নিম্ন মধ্যবিত্তদের ফ্ল্যাট কেনায় সুবিধা দিচ্ছি : ইঞ্জিনিয়ার আল আমিন

প্যারাডাইস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন্স লিমিটেড। এ দেশের আবাসন ব্যবসায় পরিচিত ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। প্রকৌশলী মোহাম্মদ আল আমিন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি আজকের বাজার পত্রিকা ও এবি টিভির সঙ্গে এ দেশের আবাসন ব্যবসার নানাদিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তাঁর সঙ্গে কথপোকথনের চুম্বক অংশ তাঁরই ভাষায় ছাপা হলো।

রিয়েল এস্টেট সেক্টরের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই যা বলতে হয়,২০১০ সাল থেকে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে কিছুটা মন্দাভাব চলছে। আমাদের বছরে দুইটা মেলা হয়। ২০১৬ সালে উইন্টার ফেয়ার হলো ডিসেম্বর মাসে, এই মেলার পর একটু টার্নিং মোমেন্ট এসেছিলো, ব্যবসা কিছুটা গতি পেয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিলো। কিন্তু আবার এ বছর বাজেটের কারণে আমার মনে হচ্ছে ব্যবসা কিছুটা নিম্নমুখী হবে।

বাজেটে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
বাজেটে সব ব্যবসায়ীরই প্রত্যাশা অনেক কিছু থাকে। আমাদেরও আশা ছিলো যে রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধনের বিষয়ে যা চেয়েছিলাম তা হয়তো পাবো। আমাদের দেশে এখন রেজিস্ট্রির খরচ ১৪ থেকে সাড়ে ১৪ ভাগ। অথচ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে এ খরচ ৬ থেকে ৭ ভাগ। আমরা দাবি করেছিলাম খরচটা যেন চলে আসে। আমরা রেজিস্ট্রির ব্যাপারে চেয়েছিলাম সেকেন্ডারি মার্কেট তৈরির জন্য। সেকেন্ডারি মার্কেট বলতে বোঝাচ্ছি একটা ফ্যাট আপনি একবার কিনেছেন, এটি যখন রেজিস্ট্রি করেছেন, ১৪ পারসেন্ট কস্টিং দিয়ে আপনি রেজিস্ট্রি করেছেন। এই আপনি যখন আবার দ্বিতীয় ব্যক্তি আরেকজনের কাছে ফ্যাট বিক্রি করবেন, তখনও কিন্তু ১৪ পারসেন্ট দিতে হয়। তার মানে বারবার কিন্তু একই কস্টিং হচ্ছে। আমরা চাচ্ছি যে, এটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত ব্যবস্থায় সেকেন্ডারি মার্কেটের ক্ষেত্র যখন আপনি সেল করবেন, তখন কিন্তু রেজিস্ট্রি খরচটা কমে যায়, কমিয়ে দেয় অন্যান্য দেশে। আমরা ওইটাও চেয়েছিলাম যে, সেকেন্ডারি মার্কেটের জন্য যে রেজিস্ট্রি, ওইটা যখন সেকেন্ড পার্টি কিনবে, তখন যাতে রেজিস্ট্রি খরচটা কমিয়ে দেয়া হয়।

আবাসন খাতের মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে
যখনই বাজেটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে আমরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়, মাননীয় অর্থমন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংক ও মাননীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী, সবার সঙ্গে আমরা একাধিকবার রিহ্যাবের প থেকে সভা করেছি। সভা করে রিয়েল এস্টেট সেক্টরের মন্দাভাব যাতে কাটানো যায় এজন্য আমরা কিছু দাবি করেছিলাম। আমাদের প্রথম দাবি ছিলো, আবাসন খাতের জন্য একটা প্রণোদনা; বিশ হাজার কোটি টাকার একটা প্রনোদনা প্যাকেজ অনুমোদন। যেমন ওই প্যাকেজটাতে ইন্টারেস্ট কিছু কম থাকবে। আরেকটা থাকবে যে সব দুর্বল প্রকল্প আছে, এই সিক প্রোজেক্টগুলোকে আমরা দিবো এবং দেওয়ার পর ছয় মাসে তাদের কোনো রিটার্ন … থাকবে না এবং ছয় মাস পরে তাদের শিডিউল শুরু হবে, পেমেন্ট শুরু হবে -এরকম একটা আমরা দাবি জানিয়েছিলাম।

প্যারাডাইস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন্স লিমিটেডের ব্যবসা
আমাদের প্রায় ১০০’র বেশি প্রকল্প হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রায় দুই হাজারের ওপরে ক্লায়েন্ট আছেন। এখনও আমাদের অনেকগুলো প্রকল্প চলমান। কিছু প্রজেক্ট ভালো অবস্থানে আছে, কিছু কিছু প্রজেক্টে মন্দাভাবের কিছুটা প্রভাব পড়েছে। আমাদের জানা মতে,বিভিন্ন কোম্পানির অনেক প্রোজেক্ট কিন্তু বন্ধ হবার কাছাকাছি, অনেক প্রোজেক্ট একদমই বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের কোনো প্রজেক্ট বন্ধ হয়নি। কিছু প্রজেক্ট কম্পারেটিভলি শিডিউল টাইমে দিচ্ছি, তারপরও দুই একটা প্রজেক্ট হস্তান্তরে কিছুটা দেরি হচ্ছে। আগেই বলেছি, বর্তমান মন্দাভাবের মধ্যে তো আমরাও আছি, তবুও আমরা আশা করি অনেকের চেয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা কাজটা করতে পারছি এবং আমাদের বিক্রিও কিছুটা হচ্ছে।

