নিজের অবস্থা তৈরি করেই বিয়ে করবো: নার্গিস নাহার

মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ে ছাত্রী উপস্থিতি না থাকায় প্রকাশ পেয়েছে অসংখ্য বাল্যবিয়ের খবর।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউপির সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নার্গিস নাহারসহ ৯ ছাত্রী একই শ্রেণিতে পড়তো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় তার সহপাঠী আটজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। ফলে বিদ্যালয় খোলার পর থেকে ছেলে সহপাঠীদের সঙ্গে পাঠদানে একাই অংশ নিচ্ছে।

নার্গিস নাহার জানান, দেড় বছরে আমার আট বান্ধবীর বিয়ে হয়েছে। এখন শুধু আমিই বাকি রয়েছি। স্কুল খোলার পর আমার বান্ধবীদের বিয়ের কথা জানতে পারি। আমি আমার বাবা-মাকে বলেছি সেই কথা। আমার পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি করে নিজের অবস্থা তৈরি করেই বিয়ে করবো। এর আগে নয়। কেন-না নিজে স্বাবলম্বী না হয়ে অন্যের কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।

নার্গিস আরো জানায়, বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে যাওয়া এখন আমি একা। ক্লাসে আসলেই মন খারাপ হয়ে যায়। কারো সঙ্গে কোনো কিছু শেয়ার করতে পারি না। তাই মন খারাপ করেই ক্লাস করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মজিদ চৌধুরী বলেন, ৯ম শ্রেণিতে ৩৬ জন ছাত্র-ছাত্রী। এরমধ্যে ৯ জন ছাত্রী আর ২৭ জন ছাত্র। বর্তমানে স্কুল খোলার পর বাল্য বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি মেয়েদের বিদ্যালয়মুখী করতে।

প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ২২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৩ জন ছাত্রী। এদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মেয়ে এবং ৭০ শতাংশ ছাত্র বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে। বাকিদের খোঁজ-খবর নিতে শিক্ষকদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যালয়ে না আসার প্রকৃত কারণ তুলে ধরবেন।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, সদরের পাঁচটি স্কুলের ৬৩ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় শতকরা ১৩ ভাগ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। ঝড়ে পড়া মেয়েদের অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। আগামী সপ্তাহে জেলার প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। তথ্য নিয়ে ডিসি, এসপিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মিটিংয়ে উত্থাপন করে বিয়ে রেজিস্টার কাজীদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডিসি মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে গৃহীত সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এটি প্রতিরোধে কুড়িগ্রামে ‘বেটার ফিউচার ফর গার্ল’ নামে আমাদের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। তথ্য-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান