নাটোরে মুজিববর্ষে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী-মুজিববর্ষ উপলক্ষে নাটোরে ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সহজ অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মানুষ এখন বিশ্বের সর্বাধুনিক ও নিরাপদ পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছেন। বিদ্যমান পাঁচ বছরের পাশাপাশি থাকছে দশ বছরের ই-পাসপোর্ট।

ই-পাসপোর্ট পাঁচ বছর অথবা দশ বছর মেয়াদের জন্যে করা হচ্ছে। আবার ৪৮ কিংবা ৬৪ পৃষ্ঠারও হতে পারে। আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে নিয়মিত পাসপোর্ট, সাত দিনের মধ্যে জরুরী পাসপোর্ট এবং মাত্র দুই দিনের মধ্যে অতি জরুরী পাসপোর্ট ডেলিভারী দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভ্যাটসহ ফি যথাক্রমে চার হাজার ২৫ টাকা, ছয় হাজার ৩২৫ টাকা এবং আট হাজার ৬২৫ টাকা। দশ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার ক্ষেত্রে ফি যথাক্রমে পাঁচ হাজার ৭৫০ টাকা, আট হাজার ৫০ টাকা এবং দশ হাজার ৩৫০ টাকা। পাঁচ বছর এবং ৬৪ পৃষ্ঠার ক্ষেত্রে ভ্যাটসহ ফি যথাক্রমে ছয় হাজার ৩২৫ টাকা, আট হাজার ৬২৫ টাকা এবং বারো হাজার ৭৫ টাকা। আবার দশ বছর এবং ৬৪ পৃষ্ঠার ক্ষেত্রে ফি যথাক্রমে আট হাজার ৫০ টাকা, দশ হাজার ৩৫০ টাকা এবং তেরো হাজার ৮০০ টাকা। অনলাইনে এ ফি প্রদান করতে হবে।

আবেদনও করতে হবে অনলাইনে। এক্ষেত্রে ছবি সংযুক্ত করার প্রয়োজন নেই, নেই সত্যায়িত করার আনুষ্ঠানিকতা। অনলাইনের প্রিন্ট আউট কপি, পাসপোর্ট ফি প্রদানের রশিদ আর প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে গেলে প্রয়োজনীয় তথ্য স্ক্যান করে, ছবি তুলে এবং হাতের দশটি আঙুল ও চোখের আইরিশ স্ক্যান করে পাঠিয়ে বিশেষ সার্ভারে দেয়া হবে সদর দপ্তরে। পুলিশ ভেরিফেকেশন রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট থানা বা পুলিশের বিশেষ শাখা সরাসরি অনলাইনে সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেবে। পাসপোর্ট স্থাপিত বিশেষ সার্ভারটি ২৪ ঘন্টা চালু থাকছে বলে জানা গেছে।

ই-পাসপোর্টের পাতায় মোবাইল ফোনের সিমের মত ক্ষুদ্র একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ সংযুক্ত আছে। ঐ চিপে সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক তথ্য ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ যন্ত্রে দেখতে পারবে।
নাটোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৪ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর নাটোরে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে বিদেশ ভ্রমণের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ইতোমধ্যে ৪৭টি আবেদন জমা হয়েছে এবং ১১টি প্রস্তুত ও ১০টি ডেলিভারী দেওয়া হয়েছে। ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি বিদ্যমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও চালু থাকছে।

ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম সমাধা করতে নাটোর পাসপোর্ট অফিসে বিশেষ সার্ভার প্রতিস্থাপন ছাড়াও আবেদনকারীর তথ্য সংগ্রহে দুইটি ওয়ার্ক ষ্টেশন চালু করা হয়েছে। কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ঢাকায় যেয়ে এ দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আলী আশরাফ একদিনের এবং রেকর্ড কীপার মোঃ মোশাররফ হোসেন দুই দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন।

জাহাজের নাবিক মোঃ রেজোয়ান পারভেজ ছুটিতে বাড়ি এসে ই-পাসপোর্ট করে নিয়েছেন। গত সোমবার ডেলিভারী নিতে এসে তিনি বলেন, অত্যাধুনিক এ পাসপোর্ট বিদেশে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। আর ১০ বছর মেয়াদী হওয়াতে অনেকদিন ধরে এটি ব্যবহার করতে পারবো।

বিদ্যমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের মেয়াদ প্রায় দুই বছর থাকা সত্ত্বেও শুরুতেই ই-পাসপোর্ট গ্রহিতা হওয়ার ইচ্ছাতে পাসপোর্ট করে নিয়েছেন নাটোর শহরের আলাইপুর মহল্লার কাজী তৌহিদুল আলম। পুলিশ ভেরিফিকেশনের আনুষ্ঠানিকতা না থাকাতে মাত্র পাঁচ কর্ম দিবসে পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বসিত কাজী তৌহিদুল আলম বলেন, কালের সাক্ষী হয়ে থাকলাম।

নাটোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ আলী আশরাফ বাসস’কে বলেন, মুজিববর্ষে নাগরিক সেবার পরিধে বৃদ্ধিতে অত্যাধুনিক ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। নাগরিকবৃন্দ দ্রুততম সময়ে অনায়াসে এ পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারবেন। সারা বিশ্বের ৩৭ তম দেশ হিসেবে আমাদের দেশে ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে এবং নিরাপত্তার দিক থেকে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় নিরাপদ পাসপোর্ট-যা জাল করার কোন সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন এ কর্মকর্তা।