পরীমণির রিমান্ড: দুই বিচারকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট

চিত্রনায়িকা পরীমণিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডে পাঠানো নিম্ন আদালতের দুই বিচারকের ব্যাখ্যায় হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ওই ব্যাখ্যা হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন (হেয়) করেছে বলে দাবি আদালতের।

হাইকোর্ট বলেছেন, দুই ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ব্যাখ্যায় বলেছেন, রাষ্ট্র মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছে। পরীমণি বিদেশি মদ, আইস ও এলএসডিসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র সম্প্রতি এলএসডি গ্রহণ করে আত্মহত্যা করেছেন। উনারা (দুই ম্যাজিস্ট্রেট) উপরোক্ত বিষয়ে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সরল বিশ্বাসে ভুল বলে দাবি করেছেন।

হাইকোর্ট বলেন, তারা রিমান্ডে নেয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের গাইড লাইনকে লঙ্ঘন করেছে। তদের জবাবে আমরা সন্তুষ্ট না। তারা তাদের ভুল স্বীকার করে না। তারা এ জবাব দাখিলের মাধ্যমে হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করেছে। এ বিষয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর আদেশ দেয়া হবে

এ সময় মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তাও আদালতে যুক্ত ছিলেন। তাকে হাজিরা থেকে অব্যহতির আবেদন জানালে তা নাকচ করে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর আইওকেও হাজির থাকতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি লে এম জাহিদ সারোয়ার কাজলের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দিয়েছেন।

মুক্তি পেয়ে কী বার্তা দিলেন পরীমণি:-

গত ১ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়িকা পরীমণির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডের যৌক্তিকতা নিয়ে অধস্তন আদালতের দুই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চান হাইকোর্ট। ১০ দিনের মধ্যে এই ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, রিমান্ড মঞ্জুরকারী ঢাকার সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা কি উপাদানের ভিত্তিতে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন এর ব্যাখ্যা জানাতে হবে। এ ছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফাকে ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার নথিসহ (কেস ডকেট) আদালতে হাজির হতে বলা হয়। পরীমণির বারবার রিমান্ডে নেয়ার আবেদনের বিষয়ে তার অবস্থান সেদিন হাইকোর্টকে জানাতে বলা হয়। ওই আদেশ অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার দুই ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ব্যাখ্যা হাইকোর্টের কাছে দাখিল করেন। বুধবার এ বিষয়ে শুনানি হয়।

বনানীতে পরীমণির বাসায় অভিযান চালিয়ে ৪ আগস্ট তাকে আটক করা হয়। পরে বনানী থানায় পরীমণির নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে র‌্যাব। এরপর প্রথম দফায় গত ৫ আগস্ট চারদিন তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানালে গত ১০ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) দেবব্রত বিশ্বাস তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানালে গত ১৯ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম পরীমণির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মূলত দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরকারী ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরকারী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট।

জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট পরীমণির জামিন আবেদন নাকচের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। গত ২২ আগস্ট দায়রা জজ এ আবেদন শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন রাখেন। পরদিন ‘আর্লি হিয়ারিং’ বা নির্ধারিত সময়ের আগে শুনানি চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। এতে ফল না পেয়ে ২১ দিন পর শুনানির দিন রাখার আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়ে ২৫ আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমণি।

মাদক মামলায় জামিন পেলেন পরীমণি:-

শুনানি নিয়ে ২৬ আগস্ট বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের নেতৃত্বাধীন এই বেঞ্চ রুল দেন। রুলে জামিন আবেদন শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। জামিন আবেদনের শুনানি দ্রুত তথা দুই দিনের মধ্যে করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সাথে ১ সেপ্টেম্বর রুল শুনানির তারিখ রাখা হয়।

এরই মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পরীমণিকে তিন দফায় সাত দিন রিমান্ডে নেয়ার প্রেক্ষাপটে স্বতঃপ্রণোদিত রুল চেয়ে ২৯ আগস্ট একই বেঞ্চে একটি আবেদন দাখিল করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। আবেদনে বলা হয়, তিন দফায় সাত দিনের মধ্যে প্রথমে চার দিন, দ্বিতীয় দফায় দুদিন ও তৃতীয় দফায় পরীমণিকে এক দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গুরুতর প্রকৃতির অপরাধের ক্ষেত্রে সাধারণত দীর্ঘসময় রিমান্ডে নেয়া হয়ে থাকে। জাতীয় নিরাপত্তা বা জনগুরুত্ব বিষয়ে গুরুতর মামলায় আদালতের এত দিনের রিমান্ডের অনুমতি দিতে দেখা যায়। পরীমণিকে এতদিনের রিমান্ডে নেয়া সংবিধানের চেতনা, মৌলিক অধিকার ও সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনার (আটক ও রিমান্ড-সংক্রান্ত) লঙ্ঘন। ১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যাখ্যা তলব করেন এবং আইওকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান