নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সরবরাহ পেতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের আহ্বান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে উন্নীত হওয়ার পথে রয়েছে এবং এলক্ষ্যে সরকার সকল শিল্পখাতে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সংযোগ অব্যাহত রাখতে ইতোমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন,অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে সরকার গ্যাস সরবরাহ করতে পারছেনা। তাই গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে তিনি উদ্যোক্তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে শিল্প-কারখানা স্থাপন ও স্থানাস্তরে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানি নিরাপত্তা: ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা’ বিষয়ক স্টেকহোল্ডার সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। রাজধানীর মতিঝিল ডিসিসিআই কার্যালয়ে ওই সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাস করা হবে এবং এ খাতে সরকার ভর্তুকি হ্রাসের পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যে একটি ‘মূল্য নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্যাস অনুসন্ধানের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রচুর সময় ও বিপুল পরিমানে বিনিয়োগের প্রয়োজন হলেও অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কোন বিকল্প নেই। তিনি জানান, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০০-৬০০ এমএমসিএফ গ্যাসের স্বল্পতা রয়েছে। নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে এবং এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়া ব্যয় হ্রাসে শিল্পখাতে জ্বালানি সহায়ক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়নো, সৌরবিদ্যুৎ এবং নেট মিটারিং ব্যবস্থা বৃদ্ধির জন্য তিনি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন,স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে স্মার্ট জ্বালানি ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে প্রাথমিক জ্বালানী উৎসে আরও বেশি বিনিয়োগ, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সেগুলোর সংষ্কারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সদস্য মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। তিনি শিল্প-কারখানায় নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাগুলোকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে এখনও গ্যাস-বিদ্যুৎ, পরিবহনসহ অন্যান্য সেবা শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি এবং বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেখানে সকল সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এতে উদ্যোক্তারা শিল্পাঞ্চলে কল-কারখান স্থাপনে উৎসাহিত হবেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, আমাদের জল ও স্থল সীমায় গ্যাস প্রাপ্তির প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে। এজন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান শিল্পখাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহবান জানান এবং সৌরি বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করেন।
সামিট পাওয়ারের পরিচালক ফয়সাল করিম বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানিতে একটি সুনিদিষ্ট কর কাঠামোর অনুসরণের আহ্বান জানান। পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে আরও শক্তিশালী করার আহবান জানান এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের অব্যবহৃত তাপ শিল্পখাতে ব্যবহারের প্রস্তাব করেন।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, জ্বালানির দামের বিষয়ে আরও স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন এবং জ্বালানীর অনুমানযোগ্য মূল্যের বিষয়ে একটি দীর্ঘময়োদী পরিকল্পনা থাকা অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগকারিদের সংগঠন ‘ফিকি’র সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় এবং এফবিসিসিআই সহসভাপতি হাবিব উল্লাহ ডনও আলোচনায় অংশ নেন।