গ্রাহক সেবা ও সুবিধা
আমাদের সুদক্ষ একটা প্রকৌশল দল বা ইঞ্জিনিয়ারিং টিম আছে। একজন গ্রাহক যখন জানান যে তার একটা অসুবিধা হয়েছে, আমরা চেষ্টা করি যত দ্রুত সম্ভব আমাদের ইঞ্জিনিয়ার, সুপারভাইজার এবং যারা টেকনিক্যাল কাজ করে তাদের মাধ্যমে ওই গ্রাহককে সার্ভিস দিতে । আমাদের মার্কেটিং টিম যারা আছে তারাও গ্রাহককে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে।

ফ্ল্যাট কিনতে যে কারণে আমাদের উপর ভরসা রাখবেন
কোনো ক্রেতা যখন ফ্ল্যাট কিনেন, তার প্রাথমিকভাবে দেখা উচিত যে, সেই কোম্পানি আসলে কতগুলো ফ্ল্যাট হ্যান্ডওভার করেছে। আমি একসঙ্গে পঞ্চাশটা প্রজেক্ট রান করলাম কিন্তু একটাও হ্যান্ড ওভার করতে পারলাম না, তাহলে কিন্তু আমি সফল কোম্পানি না। আমি বিশটা প্রোজেক্ট করে যদি বিশটা প্রোজেক্টই সফলভাবে বুঝিয়ে দিতে পারি তখন কিন্তু আমি সাকসেসফুল বিজনেসম্যান। আমাদের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রত্যেকটা প্রজেক্ট আমরা সময়মতো গ্রাহককে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। সামাজিক, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা প্রাকৃতিক কিছু কারণে হয়তো সামান্য কিছু দেরি হয়েছে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে আমরা অনেকের চেয়ে প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রজেক্টগুলো হস্তান্তর করতে পেরেছি । এটা আমাদের কোম্পানির অন্যতম প্রধান দিক।

পাশাপাশি পরিমাণ ও গুণগতমানের ব্যাপারে আমরা আপোস করি না। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম, সুপারভাইজার, প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার, প্রজেক্ট ম্যানেজার থেকে শুরু করে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারকে আমরা এমনভাবে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকি যেন ‘কোয়ালিটি ফার্স্ট’।

কোম্পানির চলমান অফার
বর্তমানে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের জেলা শহরগুলোতে আমাদের প্রজেক্ট আছে। আমাদের কিছু প্রজেক্ট আছে এখন চলমান, কিছু ফাউন্ডেশন লেভেলে আছে, কিছু শেষের দিকে। আমাদের কিছু অফার আছে, যেমন রেডি ফ্ল্যাট। রেডি ফ্ল্যাটগুলোর ক্ষেত্রে একসাথে যদি পেমেন্ট করে, আমরা তাদেরকে একটা ছাড় দিচ্ছি। আমাদের কয়েকটা প্রজেক্টে রেডি ফ্ল্যাট আছে। আমরা ইতোমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। মফস্বল এলাকায় আমাদের ফ্যাট আছে মধ্যবিত্তদের জন্য। ঢাকার ভেতরে কিছু জায়গায় নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাট আছে। আমরা বলতে চাইছি, সব শ্রেণীর মানুষের আমাদের জন্যই প্রকল্প আছে।

নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাট কেনায় সুবিধা দিচ্ছি
নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য আমাদের দুই-তিনটা দীর্ঘমেয়াদী প্রজেক্ট আছে, যেগুলো ঢাকার মধ্যে কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের একটু কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। এসব এলাকায় আমাদের পাঁচ বছর, ছয় বছর মেয়াদী প্রকল্প আছে যেগুলো নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতারা সহজে নিতে পারেন, এগুলোতে কিস্তির পরিমাণ এক লাখ টাকারও কম।

ফ্ল্যাট কেনার আগে যা যা দেখা উচিত
আগে দেখতে হবে কোম্পানির প্রতিষ্ঠার সময়, তারপরে কোম্পানির রাজউক প্ল্যান আছে কি না। তার পর দেখতে হবে কোম্পানির প্রকল্প হস্তান্তরের অভিজ্ঞতা কী রকম, কিছু ফিনিশিং প্রজেক্ট সশরীরে দেখলেও গ্রাহক কোম্পানি সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন।

ফ্ল্যাট কেনাবেচায় সমস্যা হলে
রিহ্যাবে একটা কাস্টমার সার্ভিস সেল আছে, ক্রেতা কিংবা মালিক কোনো সমস্যায় পড়লে ওই সেলে আবেদন করতে পারেন। আমরা দুই পক্ষকে ডেকে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করি। গত তিন-চার বছরে রিয়েল এস্টেটের বেশির ভাগ সমস্যা আমরা সমাধান করে দিয়েছি। আমি নিজেও ওই কমিটিতে কাজ করেছি। অনেক ক্রেতা ও জমির মালিক আমাদের কার্যক্রমে তাদের সন্তোষের কথা জানিয়েছেন।

প্রকৌশলী মোহাম্মদ আল আমিন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
প্যারাডাইস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন্স লিমিটেড