পর্যটকদের জন্য দেশে নিরাপত্তা সমস্যা নেই : শেখ কামরুজ্জামান রনি

মানুষ স্বভাবতই ঘুরতে পছন্দ করে। আর স্থানীয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের আগ্রহ বেশিই থাকে। ঈদ সামনে রেখে হোটেল, মোটেল এবং টিকেটের চাহিদা বেড়ে যায়। ৫-৭ বছর ধরে পর্যটন সেক্টরটি বিকশিত হচ্ছে । সরকারও পর্যটন শিল্প বিকাশে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এখন কক্সবাজার ভ্রমণে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো বেশ ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। কিছুদিন আগে মেরিন ড্রাইভ চালু হলো। এটিকে পর্যটন সেক্টরের জন্য নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের আরও অনেক বিষয় নিয়ে আজকের বাজার ও এবি টিভির সঙ্গে কথা বলেছেন, ইউনাইটেড কনসালটেন্সি এন্ড ট্যুরসের সত্ত্বাধিকারী, শেখ কামরুজ্জামান রনি। তাঁর সঙ্গে কথপোকথনের চুম্বক অংশ তাঁরই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ ঘুরতে পছন্দ করে। আর নানা কারণে দেশের ভেতরের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের আগ্রহ বেশি। ঈদকে সামনে রেখে হোটেল, মোটেল এবং টিকেটের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। গত ৫-৭ বছর ধরে এই সেক্টরটি বিকশিত হচ্ছে বলা যায়। বর্তমান সরকারও পর্যটন সেক্টর নিয়ে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো বেশ ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। কিছুদিন আগে মেরিন ড্রাইভ চালু হলো। এটিকে আমরা পর্যটন সেক্টরের জন্য নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখছি। আগে টেকনাফ যেতে যে ধরনের সমস্যায় পড়তে হতো, মেরিন ড্রাইভ চালু হওয়ার পর সে সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন অনেক সহজেই টেকনাফে যাতায়াত করা যায়। দিন দিন কক্সবাজার পর্যটন বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এটা সরকারের উদ্যোগেই সম্ভব হয়েছে।

ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস বিজনেস
এটা একটা শখের পেশা বলতে পারেন। আমরা ভ্রমণ করতে পছন্দ করি বলেই এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। সবাই শান্তিপ্রিয় ভ্রমণ পছন্দ করে। কেউই ভ্রমণে গিয়ে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। হোটেল, যাতায়াত, থাকার নিরাপত্তাসহ অনেক বিষয় রয়েছে যেখানে তথ্য ঠিক-ঠাক জানা না থাকলে সমস্যায় পড়তে হয়। আর আমরা সেই সেবাটিই দিচ্ছি। সেবার মানসিকতা থেকেই এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। এরপর বিশ্বের এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে চাইলেও মানুষ একা যেতে পারে না। সে সকল জায়গায় যেতে আমরা সহায়তা করি। এছাড়া ভিসা জটিলতা, টিকেট জটিলতা তো রয়েছেই। আমরা এই জায়গাগুলোতে কাজ করছি। যেন একজন মানুষ সহজেই তার ভ্রমণ উপভোগ করতে পারে আমরা সে চেষ্টা করছি।

ট্যুরিজমসেক্টরের চ্যালেঞ্জ
কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে। আমরা সেগুলো ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা হচ্ছে। সরকারও এ বিষয়ে বেশ সাহায্য করছে। অনেকে বলেন, আমাদের দেশে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা রয়েছে। বিদেশি অনেক পর্যটক নিরাপত্তার সমস্যা দেখিয়ে আসতে চায় না। কিন্তু আমাদের দেশে আসলে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এখন ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে। কক্সবাজারে একটু ঘোরাঘুরি করলেই তাদের দেখা যায়। ছিনতাইকারি বা ভিুকের যে সমস্যা আগে ছিল এখন সেগুলো নেই। সরকারের চেষ্টায় এখন কিন্তু পর্যটন অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। আর অবকাঠামোগত বিষয়ে সরকার অনেকগুলো কাজ হাতে নিয়েছে। এগুলো হতে সময় লাগবে। আশা করা যায় আগামি ৫ বছরে এ সাইটগুলোও উন্নত হয়ে যাবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ তো ইসলামিক রাষ্ট্র। আমাদের সামাজিকতা, অভ্যস্ততা ও সাংস্কৃতিক কারণে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে যা সম্ভব হয় তা আমাদের এখানে সম্ভব হয় না। বিদেশি পর্যটক টানতে হলে এ বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া জরুরি। কিন্তু নানা কারণে সে বিষয়ে তো আসলে ছাড় দেওয়া যায় না। এরপরও হিসাব করলে দেখা যাবে, গত ৪/৫ বছরে আমাদের দেশে প্রচুর পর্যটক বেড়েছে।
পর্যটন সেক্টরের কিছু ব্যবসায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছেন; যেন স্বল্প খরচে পর্যটক বাড়ানো যায়। এছাড়া আমাদের দেশেও কিন্তু বেশ কিছু ফাইভ স্টার, থ্রি স্টার মানের হোটেল রয়েছে। সেগুলো আন্তুর্জাতিক মানের সেবাই দিচ্ছে। এসবের কারণেও পর্যটক সংখ্যা দিন দির বাড়ছে।

ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস সেক্টরের ভবিষ্যৎ
কিছু সমস্যা রয়েছে এ সেক্টরে। এগুলো কাটিয়ে উঠলে এবং সরকার এখন যেমন তদারকি করছে এটা চালিয়ে গেলে দেশের অন্যতম বৈদেশিক আয়ের খাতে পরিণত হতে পারে এই ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস সেক্টর। এটা দ্রুতই হবে বলে আশা রাখি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- পৃথিবীর সব থেকে বড় সমুদ্র সৈকত আমাদের কক্সবাজারে। এরপর পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন আমাদের দেশে। আমাদের এরকম আরও অনেক স্পট রয়েছে যেগুলো পৃথিবীর অন্যতম।

লক্ষ্যে পৌঁছতে করণীয়
আগেই বলেছি, সরকার যেভাবে তদারকি করছে এতেই এ সেক্টর উন্নতি শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। নির্দিষ্ট সময়ে একটা জায়গায় পর্যটন সেক্টর পৌঁছে যাবে। এর বাইরে আমরা যা করতে পারি তা হলো, মানুষকে বেশি বেশি প্রণোদনা দিতে হবে। ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস বিজনেসে নতুনদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। যারা ব্যবসা করছেন তাদের দক্ষ গাইড বাড়াতে হবে। এর পর পর্যটন বিষয়ক ইনস্টিটিউশন বাড়াতে হবে। এতে দক্ষ জনশক্তি বাড়বে। আমরা জানি যেকোনো কোনো সেক্টরেরই উন্নতির জন্য সর্বপ্রথম দক্ষ জনশক্তি বাড়ানো জরুরি। যদিও সরকারি কিছু ইনস্টিটিউশন আছে। সেগুলো পেরে উঠছে না। তাই বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করা জরুরি।

বাজেট প্রতিক্রিয়া
এ বছর বাজেটের ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। তবে একথা ঠিক প্রতি বছরই কিন্তু কিছু না ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়। বিশ্বের সব দেশেই বাড়ে। এবার একটু বেশি বাড়ানো হয়েছে। যেখানে পর্যটন শিল্প একটা সম্ভাবনাময় সেক্টর সেখানে হঠাৎ করে এভাবে ভ্যাটের পরিমাণ বাড়ালে পর্যটকরা অনুৎসাহিত হয়। এতে শিল্পেরই ক্ষতি হয়। আগে আামাদের এয়ারলাইনগুলো খুব বেশি যাত্রী পেত না। গত কয়েক বছর ধরে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। এখনই যদি ট্রাভেল ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া হয় তবে যাত্রীর পরিমাণ কমতে পারে।

ইউনাইটেড কনসালটেন্সি অ্যান্ড ট্যুরসের বিশেষত্ব
ইউনাইটেড কনসালটেন্সি এন্ড ট্যুরস-এর বিশেষত্ব সম্পর্কে বলার আগে আমার এই ব্যবসায় আসার কথাটি বলি। তাহলে অনেকটা কিয়ার হবে। আমি আগে থেকেই ভ্রমণ করতে পছন্দ করতাম। যখন ভ্রমণে বের হতাম। আমার তো কারও না কারও কাছ থেকে টিকেট কিনতে হতো, হোটেলে থাকতে হতো। এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে সেবা নিতে হতো। সেই থেকে চিন্তা করলাম, এই সেবাগুলো যদি সব সেবাগুলো এক সঙ্গে দেওয়া যায় তবে গ্রাহকের সুবিধা হয়। এভাবেই আমার ব্যবসা দাঁড় করানো। তাই আমাদের ব্যবসার আগে এটাকে সেবা বলতে পারেন। সেই সেবারই একটি অংশ হিসেবে আমরা প্রত্যেক গ্রহককে ট্যুরের আগে সঠিক ধারণা দিই। আমাদের এখানে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ লোক রয়েছে। যারা কম-বেশি সব জায়গা সম্পর্কেই ধারণা রাখে। তারাই এই সার্ভিস দিচ্ছে। এটা আমাদের একটি বিশেষ দিক হিসেবে বলা যায়।

নতুনদের জন্য পরামর্শ
সেক্টরটি অনেক বড়। এখানে আসতে হলে ব্যবসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে আসতে হবে। আর যেটি একেবারে সাধারণ বিষয়; পরিশ্রমী হওয়া। সেটা তো সব সেক্টরের জন্যই। এ সেক্টরে ভালো করতে হলে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। এছাড়া একটু জানাশোনা থাকলে সহজেই ভালো করা সম্ভব। আরেকটি বিষয় হচ্ছে কমিটমেন্ট ঠিক রাখা। পাশাপাশি মানুষকে সেবা দেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে।

শেখ কামরুজ্জামান রনি
সত্ত্বাধিকারী
ইউনাইটেড কনসালটেন্সি এন্ড ট্যুরস