয়ামে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশ এবং এই ক্যাবলের মোট ল্যান্ডিং পয়েন্ট রয়েছে ১৮টি।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় মাইটভাঙ্গা গ্রামে ২০১৩ সালের শেষের দিকে ১০ একর জমির ওপর ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনটি। প্রকল্পটির কাজ শেষ করার পর ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার পরীক্ষামূলক শুরু হয়। সাগরের নিচ দিয়ে ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল লাইন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে কুয়াকাটার স্টেশন থেকে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে তা সংযোগ স্থাপন করা হয়।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় মাইটভাঙ্গা গ্রামে ২০১৩ সালের শেষের দিকে ১০ একর জমির ওপর ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনটি। প্রকল্পটির কাজ শেষ করার পর ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার পরীক্ষামূলক শুরু হয়। সাগরের নিচ দিয়ে ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল লাইন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে কুয়াকাটার স্টেশন থেকে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে তা সংযোগ স্থাপন করা হয়।

জাপানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনইসি বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় গত দুই বছর ধরে কাজ করে। ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে সমুদ্র তটে আসা সঞ্চালন লাইন বিচ ম্যানহোল, হ্যানহোল, জয়েন্ট ম্যানহোল হয়ে কুয়াকাটার গোড়াআমখোলা পাড়ায় দ্বিতীয় ল্যাংন্ডিং স্টেশনে সংযুক্ত হয়েছে।

নতুন এই সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ নতুন করে ১ হাজার ৫০০ গিগাবাইটের (জিবি) বেশি ব্যান্ডউইডথ পাবে। তবে আজ থেকে পেতে শুরু করবে ২০০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ।

উল্লেখ,সি-মি-উই-৫ হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-৫-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই কনসোর্টিয়ামে রয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, জিবুতি, ইয়েমেন, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি ও ফ্রান্স।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