ধস নামতে পারে চামড়া শিল্পে

চামড়া শিল্পের প্রধান উপকরণ কাঁচা চামড়ার সিংহভাগ জোগান আসে কোরবানি ঈদে। এ সময় যে চামড়া সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীরা তাতেই সারা বছর চলে ট্যানারি শিল্পের কারখানাগুলো। বর্তমানে দেশের রফতানি খাতেও ভালো অবস্থানে রয়েছে চামড়া শিল্প।

চামড়া শিল্প দেশের সম্ভাবনাময় খাতের মধ্যে অন্যতম ধরেই সরকারও বেশ কাজ করছে এই শিল্পের জন্য। কিন্তু এ বছর ট্যানারি স্থানান্তর নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ এবং চামড়া প্রক্রিয়াকরণে লবণ সঙ্কটসহ বেশ কিছু কারণে কোরবানি ঈদে চামড়া সংগ্রহ নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। এতে চামড়া ব্যবসা ও রফতানি আয়েও বড় ধরনের ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বছর চামড়া শিল্পে যে অনিশ্চিত তৈরি হয়েছে এ জন্য ট্যানারি মালিকরা শিল্প স্থানান্তরের জটিলতাকে দায়ী করছে। তারা বলেছেন, সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে সরকার বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। এজন্য চামড়া শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া ট্যানারি স্থানান্তর জটিলতায় ১৫৪টি ট্যানারি মালিককে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। সুবিধাজনকভাবে ব্যবসা করতে ব্যর্থ হলে ভরা মৌসুমে কোরবানির চামড়া কেনা বন্ধ করে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানিয়েছে। পরে কোরবানির ওই চামড়া যাতে কম মূল্যে কিনতে পারে।

সরকার পক্ষ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের বিষয়ে অনেকবার সর্তক করেও কোন লাভ হয়নি এমন অভিযোগ রয়েছে ট্যানারি মালিকদের বিরুদ্ধে। এদিকে ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা বকেয়া থাকায় বিপাকে রয়েছে সারাদেশ থেকে কাঁচ চামড়া সংগ্রহ করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। এছাড়া চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বাজারে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত লবণের সঙ্কট ব্যাপক আকারে তৈরী হয়েছে। কোরবানির আগে এমন সঙ্কটের কারণে বিপদে পড়েছেন ট্যানারি মালিকরা। তাদের আশঙ্কা, লবণের চড়া দাম অব্যাহত থাকলে কোরবানির প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে পারে।

গতবারে চেয়ে এবার চামড়ার দাম কম হতে পারে এমন আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে প্রভাবিত হবে বলেও জানান তারা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ১১৬ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় এই খাতে রফতানি আয়ের তুলনায় ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি।

আগের বছরের তুলনায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি বাড়লেও সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে এই খাতে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এই সম্ভবনাময় খাতের রফতানি আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার সাভারে চামড়া শিল্প নগরী তৈরী করেছে। কিন্তু স্থানান্তরের জটিলতায় এই ব্যবসা আরো ক্ষতির দিকে যাচ্ছে। তবে সাভারে স্থানান্তর হলে এই শিল্প আরো ভালো অবস্থানে ফিরে আসবে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। নিয়মিত জরিমানা গুনলেও এখনও রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তারের আলামত দেখা যায়নি।

ঢাকা ট্যানারি মোড়ের আশপাশে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লবণ দেওয়া চামড়াগুলোকে পরবর্তী প্রক্রিয়ায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাস্তার ওপরেই। শেরেবাংলা রোডের ড্রেন উপচে পুরো রাস্তায় কেমিক্যালের কালো পানি ছেয়ে গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছেন, প্রতিদিন জরিমানা দিয়ে হাজারিবাগে ট্যানারি পরিচালিত হলেও জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে সরকারের নজরদারি জরুরি। কারণ অনেক মালিকের পক্ষে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে ট্যানারি পরিচালনা করা সম্ভব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্যানারি মালিক বলেন, আমরা ব্যবসা বন্ধ করে বসে আছি সরকারের নির্বাহী আদেশের অপেক্ষায়। অন্তত এই মৌসুমে যেন কোনো ব্যবস্থা করে দেয় সরকার।